রুপালি পর্দায় অনেক খলনায়কের রাতের ঘুম তিনি কেড়ে নিয়েছেন। এবার তাঁরই রাতের ঘুম প্রায় যেতে বসেছে। কিছুতেই যেন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারছেন না বলিউড সুপারস্টার সালমান খান। বলিউড ভাইজানের ‘জান’ বাঁচাতে এখন তাঁর বাসার বাইরে রীতিমতো ভিড় করছে পুলিশ। কারণ, আজ রোববার ভোরে জনপ্রিয় এই তারকার বাড়ির সামনে কে বা কারা ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে মুম্বাই পুলিশ। ঘটনায় উদ্বিগ্ন সালমানের পরিবার, ভক্তরা ও বলিউড পাড়া। অভিজাত এলাকায় প্রকাশ্যে এমন ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে মুম্বাইয়ের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে। সূত্র এএনআই, টাইমস অব ইন্ডিয়া।
সূত্র অনুযায়ী, আজ ভোর পাঁচটা নাগাদ মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় সালমান খানের ‘গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টে’র বাইরে পরপর বেশ কয়েকবার গুলির শব্দ শোনা যায়। মোটরসাইকেল করে এসে দুষ্কৃতকারীরা কয়েক রাউন্ড গুলি চালিয়েই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, এদিন গুলি চলার সময় সালমন বাড়িতেই ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করেছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী শিবসেনার নেতা একনাথ শিন্ডে। মুম্বাই পুলিশকে দ্রুত ব৵বস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘প্রিয় মুম্বাই পুলিশ, দ্রুত হামলাকারী ও এর মূল হোতাদের গ্রেপ্তার করুন। কী ঘটছে মুম্বাইতে? কোথায় নিরাপত্তা!’
ঘটনার কিছুক্ষণ পরই মুম্বাই পুলিশের অপরাধ দমন শাখা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। এর আগে একাধিকবার প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন সালমান খান। গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোই সালমনকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। এমনও শোনা গিয়েছিল, বিষ্ণোইয়ের শাগরেদরা সালমানের বাড়িও পর্যবেক্ষণ করে গিয়েছিল।
ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই সালমান পরিবার-পরিজন নিয়ে ‘গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টে’ থাকেন। ওপরের তলায় থাকেন বাবা সেলিম খান। আর গ্রাউন্ড ফ্লোরে থাকেন সালমান। ২০২৩-এ ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি বা এনআইএয়ের তরফে জানানো হয়েছিল, সালমান ১০টি গ্যাংয়ের নিশানায় রয়েছেন। তাদের মধ্যে ছিল কুখ্যাত গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের নামও। সালমানকে হত্যার পরিকল্পনা এর আগে একাধিকবার হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই কোনো না কোনো কারণে সেই সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।
১৯৯৮ সালে কৃষ্ণসায়র হরিণ শিকারের ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল সালমান খানের। এরপরই বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের নজরে চলে আসেন ভাইজান। ২০২২ সালে সকালে হাঁটতে বেরিয়ে হুমকি চিঠি পেয়েছিলেন সালমন খান। বাবা সেলিম খানকে মেরে ফেলার কথা লেখা ছিল সেই হুমকি চিঠিতে। সর্বশেষ গত বছরের ১৮ মার্চ আবার নতুন উৎপাত শুরু হয়। সেদিন সালমান খানের ব্যবস্থাপক প্রশান্ত গুঞ্জলকারের কাছে এক ই-মেইল আসে।
মেইলটি মোহিত গর্গ নামের এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট থেকে এসেছে। সালমানের সঙ্গে কথা বলার দাবি তোলা হয়েছে এই মেইলে। ই-মেইলে লেখা ছিল, ‘গোল্ডি বরাড় তোর বস মানে সালমানের সঙ্গে কথা বলতে চাই। ওকে হিসাব-নিকাশের নিষ্পত্তি করতে হলে কথা বলতে বলিস। সময় থাকতে থাকতে জানিয়ে দিলাম। মুখোমুখি কথা বলবে কি না, সেটাও জানিয়ে দিস। সময় পার হয়ে গেলে কিন্তু আর ভাবব না। পরেরবার শুধু ভয়ংকর রূপ দেখবে।’
সেদিন হুমকি ভরা ই-মেইল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সালমানের ব্যবস্থাপক প্রশান্ত মুম্বাইয়ের বান্দ্রা পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ করেছেন। এই মামলার গভীরতা আর ভাইজানের সুরক্ষার কারণে বান্দ্রা পুলিশ আইপিসির ধারা ৫০৬ (২), ১২০ (বি), এবং ৩৪ অনুযায়ী গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোই, গোল্ডি বরাড়, আর রোহিত বরাডের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এর আগে লরেন্স বিষ্ণোই জেলে বসে এক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সালমান খানকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন।
এক চ্যানেলকে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে লরেন্স ১৯৯৮ সালে কৃষ্ণকায় হরিণ হত্যা মামলার কারণে সালমানকে ক্ষমা চাওয়ার কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারের সময় লরেন্স বিষ্ণোই ভাইজানের উদ্দেশে বলেছেন, ‘সালমানকে ক্ষমা চাইতে হবে। তা না হলে এর পরিণতি তাঁকে ভুগতে হবে। কৃষ্ণকায় হরিণ হত্যা মামলায় আমি ছোটবেলা থেকেই সালমানের ওপর ক্ষুব্ধ। তিনি আমাদের সম্প্রদায়ের মানুষদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়েছিলেন।’ লরেন্স বিষ্ণোই বলেছেন যে সালমানকে হত্যা করাই তাঁর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।
এন এস