‘হিন্দু হিসেবে বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করে আমি গর্বিত’

বিদ্যুৎ কুমার রায়:

– রুম নং ১১২০, পর্ব নং ১৮
হিন্দু হিসেবে বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করে আমি গর্বিত।

১. নিশ্চয়ই হিন্দুরা আমার উপর ক্ষেপে যাচ্ছেন। অবশ্য এতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। সত্য কথা বলতে আমার দ্বিধা নেই। আমি অবশ্য গণধোলাই থেকে বেচে গিয়েছিলাম গতকাল ঢাকা মহানগর কেন্দ্রীয় শারদীয় দুর্গাপূজার উৎসবে অর্থাৎ ঢাকেশ্বরী মন্দিরে। আমার কথাকাটি কেবল শুরু হয়েছিল। দু চারজন হিন্দু মানুষ আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়েছিল। তারা জড়ো হয়েছিল। আমার বিরুদ্ধে কিছু একটা করবে তার পরিকল্পনা তারা হয়ত করছিল। কিন্তু আমি বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে মার খাওয়ার আগেই ওখান থেকে চলে এসেছিলাম। আপনারা দেখছেন গতকাল আমি ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়েছিলাম। আমি ফেসবুকে লাইভ দিচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি এক জায়গায় কিছু হিন্দু মানুষ গণ স্বাক্ষর নিচ্ছেন। সেখানে একটি ব্যানারে লেখা ছিল এরকম যে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের বৈষম্য রোধকরণের জন্য গণস্বাক্ষর দিন। এই গণস্বাক্ষর তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করবেন। আমি ভীষণ কস্ট পেলাম এই ব্যানার দেখে। কারণ আমি আমার জীবনে ওয়ান থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত পড়ালেখা করে আজ পর্যন্ত দেখি নাই যে বাংলাদেশের কোথাও হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে বৈষম্য হয়েছে। যদি কোন হিন্দু মানুষ একথা বলে তাহলে এটা সম্পুর্ন মিথ্যা। যদি হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে বৈষম্য থাকত এবং বাংলাদেশে মুসলমানরা বেশি সুবিধা পেত তাহলে আমি মাস্টার্সে ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট আর বাবলু হিরা মন্ডলে অনার্সে ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট হতো না। আমাদের বাড়িতে আমরা তিনভাই সরকারি চাকুরীজীবী। যদি হিন্দুরা কম সুবিধা পেত তাহলে আমরা একবাড়ি থেকেই সবাই সরকারি চাকুরী পেতাম না।

২. আমি একজন হিন্দু। আমার লেখা রসায়ন বই নবম দশম শ্রেণির পাঠ্যবই। সারা দেশের সকল হিন্দু ও মুসলমান সবাই আমার লেখা বই পড়ে। যদি হিন্দুরা কম সুবিধা পেত তাহলে এই বই সরকার অন্য কোন মুসলমান মানুষকে দিয়ে লেখাইতো। আমি যখন ঢাকেশ্বরী মন্দিরে ব্যানারের ঐ লেখা নিয়ে কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনারা যে লিখেছেন যে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে বৈষম্য হচ্ছে। কি কি বৈষম্য হচ্ছে তা আমাকে বোঝান। আমি তাদেরকে বললাম ভাই আমি নিজেও হিন্দু। আমাকে একটু বলেন আসলে বৈষম্যটা কি? আমাকে সেই কর্তৃপক্ষ আমাকে পালটা প্রশ্ন করে আমাকে বললেন আপনার বাড়ি কোথায়? আমি বললাম আমার বাড়ি পাবনা জেলার ভাঙ্গুড়ায়। আমাকে তারা বললেন আপনার এলাকায় কোন বৈষম্য দেখেন নাই? আমি বললাম আমার বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে কখনো বৈষম্য দেখি নাই। স্কুল কলেজের সব জায়গায় হিন্দুরা এগিয়ে এবং মুসলমানরাই বরং কম সুবিধা পাচ্ছেন।

৩. আমি বললাম আপনারা যদি খুবই গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন তাহলে আপনারা দেখতে পাবেন বর্তমানে বড় বড় পোস্টে মুসলমানদের চেয়ে তুলনামূলকভাবে হিন্দুরা বেশিসংখ্যক বড় বড় পদে আছে এবং বেশি সুবিধা পাচ্ছেন। তাই আমার মনে হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আপনারা এটা দিলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভুল ম্যাসেজ পাবেন যা সঠিক না। ঢাকেশ্বরী মন্দিরে আমি একটা বক্তব্য দিতে চেয়েছিলাম। আমি বলতে চেয়েছিলাম, আমরা অত্যন্ত ভাগ্যবান যে আমার দেশের মুসলমান মানুষ আমাদের শ্রদ্ধা করে সম্মান করে। আমি বলতে চেয়েছিলাম আজ আপনারা যারা এই মন্দিরে এসেছেন তারা মুসলমানদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। আপনারা সারাদিন পড়ালেখা করুন। আমার মত বা আমার চেয়ে বেশি কোয়ালিটি তৈরি করে এই দেশকে আমেরিকার অর্থনীতির চেয়ে বেশি সমৃদ্ধ অর্থনীতি তৈরির জন্য অবদান রাখুন। তাহলে আপনারাই বিশ্বে নেতৃত্ব দিবেন। কিন্তু আমি দর্শকের সারি থেকে কথা বলতে চাওয়ার পরও আমাকে কথা বলতে দেয় নাই ঢাকেশ্বরী মন্দিরে। তাই পুজা দেখতে যেয়ে আমি কস্ট নিয়েই বাড়ি ফিরছিলাম।

৪. টাকার অভাবে এবার আমি পুজায় বাড়ি যেতে পারি নাই। আমার বন্ধু হান্নান, আমার অফিস স্টাফ সুমন অবশ্য বলেছিল বাড়ি যেতে কত টাকা লাগবে? আমরা দিয়ে দিব। আমি অবশ্য তাদেরকে বলেছিলাম আমার তো এই টাকা তোদেরকে ফেরত দিয়ে দিতে হবে। আমি ধার নিলে ২০/৩০ হাজার টাকা যখন তখন ধার নিতে পারি কিন্তু বেতন পাবার পর তো সেই ধার পরিশোধ করে দিতে হবে। কিন্তু আমি আমার ভাগ্নিকে পুজার পর ময়মনসিংহ পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাব।তাই আমি কোনভাবেই একটি টাকাও বাড়িতে যেয়ে পুজাতো খরচ করতে পারব না। এবারের পুজার বোনাস আমার লোন শোধ করতেই শেষ। তাই মন খারাপ ছিল কয়েকদিন থেকে। ঢাকেশ্বরি মন্দিরে যেয়ে খুব ভাল বোধ করছিলাম না। কিন্তু একটা খুব পিচ্ছি মেয়ে আমার মনটা ঢাকেশ্বরী মন্দিরে ভালো করে দিয়েছিল। পুজামন্ডবে একটা ঘন্টা বাজিয়ে ভিতরে ঢুকতে হয়। আমি দেখলাম একটা পিচ্চি মেয়ে ৪/৫ বার চেস্টা করেও ঘন্টা বাজাতে পারলো না। তার বাবা মেয়েকে দিয়ে ঘন্টা না বাজিয়েই ভিতরে ঢুকতে চেয়েছিল। মেয়েটির মন খারাপ ছিল। আমি ভিতরে প্রবেশ করতে বাধা দিলাম। আমি তার বাবাকে বললাম। মেয়েকে ভালো করে কোলে নেন। আমি ভালো করতে মেয়েকে ঘন্টা ধরতে বললাম। মেয়েটি ঘন্টা বাজাতে পেরে খুব খুশি। একটা পিচ্ছি মেয়ের খুশির জন্য আমি কিছুটা অবদান রাখতে পেরে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। আমাকে অনেক হিন্দু বলেছেন যে মুসলমানরা আমাদের অনেক প্রতিমা ভেঙ্গেছে। আমি বললাম এটা কি সরকার ভেঙ্গেছে? এটা যে মুসলমানরা ভেঙ্গেছেন তাকি আপনারা দেখেছেন? তারা কোন উত্তর দিতে পারে নাই। আমি তাদেরকে বলেছিলাম মানুষকে ভালোবাসুন। নিজে নিজে ভাব নেওয়া বাদ দেন। আপনার এলাকায় আপনি স্বর্গ তৈরি করতে পারবেন। যাই হোক সর্বোপরি বাংলাদেশে হিন্দু হিসেবে জন্মগ্রহণ করে আমি গর্বিত।

– বিদ্যুৎ কুমার রায়
সহযোগী অধ্যাপক, রসায়ন
এম.এসসি প্রথম শ্রেনিতে প্রথম, গোল্ড মেডেলপ্রাপ্ত, বিশ্ববিদ্যালয় পুরস্কারপ্রাপ্ত, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। নবম দশম শ্রেণির রসায়ন পাঠ্যবই এর লেখক।
কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (সিইডিপি)
শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা
রুম নং ১১২০
লিফট ১০, প্রবাসী কল্যাণ ভবন, ৭১, ৭২ ইস্কাটন গার্ডেন রোড, রমনা, ঢাকা।
মোবাইল ০০৮৮০১৭১৬৫৭৪৯৪৪
ইমেইল r.biddut@yahoo.com
গ্রামঃ উত্তর মেন্দা, পোঃ ভাঙ্গুড়া, থানা + পৌরসভা : ভাঙ্গুড়া, জেলাঃ পাবনা।
পোস্ট কোড : ৬৬৪০

(বিঃ দ্রঃ আমাকে কোন রকমে জ্ঞান দিতে আসলে আপনিই বিপদে পরবেন। নিজে ইচ্ছা করে নিজের বিপদ ডেকে আনবেন না। কারণ আপনার বুদ্ধিতে আমি স্বর্গে যেতে চাই না। আমি আমার নিজের বুদ্ধিতে ফকির হতে চাই)

Translation from তাঃ শাঃ শামীম সিদ্দিকী

From FB post of Biddut Kumar Ray
I am proud to be born in Bangladesh as a Hindu.
1. Must be Hindus are getting angry on me. Of course I don’t care. I don’t hesitate to speak the truth. Of course I survived the mass beating yesterday at the Dhaka Metropolitan Central Sharadiya Durga Puja festival i.e. Dhakeshwari Temple. My argument just started. Few Hindus people watching me closely. They were gathered against me and probably planning to do something against me. But I left there intelligently before I got beaten. You may have watched from my FB live post that yesterday I went to Dhakeshwari temple. Suddenly I saw some Hindu people taking mass signature at one place. There was written in a banner that put your signature to prevent discrimination between Hindu and Muslim community. They will present this mass signature to the honorable Prime Minister. I was very hurt seeing this banner. From my study study experience of class one to Masters in my life I have never seen that there is discrimination between Hindu and Muslim community anywhere in Bangladesh. If any Hindu person says this then it is a complete lie. If there was discrimination between Hindu and Muslim community and Muslims in Bangladesh would have got more benefits, I wouldn’t have been first class first in Masters and so wouldn’t Bablu Hira Mandal in his honors. We three persons are government employees in our house. If Hindus had less benefits, then we all would not have got government jobs from one house.
2. I am a Hindu. The chemistry book that is published from NCTB for secondary students written by me. All Hindus and Muslims all over the country read the books written by me. If Hindus had less benefits, the government would have written this book with some other Muslim people. When I asked the authorities about that writing on the banner in the Dhakeshwari temple, you wrote that there is discrimination between Hindus and Muslims. Explain to me what the discrimination is going on. I told them I am also a Hindu. Tell me what is the discrimination actually? The authorities asked me where is your house? I said my house is in Bhangura of Pabna district. They told me there is no discrimination in your area? I said I’ve never seen discrimination since becoming intelligent. Hindus are ahead everywhere in schools and colleges and Muslims are rather getting less benefits.
3. I said if you observe very closely you will see that nowadays Hindus are in better positions and getting more benefits than Muslims. So I think if you give this to the Honorable Prime Minister, then she will get wrong message which is not correct. I wanted to give a speech at Dhakeshwari temple. I wanted to say, we are very lucky that the Muslim people of my country respect you. I wanted to say that those of you who came to this temple should express gratitude to the Muslims. You should concentrate your own work so that you can contribute to making this country a richer economy than the American by creating quality like me or more than me. Then you will lead the world. But after much request I was refused to deliver a speech from the audience. As I was not allowed to talk at the Dhakeshwari temple so I was returning home with despair.
4.I couldn’t go home for Puja this time due to lack of money. My friend Hannan, my office staff Suman said how much money will it take to go home? We will give away. I of course told them I had to give you this money back. I can borrow 20/30 thousand takas whenever I want but after getting the salary I have to pay that loan. But I will take my niece to Mymensing for exam after Puja. So I couldn’t go home and spend a single penny on Puja in any way. The bonus of this Puja is over to repay my loan. That’s why I was sad since few days. I was not feeling very good going to Dhakeshwari temple. But a very small girl made my day at Dhakeshwari temple. You have to enter inside by ringing a bell in the Puja mandap I saw a little girl could not ring the bell even after trying 4/5 times. His father wanted to go inside with his daughter without ringing the bell. The girl was sad. I stopped them entering and told her dad to raise her daughter with his hand so that she could reach the bell well and ring it. The girl is so happy to ring the bell. I was very happy to contribute a little to the happiness of a little girl. Many Hindus have told me that Muslims have broken many of our idols. I said “is it the government who is behind the incident?” Did you see that Muslims have broken this? They couldn’t give any answer. I told them love people. Stop boasting on yourself. You can create heaven in your area. After all, I am proud to be born as a Hindu in Bangladesh.
(P.S.: I don’t want to go to heaven with your intelligence. I want to be a beggar in my own intelligence)

– ফেসবুক থেকে নেয়া……