সোহেল হোসেন, লক্ষ্মীপুর :
লক্ষ্মীপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জমি দখলে নিতে না পেরে ব্যবসায়ী মো. শামছুদ্দিন এলাবাসীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন বলে অভিয়োগ উঠেছে। সদর উপজেলার চরশাহী ইউনিয়নের পূর্ব সৈয়দপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে গেলে, এ অভিযোগ করে ভূক্তভোগী বোরহান উদ্দিন, মোরশেদ আলম, শারিরীক প্রতিবন্ধী বাগদাদ হোসেন, মিলন হোসেন, আবদুল কাদের, আজিজ হোসেন, নিজাম উদ্দিন, জাকির হোসেন, মো. সুফিয়ান ও জাহেদ হোসেনসহ অর্ধ-শতাধিক গ্রামবাসী।
ভূক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পূর্ব সৈয়দপুর গ্রামে বেড়িবাঁধের পাশে পাউবোর জমি রয়েছে। ওই জমির পশ্চিম পাশে সৈয়দপুর নূরাণী হাফিজিয়া ফোরকানিয়া মাদ্রাসা। প্রায় ৩৫ বছর আগে এ মাদ্রাসাটি স্থাপন করা হয়। পাউবোর জমির ওপর দিয়ে পাশ্ববর্তী অর্ধশতাধিক বাড়ির মানুষ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা চলাচল করে। ওই জমিতে স্থানীয় শিশু-কিশোররা খেলাধুলাও করে। সম্প্রতি জমিটি দখলে নিতে স্থানীয় দাশের হাট বাজার পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি মো. শামছুদ্দীন তার পারিবারিক কবরস্থান নির্মাণের চেষ্টা করেন।
এতে গত ১২ সেপ্টেম্বর স্থানীয়রা ঘটনাটি পাউবো কর্তৃপক্ষকে জানায়। পরে পাউবো কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থল গিয়ে একাধিকবার কবরস্থান নির্মাণে নিষেধ করে। এরপরও রাতের আঁধারে কবরস্থানের জন্য সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ করা হয়। খবর পেয়ে পাউবোর লক্ষ্মীপুর সদর শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাজহারুল ইসলাম ৩০ সেপ্টেম্বর সামছুদ্দীনের বিরুদ্ধে চন্দ্রগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। এ প্রেক্ষিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন।
এদিকে এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে মারধরের ঘটনায় সাজিয়ে সামছুদ্দিন বাদী হয়ে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট চন্দ্রগঞ্জ আদালতে ১০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় মসজিদের ইমাম, মাদ্রাসার শিক্ষক, ছাত্র, রিকশা চালকসহ শারীরিক প্রতিবন্ধী বাগদাদকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
আবদুর রশিদ, শাহিন আহমেদসহ ৫ জন শিশু জানায়, প্রতিদিন বিকেলে আমরা ওই খালি জমিতে খেলাধুলা করতাম। এখন জমিটি দখল করে কবরস্থান করা হচ্ছে। এতে গত একমাস আমরা তা পারছি না। জমিটি খালি করে দিলে আমরা সেখানে খেলতে পারবো।
ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করে জানান, মারধরের মামলার আগেরদিন শনিবার ছিল। ওইদিন সকালে তিনি স্থানীয় একজনের মরদেহ দাফনের উদ্দেশে কবর খোঁড়েন। প্রায়ই তিনি এ কাজ করে থাকেন। ওইসময় তিনি ধারালো কোদাল অথবা শাবলের সঙ্গে আঘাত পায়। এটিই তিনি মারধর সাজিয়ে এলাকাবাসীকে হয়রানি করার উদ্দেশে মামলা দায়ের করেন।
এই ব্যাপারে মো. সামছুদ্দীন বলেন, আমি জমির ওয়ারিশ সূত্রে মালিক। পানি উন্নয়ন বোর্ড আমার জমি নিজেদের বললেতো হবে না। আমার উপর হামলার ঘটনায় মামলার অভিযুক্তরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে উসকিয়ে দিয়েছে। পরে আমার ওপরও তারা হামলা করেছে। কোন লাভ হবে না, আমার জমি আমারই থাকবে।
পাউবোর লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাজহারুল ইসলাম বলেন, সামছুদ্দিন নামে এক ব্যক্তি কবরস্থান দিতে পাউবোর জমি দখল করতে চেয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল গিয়ে তাকে একাধিকবার নিষেধ করেছি। কিন্তু তিনি কবরস্থানের জন্য সীমানা প্রাচীর নির্মাণ শুরু করেন। জমি দখল উচ্ছেদসহ কাজ বন্ধ রাখার জন্য চন্দ্রগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়।