‘রাজা-বাদশার ছেলে-মেয়েরা এসব করে, তুই পারবি না’

 

কৃষক পরিবারের সন্তান চিত্রপরিচালক কাজী হায়াৎ গোপালগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৭ সালে। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন সিনেমার মানুষ হবেন। স্বনামধন্য পরিচালক মমতাজ আলীর সহকারী হিসেবে সিনেমায় কাজ শুরু করেন কাজী হায়াৎ। ধীরে ধীরে ঢাকায় সিনেমার সেরা পরিচালকদের একজন হয়ে উঠেন তিনি।

কাজী হায়াৎ‘র পরিচালনায় উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘দি ফাদার’, ‘খোকন সোনা’, ‘মনা পাগলা’, ‘যন্ত্রণা’, ‘দাঙ্গা’, ‘ত্রাস’ ও ‘আম্মাজান’। মোট আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার পেয়েছেন এই পরিচালক। এখন পরিচালক জীবনের ৫০তম সিনেমা ‘বীর’র শুটিং করছেন। সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনরে সঙ্গে সিনেমা ও ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা বলছেন তিনি।

শিল্পের এতো মাধ্যম থাকতে সিনেমা পরিচালনায় কেনো আসলেন?

জীবনের স্বপ্নই ছিলো সিনেমার জগতের কিছু হওয়া। ক্লাস ফোরে পড়ার সময় ‘সাগরিকা’ নামে সিনেমা দেখি। খুলনার পিকচার প্যালেস হলে সিনেমাটা দেখেই মামাকে বলেছিলাম, ‘মামা সিনেমার লোক হবো’। মামা তখন বলেছিলেন, ‘সিনেমার লোক হওয়া সহজ না। অনেক টাকা লাগে। রাজা-বাদশার ছেলে-মেয়েরা এসব হয়। তুই এসব হতে পারবি না।’ তখন আমার প্রচণ্ড জেদ ছিলো। তখন থেকেই লক্ষ্য স্থির করে ফেলি আমি সিনেমার লোক হবো। কলেজে পড়ার সময় বন্ধুরা যখন বলতো তারা কী হতে চায়, সবাই বিভিন্ন পেশার কথা বলতো। কিন্তু, আমি বলতাম, ‘সিনেমায় বানাবো’।

প্রথম সিনেমা বানানোর গল্প জানতে চাই।

সেসময় ‘চিত্রালী’ আর ‘র্পূবাণী’ নামে সিনেমাবিষয়ক দুটি জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ছিলো। শুক্রবারে মুক্তি পাওয়া ছবির পরিচালকের সাক্ষাৎকার থাকতো। আমি স্বপ্ন দেখতাম, প্রথম সিনেমা মুক্তি পেলে সাক্ষাৎকার ছাপা হবে। সেসময় ওই পত্রিকার সাংবাদিকদের সামনে দিয়ে হেঁটে যেতাম, যাতে তারা আমাকে ডাকে। কিন্তু, প্রথম ছবি ‘দি ফাদার’ মুক্তির পর পর তারা আমাকে ডাকেনি। এই ছবিটা অনেক আলোচিত হয়েছিলো সেসময়।

এখন পর্যন্ত কতোগুলো সিনেমা তৈরি করেছেন?

এখন পর্যন্ত মোট ৪৯টি সিনেমা বানিয়েছি। আমার পরিচালনায় ৫০তম সিনেমা ‘বীর’র শুটিং চলছে বর্তমানে। আমাকে অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে এই অবস্থানে আসতে হয়েছে। মানুষের কাছ থেকে যেমন স্বীকৃতি পেয়েছি, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক পর্যায়েও স্বীকৃতি পেয়েছি। আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার পেয়েছি, পাঁচটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আমার পরিচালনার ছবি নিয়ে গিয়েছি।

সিনেমার সঙ্গে দীর্ঘ যাপনে মনে পড়ার মতো কোনো স্মৃতি রয়েছে কি?

আমি তখন মমতাজ আলীর সহকারী হিসেবে কাজ করছি। তখন এ জগতে একেবারেই নতুন। কবিতার সঙ্গে প্রথম কাজ করছি। একটি গানের শুটিংয়ের দৃশ্য, চিড়িয়াখানায় শুটিং হচ্ছিলো। সব শিল্পীরা জুতা এক জায়গায় জড়ো করে রেখেছেন। শুটিং শেষে কবিতা আমাকে তার জুতা আনার আদেশ দিলেন, ব্যাপারটা আমি সহজভাবে নিতে পারিনি। বেশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিলাম। তার জুতা আনলাম না। কবিতা খুব চিৎকার, চেঁচামেচি করলেন। এমনকী, মমতাজ ভাইয়ের কাছে নালিশও দিলেন। মমতাজ ভাইকে সব বুঝিয়ে বললাম। তিনি আমাকে খুব পছন্দ করতেন। কবিতাকে ডেকে বললেন, ‘কাজী আমার সহকারী। একজন শিক্ষিত ও ভদ্র ছেলে পরীক্ষা দিয়ে আমার সঙ্গে কাজ করছে। আপনি ওকে যেটা বলেছেন ওটা ওর কাজ না।’ কবিতা এরপর থেকে আমাকে খুব সম্মান করতেন। আমি মমতাজ ভাইয়ের কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবো, যতোদিন বেঁচে থাকি তাকে ভুলবো না।

আপনার অনুপ্রেরণার মানুষদের কথা জানতে চাই।

আমার অনুপ্রেরণা হলো- সিনেমা। সিনেমা দেখতাম আর অনুপ্রাণিত হতাম। তখন গ্রামে গ্রামে যাত্রা হতো, নাটক হতো, গান হতো। সেসব অনুষ্ঠানে নিয়মিত যেতাম। আবার টিভিরও নিয়মিত দর্শক ছিলাম। এসব দেখতাম আর উদ্বুদ্ধ হতাম। সিনেমা জগতে আসার পরে আমার অনুপ্রেরণার মানুষ ছিলেন মমতাজ আলী, আলমগীর কবির।

অভিনয় পছন্দ করতেন কিন্তু সিনেমার নায়ক হলেন না কেনো?

আমি বাস্তববাদী মানুষ। সিনেমার কাছাকাছি যখন এসেছি, তখন দেখেছি আমার এই চেহারা চলবে না। নায়কের জন্য একটু গ্ল্যামার থাকতে হয়। তাই নায়ক না হয়ে পরিচালক হয়েছি। অন্যকে নায়ক বানিয়েছি।

বর্তমানে ব্যস্ততা কী নিয়ে?

বর্তমানে শাকিব খান আর বুবলিকে নিয়ে ‘বীর’ ছবির শুটিং করছি। আগামী বছরে ছবিটি মুক্তি দেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। এছাড়া ‘থটস অব কাজী হায়াত’ নামে আমার একটা ইউটিউব চ্যানেলের কাজ চলছে।

 

জাহিদ আকবর