ইউক্রেনে আগ্রাসী নীতির প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এবার দেশটি থেকে জ্বালানি তেল কেনা কমিয়ে দিতে একমত হয়েছে জি-৭ ভুক্ত দেশগুলো। সম্প্রতি এক বৈঠকে জোটের সদস্যরা এ সিদ্ধান্ত নেন। খবর অয়েল প্রাইস ডটকম।
এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, কানাডা, জার্মানি, ইতালি, জাপান ও ব্রিটেন রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল ক্রয় বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যদিও কবে থেকে ও কীভাবে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে, সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কিছু জানায়নি এসব দেশ।
ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মতো জি-৭ ভুক্ত কয়েকটি দেশ এরই মধ্যে রাশিয়ার জ্বালানি তেল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে এসব দেশ রুশ জ্বালানি তেলের অত্যন্ত ক্ষুদ্র আমদানিকারক। ফলে হাইড্রোকার্বন ইন্ডাস্ট্রি থেকে রাশিয়া যে অর্থ আয় করে তার ওপর এ নিষেধাজ্ঞা বড় কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। এ ইন্ডাস্ট্রিকে নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দেয়ার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো।
জাপানের অর্থ, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রীর দেয়া এক বিবৃতিতে দেখা গিয়েছে, জাপানের অবস্থা একেবারেই ভিন্ন। তিনি বলেন, রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি বন্ধ করে দেয়া জাপানের জন্য অনেক বেশি কঠিন।
জি-৭-এর সাম্প্রতিক বৈঠকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেন, কাগজে-কলমে রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি বন্ধ করে দেয়া হতে পারে।
যে দেশটি জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণে আমদানির ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল, সেটির জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেয়া অনেক কঠিন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে জি-৭-এর সিদ্ধান্তের সঙ্গে সমন্বয় করে চলা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে ইউরোপের শীর্ষ আমদানিকারকরাও ধীরে ধীরে রাশিয়া থেকে জ্বালানি পণ্য আমদানি বন্ধ করে দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) চাহিদা পূরণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইউরোপের দেশগুলোর নির্ভরতা বাড়ছে। রাশিয়ার বিকল্প উৎস হিসেবে দেশটি থেকে প্রতি মাসেই বিপুল পরিমাণ এলএনজি কিনেছে ইউরোপ। গত মাসে দেশটি থেকে সর্বাধিক এলএনজি কিনে শীর্ষ আমদানিকারকের তকমা ধরে রেখেছে অঞ্চলটি। সম্প্রতি জার্মানি জানিয়েছে, দেশটি উল্লেখযোগ্য হারে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি কমাতে সক্ষম হয়েছে।
বিশ্লেষকরা জানান, ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাস চাহিদার ৪০ শতাংশই পূরণ হয় রাশিয়া থেকে আমদানীকৃত গ্যাসের মাধ্যমে। কিন্তু ইউক্রেনে হামলার প্রতিক্রিয়ায় দেশটি থেকে গ্যাস আমদানি কমিয়ে আনছে ইউরোপ। বিকল্প উৎস হিসেবে অঞ্চলটি যুক্তরাষ্ট্রকে সবচেয়ে বেশি প্রাধ্যান্য দিচ্ছে।
মধ্য ইউরোপের তিনটি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশ জ্বালানি আমদানির ক্ষেত্রে রাশিয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে। এসব দেশ দীর্ঘমেয়াদে দেশটির ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমাবে বলে জানিয়েছে। তবে এমন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছে বুলগেরিয়া।
এদিকে ইউরোপীয় দেশগুলোর রুশ জ্বালানি তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কায় সম্প্রতি পণ্যটির দাম আরো বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম ব্যারেলপ্রতি ১১২ ডলার এবং মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের দাম ব্যারেলপ্রতি ১১০ ডলারে উন্নীত হয়েছে।