কুমিল্লার চান্দিনায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের মেয়েকে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন বাবা সোলেমান ব্যাপারী (৪৫)। বুধবার (২০ অক্টোবর) রাতে কুমিল্লার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাকসুদুর রহমানের আদালতে ১৬৪ ধারায় নিজের মেয়েকে হত্যার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার বাদী চান্দিনা থানার উপপরিদর্শক সুজন দত্ত। তিনি জানান, বুধবার সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত প্রায় ৪ ঘণ্টা খুনি সোলেমান ব্যাপারী বক্তব্য শুনেছেন আদালত। এ সময় নিজের মেয়েকে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন তিনি।
চান্দিনার গল্লাই ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামের সোলেমান ব্যাপারী তার জবানবন্দিতে জানায়, সাত শতাংশ জমি নিয়ে তার আপন ভাতিজা শাহজালাল ও শাহকামাল সঙ্গে বিরোধ চলছিল। ওই সম্পত্তি বিরোধে গত ২৫ সেপ্টেম্বর দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। ঘটনার পর তার স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি শেষে থানায় মামলা করেন সোলেমান। সেই মামলায় পুলিশ ৩২৬ ধারা যুক্ত না করায় মাথা গরম হয়ে যায় সোলেমানের। প্রথমে নিজের মাথা ফাঁটিয়ে ৩২৬ ধারা যুক্ত করে মামলা করবেন। কিন্তু কুচক্রিদের সঙ্গে আলোচনা করে তা থেকে সরে নিজের মেয়েকেই খুন করার পরিকল্পনা করেন তিনি।
দুই ছেলে দুই মেয়ে নিয়ে ছোট্ট সংসার সোলেমান ব্যাপারী। দুই ছেলে ইউসুফ ও ইউনুছ ঢাকার একটি মাদরাসায় লেখাপড়া করার সুবাদে দুই মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে বসবাস তার। ২৫ অক্টোবর মারামারির ঘটনায় স্ত্রী হাসপাতালে থাকায় বড় মেয়ে এলমাও মায়ের সঙ্গে হাসপাতালে ছিল। বাবাকে রান্না করে খাওয়ানোর জন্য বাড়িতে ছিল ছোট মেয়ে সালমা (১৪)। ১ অক্টোবর হাসপাতাল থেকে স্ত্রী ও বড় মেয়েকে তার শ্বশুরবাড়ি (সোলেমান এর শ্বশুর বাড়ি) পৌঁছে দিয়ে সন্ধ্যায় ফিরেন বাড়িতে। সন্ধ্যার পর মেয়ে সালমা আক্তার নিজের হাতের রান্না পিতার খাবার প্লেইটে তুলে দেন। দুজনে খাবার শেষে মেয়েকে ঘুমাতে বলে ঘর থেকে বের হয়ে যান সোলেমান। সেই রাতেই তার উকিল শ্বশুর আব্দুর রহমান এর ঘরে হত্যার পরিকল্পনা করে গভীর রাতে বাড়িতে এসে মেয়েকে শ্বাসরূদ্ধ করে হত্যার পর মরদেহ ঘর থেকে বের করে ভাতিজাদের ঘরের পিছনে নিয়ে মেয়ের নিথর মরদেহে এলোপাথারী কুপিয়ে রক্তাক্ত করে মরদেহ পাশের একটি পুকুরে ফেলে দেয়।
ঘটনার নাটক সাজাতে নিজের ঘরের টিনের বেড়া খুলে ও দরজা খুলে রেখে রাতেই ফের আব্দুর রহমান এর বাড়িতে চলে যান সোলেমান। পরদিন ভাতিজাসহ ১০জনের নাম উল্লেখ করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন সোলেমান ব্যাপারী। ওই মামলার পর থেকে এলাকা ছাড়া মামলার আসামিরা।
পুলিশ ৬ অক্টোবর সোলেমান ব্যাপারীর উকিল শ্বশুর আব্দুর রহমান ও বন্ধু খলিলকে আটক করলে কিশোরী সালমা হত্যার মূল রহস্য বেরিয়ে আসে। পরদিন বাবা কর্তৃক সন্তান হত্যার চাঞ্চল্যকর ওই রহস্য পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা পুলিশ।
ওই ঘটনায় চান্দিনা থানার উপপরিদর্শক সুজন দত্ত বাদী হয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সোলেমান ব্যাপারী, তার দুই ভাই আব্দুল বাতেন (৫২), লোকমান হোসেনসহ (৩৫) সাত জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ছয়জনকে আটক করা হয়েছে।