আদম মালেক : বীমা খাতের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল আস্থা সংকট। তবে এ সংকট অনেকটা দূর হয়েছে। এক্ষেত্রে সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমেটেড ব্যতিক্রম। কোম্পানিটি নিয়ে কারও মাঝে কোনো আস্থাহীনতা নেই। স্বচ্ছতা ও গ্রাহক সন্তুষ্টি নিয়ে কাজ করায় কোম্পানিটি মানুষের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ব্রিগডিয়ার জেনারেল(অব.) মো. শফিক শামীম।
২০১৭ সালের মার্চ থেকে সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. শফিক শামীম। সম্প্রতি কথা হয় তাঁর সঙ্গে। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসতে যাচ্ছে এই সাধারণ বীমা প্রতিষ্ঠানটি। দেশের বীমা খাতের সার্বিক অবস্থা, বীমা জগতে সেনা কল্যানের অবস্থানসহ নানা বিষয়ে অর্থনীতি বিষয়ক অনলাইন নিউজ পোর্টাল অর্থবাংলাডটকম এর সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রির্পোটার আদম মালেক।
মো. শফিক শামীম বলেন, আমাদের কাছে স্বচ্ছতা ও গ্রাহকের সন্তুষ্টি গুরুত্বপূর্ণ। গ্রাহকের দাবী পরিশোধ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ২০১৯ সালে নেপালে ইউএস বাংলাার বিমান দূর্ঘটনায় প্রায় ১৩০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয় সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী যে সকল যাত্রী আহত হয় তাদেরকেও সর্বনিম্ম ১২ লক্ষ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। নতুন কোম্পানী হিসেবে এই ধরনের ক্ষতিপূরণের উদাহরণ কম। এই কোম্পানীতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায়ও কোনো অন্তরায় নেই। মানবতার কল্যাণে কাজ করছে সেনা কল্যান ইন্স্যুরেন্স। প্রতিষ্ঠানের অর্জিত মুনাফ অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যবহৃত হয়। এখানে ব্যক্তিগত স্বার্থের কোনো বিষয় নেই। তাই স্বচ্ছতা হারানোর কোনো আশংকা নেই।
সাবেক এই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বলেন, প্রথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসছে সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। স্বচ্ছতার কারণেই তা সম্ভব হয়েছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গত ১১ আগস্ট কোম্পানিটির আইপিও’র আবেদনের অনুমোদন দিয়েছে।
কোম্পানিটি ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতির আইপিও’র মাধ্যমে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে ১ কোটি ৬০ লাখ শেয়ার ইস্যু করবে। এতে পুঁজিবাজার থেকে ১৬ কোটি টাকা আসবে।
কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলিত অর্থ সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ, মেয়াদি আমানত বা ফিক্সড ডিপোজিট, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ, নিজস্ব অফিস স্পেস কেনা ও আইপিওর ব্যয় বাবদ ব্যবহার করবে।
কথা হয় বীমা খাত নিয়ে। পণ্য বৈচিত্রের গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, বীমা খাতকে আকর্ষণীয় করতে হলে নতুন নতুন পণ্য আনতে হবে। বিশেষ করে সার্বজনীন স্বাস্থ্য বীমা, কৃষি বীমার মতো সেবা নিয়ে আসতে হবে। এসব বীমা পণ্য জনপিয় করতে পারলে সুফল পাওয়া যাবে । ২০১৯ সালের মাইক্রো ইন্স্যুরেন্স সামিটে এ বিষয়গুলো নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। বর্তমানে কিছু কোম্পানি পাইলট ভিত্তিতে সার্বজনীন স্বাস্থ্য বীমা ও কৃষি বীমা করছে। এক্ষেত্রে গ্রাহকের কাছ থেকে যে ধরনের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে সেটি আশাব্যঞ্জক। কৃষি বীমার মধ্যে আরেকটি দিক রয়েছে সেটি হচ্ছে গৃহপালিত পশুর জন্য বীমা। কেউ কেউ এ ধরনের বীমা নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এগুলো যদি জনপ্রিয়তা পায়, তাহলে দু-তিন বছরের মধ্যে দেশের বীমা খাতের চেহারা বদলে যাবে। সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী চায়, বাজারে নতুন নতুন বীমা পণ্য আসবে, গ্রাহক আরো আকৃষ্ট হবে দেশের বীমা ব্যবস্থার প্রতি।
বীমা খাতে কোভিডের প্রভাব নিয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে তিনি অর্থবাংলাডটকমকে বলেন, কোভিড নিয়ে আমরা যত শঙ্কিত ছিলাম, সাধারণ বীমা খাতের ওপর প্রভাব ততটা পড়েনি। লকডাউনের সময় ব্যবসা প্রায় বন্ধ থাকলেও যখন এটি প্রত্যাহার করা হয়, তখন ব্যবসা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। তবে যেসব কোম্পানির আমদানি-রফতানি ব্যবসার সঙ্গে বেশি সংশ্লিষ্ট ছিল, তাদের ক্ষেত্রে পভাব পড়েছে। গত বছর কোভিডের প্রভাব সেভাবে টের না পেলেও এবার কিন্তু আমরা এটি অনুভব করছি। এ বছরের মার্চ থেকে জুন সময়ে আমাদের ব্যবসা নিম্নমুখী ছিল। জুলাইতে ব্যবসা কিছুটা বাড়লেও সেটি গত বছরের চেয়ে কম। তবে আশা করছি ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াবে। কোভিডের কারণে পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও আমরা বেশকিছু নতুন পণ্য চালু করতে পারিনি। সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স পরিবার, আমরা পশুপালনের ওপর একটা ইনডেক্স তৈরি করতে পেরেছি। আশা করছি সামনের বছরের কোরবানির সময় আমরা এটি চালু করতে পারব।
জীবন বীমার তুলনায় সাধারণ বীমার ব্যবসা না বাড়ার কারণ সম্পর্কে এই বীমা বিশেষজ্ঞর বক্তব্য হলো, সাধারণ বীমা খাতের প্রবৃদ্ধি দেশের সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর নির্ভর করে। যত বেশি কারখানা হবে, তত বেশি অগ্নি বীমা হবে। এভিয়েশন খাতের আকার বাড়লে বীমাও বাড়বে। সাধারণী বীমা খাত যে বাড়ছে না তা নয়। তবে জীবন বীমা খাতের বিষয়টি ভিন্ন। ব্যক্তিনির্ভর হওয়ার কারণে জীবন বীমার পলিসি সংখ্যা বেশি হবে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ার কারণেও কিন্তু জীবন বীমার পরিমাণ বাড়ছে। তাছাড়া জীবন বীমার ক্ষেত্রে চাইলেই যেকোনো নতুন পণ্য সহজে চালু করা সম্ভব। কিন্তু সাধারণ বীমার ক্ষেত্রে চাইলেই নতুন পণ্য চালু করা যায় না। সেটি গ্রাহকদের মধ্যে সাড়া জাগাতে পারবে কিনা বা লাভজনক হবে কিনা এ ধরনের অনেক কিছু চিন্তভাবনা করে এখানে নতুন পণ্য চালু করতে হয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই জীবন বীমার তুলনায় সাধারণ বীমার ব্যবসা বাড়ার গতি কিছুটা ধীর হবে। তবে জীবন বীমার পরিমাণ বাড়লে পরোক্ষভাবে সেটি কিন্তু সাধারণ বীমার ব্যবসা বাড়াতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
আগামী দিনের লক্ষ্য নিয়ে সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্সের এই মূখ্য নির্বাহী কর্মকতা বলেন, ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে যাত্রা হলেও আমরা ব্যবসা শুরু করেছি ২০১৪ সালে। প্রথম বছরে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের লোকসান দিতে হয়েছে। কিন্তু ২০১৫ সাল থেকেই আমরা মুনাফা করছি। প্রতি বছরই আমাদের আয় ও মুনাফায় ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গ্রাহকের আস্থা অর্জনের ক্ষেত্রে আমরা কোনো ছাড় দিই না। বীমা দাবির অর্থ আমরা যথাসময়ে গ্রাহকদের পরিশোধ করে থাকি। এতে গ্রাহকরা আমাদের ওপর আস্থা রাখছেন। নিত্যনতুন পণ্যের মাধ্যমে সেবা আমরা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছি। স্মার্টফোনের অ্যাপের মাধ্যমে আমরা মানুষকে বীমা সেবা দিতে চাই। এজন্য আমাদের তথ্যপ্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোর কাজ চলছে। ডিজিটাল বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তিগত দিকে বিশেষ নজর রেখে, উন্নত গ্রাহক সেবায় কাজ করছে দেশের নতুন প্রজন্মের সাধারণ বীমা প্রতিষ্ঠান সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড।