শ্রীলংকা সরকার একটি খসড়া আইন অনুমোদন করেছে। সে আইনে দেশে গরু জবাই নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকার বলছে, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে শ্রীলংকার গবাদি দুগ্ধ-শিল্প উপকৃত হবে। মন্ত্রিসভায় প্রস্তাবটি পাশ হওয়ার পর খসড়া আইনটিকে অনুমোদনের জন্য এখন সংসদে তোলা হবে।
সমালোচকদের উদ্ধৃত করে বিবিসি জানায়, শ্রীলংকার সংখ্যালঘু মুসলমানদের লক্ষ্য করে আইনটি তৈরি করা হয়েছে। কারণ তারাই গোমাংসের প্রধান ভক্ষক। শ্রীলংকার কট্টরপন্থী সিংহলী বৌদ্ধ গোষ্ঠীগুলি গোমাংস নিষিদ্ধ করার সরকারি প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে বলেও জানিয়েছে বিবিসি।
শ্রীলংকা একটি বৌদ্ধ সংখ্যাগুরু দেশ। জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ লোক এই ধর্মের অনুসারী। কিন্তু দেশটির বেশিরভাগ মানুষই মাংসভোজী। তবে বৌদ্ধদের একাংশ গরুকে পবিত্র-জ্ঞান করেন এবং তারা গোমাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকেন। তবে সে দেশের জনসংখ্যার ১০ শতাংশ মুসলমান। এরা সহ খ্রিস্টান, কিছু বৌদ্ধ এবং হিন্দুরাও গরুর মাংস খান।
সরকারের সমালোচকরা বলছেন, শ্রীলংকার গোমাংসের ব্যবসা এবং হালাল সার্টিফিকেশনের নিয়ন্ত্রণ মুসলমানদের হাতে। ফলে এরাই এই প্রস্তাবিত আইনে ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গরু জবাই বন্ধ করার পক্ষে বিভিন্ন দল অবস্থান নিয়েছে। তাদের যুক্তি, কৃষিকাজ এবং দুগ্ধ শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় গরু দেশে নেই।
শ্রীলংকায় গরু জবাই নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব প্রথম উঠেছিল ২০০৯ সালে। সে সময় একজন সংসদ সদস্য ভিজেদাসা রাজাপাক্সে এসংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সংসদে তুলেছিলেন। তবে সে সময় প্রস্তাবটি সংসদে গৃহীত হয়নি। এরপর ২০১২ সালে ক্যান্ডি শহরের কর্তৃপক্ষ পৌর এলাকার মধ্যে গরু জবাই নিষিদ্ধ করে। পরের বছর এনিয়ে বিতর্কটি তীব্র আকার ধারণ করে যখন গরু জবাই নিষিদ্ধ করার দাবিতে একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন।
এরপর কট্টরপন্থী দুটি সিংহলী বৌদ্ধ সংগঠন, সিনহালা রাভায়া এবং বদু বালা সেনা, একে তাদের আন্দোলনের একটি প্রধান বিষয়বস্তুতে পরিণত করে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাক্সে ২০১৬ সালের প্রস্তাবটিকে নতুন করে সংসদে তুলে আনেন এবং আইন প্রক্রিয়ার কাজ শুরু করেন। বিবিসি বাংলা