চলতি বছরের জুলাই মাসে ৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সিলেট নগরীর সোবহানীঘাটে বেদখল হওয়া ২৫ শতক জায়গা উদ্ধার করে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। এ সময় অভিযান চালিয়ে ভূমিতে দখলদারের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সীমানা চিহ্নিত করা হয়।
এর ৪ মাস পর বিষয়টি নিয়ে গত সোমবার (১৮ অক্টোবর) স্থানীয় রাত সাড়ে ৯টায় যুক্তরাজ্যের হোয়াইট চ্যাপলের একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করেন ওই জায়গার মালিক দাবিদার প্রবাসী আনিসুল হক। সম্মেলনে ওই ২৫ শতক জায়গা তার পিতার ক্রয় সূত্রে পেয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। এ সময় সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী তা অন্যায়ভাবে দখল করেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
যুক্তরাজ্যের সেই সংবাদ সম্মেলনের পাল্টা জবাব দিতে গতকাল মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় নগরভবনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সরকারের বিচারবিভাগের আওতায় আদালত এবং জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের নিষ্পত্তিকৃত ও চলমান মামলা বিষয়ে দেশের বাইরে (লন্ডনে) বসে আনিসুল হক যে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সেটি দেশদ্রোহীতার শামিল। সিলেট সিটি করপোরেশন বাংলাদেশ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান। আনিসুল হক ভিনদেশে বসে সংবাদ সম্মেলনের অর্থ হচ্ছে-তিনি গণমাধ্যম এবং অনলাইন গণমাধ্যম ব্যবহার করে দেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
মেয়র আরিফ বলেন, লন্ডনের সংবাদ সম্মেলনকারী দাবি করেছেন-তার ঘরবাড়িসহ সব স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয় এবং আদালতের রায়ের বা ডিক্রির কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি সিলেট সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু ওইদিন সিসিকের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিট্রেটের কাছে কেউ কাগজপত্র প্রদর্শনের জন্য আসেননি। সংবাদ সম্মেলনকারী সিলেট সিটি কর্পোরেশনকে দখলদার ও সিসিকে মেয়র হিসেবে আমাকে জমি দখলকারী উল্লেখ করে শুধু আমার বা সিসিকের নয়, সিলেট মহানগরীর সর্বস্তরের জনসাধারণের মানহানি করেছেন।
মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী আরও বলেন, সর্বাবস্থায় আদালতে সিদ্ধান্তক্রমেই বর্ণিত ভূমির উন্নয়নকাজ অব্যাহত রাখা হয়েছে এবং এ পর্যন্ত কাউকে নির্যাতন বা হয়রানি করার কোনো প্রমাণ আমি পাইনি। সংবাদ সম্মেলনকারী বারবার তার বক্তব্যে ‘সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী’ অর্থাৎ-আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জমি দখলকারী, জমি দখলে নেতৃত্বদানকারী, ফিল্মি স্টাইলে অভিযানকারী, নাগরিকদের অধিকার হরণকারী ইত্যাদি বলে আখ্যায়িত করে আমার মানহানি তথা সিলেট মহানগরবাসীর মানহানি করেছেন।
মেয়র আরিফ বলেন, জনগণের রায়ে নির্বাচিত হয়ে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র-কাউন্সিলর হিসেবে নাগরিকদের সেবা প্রদানই আমাদের দায়িত্ব এবং আমরা আমাদের সাধ্যমত সে চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছি। আপনাদের নিশ্চিত করতে চাই, শুধু প্রবাসী নয়, সিলেট মহানগরীর কোনো নাগরিকের কোনো রকম ক্ষয়ক্ষতি হোক-এমন কোনো কাজ করব না। লন্ডনে বসে উদ্দেশ্যমূলক এমন সংবাদ সম্মেলন করায় আমি মেয়র ও আমার পরিষদের সকল কাউন্সিলরসহ সিসিকের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কার্মচারীগণ তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। কারণ-মামলা চলাকালীন সময়ে সাব-জুডিস বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করা আইনের পরিপন্থী।
উল্লেখ্য, আদালতের রায়ে ৬৫ বছর পর চলতি বছরের ১৫ জুলাই নগরীর সোবহানীঘাটে ২৫.৫০ শতক জায়গার দখল বুঝে নেয় সিলেট সিটি কর্পোরেশন। এদিন ভূমিতে দখলদারের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সীমানা চিহ্নিত করে সিসিক কর্তৃপক্ষ।
৫ জুলাই সকালে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসমিন নাহার রুমা আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে ভূমি পুনুরুদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেন।