জিম্মি দশা থেকে মুক্ত হওয়া সেই এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের ২৩ নাবিকের মধ্যে ২ জন দুবাই থেকে দেশে ফিরতে চান বিমানে। বাকি ২১ নাবিক দুবাই থেকে জাহাজে চড়ে দেশে ফিরবেন। মালিকপক্ষ জাহাজে করে একসঙ্গে সবাইকে দেশে ফেরার অনুরোধ জানালেও ২ জন বিমানেই দেশে ফিরবেন বলে জানা গেছে। তাদের একজন সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। আরেকজন স্টুয়ার্ড মোহাম্মদ নুর উদ্দিন।
জাহাজটি দুবাইয়ে নোঙর করবে ২২ এপ্রিল। সেখানে পণ্য খালাসের কার্যক্রম শেষ হওয়ার পরই নাবিকদের দেশে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু করবে জাহাজটির মালিকপক্ষ। নাবিকরা যে যেভাবে আসতে চায় তাকে সেভাবেই দেশে আনবে তারা।
কেএসআরএম’র সিইও মেহেরুল করিম বলেন, দুইজন নাবিক দুবাই থেকে বিমানযোগে দেশে ফিরতে চায়। এদের একজন জাহাজের সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার। আরেকজন স্টুয়ার্ড। বাকি ২১ জন দুবাই থেকে সেই জাহাজে করেই দেশে ফিরবে। ২ জন কখন কীভাবে দেশে ফিরবে সেটা আমরা জাহাজ নোঙর করার পর ঠিক করব। যে যেভাবে আসতে চায় তাকে সেভাবেই আনব আমরা।’
জলদস্যুদের কবল থেকে নাবিকসহ জাহাজটি মুক্ত হওয়ার আগেই নাবিকেরা কে কোথা থেকে সাইন অফ (জাহাজের কর্ম হতে অব্যাহতি) করবেন, তার তালিকা চুড়ান্ত করে রাখে জাহাজের মালিকপক্ষ। তাদের নির্দেশে এ ব্যাপারে ক্যাপ্টেনকে একটি তালিকাও দিয়েছিল নাবিকরা। সেই তালিকায় জাহাজের ২৩ নাবিকের মধ্যে ১৮ জন সংযুক্ত আরব আমিরাতের বন্দর থেকে সাইন অফ করবেন বলে জানিয়েছিলেন। বাকি পাঁচজন জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছালে সাইন অফ করবেন বলে জানান। তবে এখন জাহাজের বেশিরভাগ নাবিক সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলেছেন। বেশিরভাগ নাবিকই এখন সেই এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে করে ফিরতে চান দেশে।
গত ১৪ এপ্রিল শ্বাসরুদ্ধকর এক জিন্মি ঘটনার অবসান হয় সোমালিয়ার উপকূলে। সেদিন ছোট্ট একটি উড়োজাহাজ বার বার চক্কর দিচ্ছিল জিন্মি থাকা এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের চারপাশে। তখন ২৩ নাবিকের সবাই আসলেন জাহাজের ডেকে। হাত তুলে এক ভিডিও বার্তায় কথা বলেন তারা সবাই। ২৩ জন অক্ষত ও নিরাপদে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর মালিকপক্ষ মুক্তিপণের টাকা দিতে সম্মতি দেয়। এরপর ছোট্ট সেই উড়োজাহাজটি তিনটি চক্কর দেয় জাহাজের এক পাশে। প্রতিটি চক্করে সাদা পানি নিরোধক টেপে মোড়ানো ডলার ভর্তি ব্যাগ ফেলা হয় উপর থেকে। দুটি স্পিড বোটে থাকা ৭ জন জলদস্যু এই তিনটি ব্যাগ সাগর থেকে তুলে নেয়। তারা ব্যাগ বুঝে পাওয়ার পর উড়োজাহাজটি চলে যায়। এর প্রায় আট ঘণ্টা পর বাংলাদেশ সময় শনিবার রাত তিনটায় জাহাজসহ ২৩ নাবিককে মুক্তি দেয় জলদস্যুরা।
১৪ বছর আগে জলদস্যুদের কবলে পড়া এমভি জাহান মণি জাহাজের ক্ষেত্রে ডলারভর্তি দুটি ব্যাগ উড়োজাহাজ থেকে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু এমভি আবদুল্লাহর ক্ষেত্রে ব্যাগ ছিল তিনটি। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি কেএসআরএম গ্রুপের ডিএমডি শাহরিয়ার জাহান রাহাত। তিনি শুধু বলেন, ‘কোড অব কন্ট্রাক্টের কারণে আমরা এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। নাবিকসহ জাহাজটি মুক্ত হয়েছে এটাই আমাদের বড় স্বস্তির জায়গা। মুক্তিপণের বিষয়ে দয়া করে কিছু জিজ্ঞেস করবেন না।’
ডিএমডি শাহরিয়ার জাহান রাহাত গত রোববার অনুষ্ঠিত সংবাদ সন্মেলনে জানিয়েছিলেন ১৯-২০ এপ্রিল সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাবে জাহাজটি। এরপর নাবিকদের দেশে ফিরিয়ে আনাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু এখন সেটি আরও দু দিন পিছিয়ে নির্ধারণ হয়েছে ২২ এপ্রিল। মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, নাবিকেরা যে যেভাবে ফিরতে চান তাকে সেভাবে ফিরিয়ে আনবো আমরা।
প্রসঙ্গত, গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে ২৩ নাবিকসহ বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ জিম্মি করেছিল সোমালিয়ার জলদস্যুরা।
এন এস