রপ্তানিতে নগদ সহায়তার দ্বিতীয় কিস্তির ১২০০ কোটি টাকা রপ্তানিকারকদের অনুকূলে ছাড় দিয়েছে অর্থ বিভাগ। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে অর্থ বিভাগের অধীনে ভর্তুকি ব্যবস্থাপনার আওতায় এ অর্থছাড় দেওয়া হয়েছে। গত ১৯ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত চিঠি ইস্যু করে বলে খবর অর্থ বিভাগ সূত্রের।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভর্তুকি সহায়তার ফলে রপ্তানি খাতের উন্নয়নে তা বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাকে পাঠানো চিঠিতে অর্থ বিভাগ বলছে, রপ্তানিমুখী দেশি বস্ত্র, হিমায়িত চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ, চামড়াজাত দ্রব্য, পাট ও পাটজাত দ্রব্যসহ অনুমোদিত অন্যান্য খাতের রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তার জন্য এ অর্থছাড় দেওয়া হয়েছে, যার ভিত্তিতে হিসাব মহানিয়ন্ত্রক (সিএজি) ডেবিট অথরিটি জারি করবে। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক সময় সময় বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ভর্তুকি দাবির বিপরীতে সরকারি হিসাব ডেবিট করে রপ্তানি প্রণোদনার অর্থ পরিশোধ করতে পারবে। তবে দাবি পরিশোধের পর নিরীক্ষায় প্রাপ্য অর্থের চেয়ে বেশি পরিশোধ হওয়ার কোনো প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট গ্রহীতাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, রপ্তানিমুখী দেশি বস্ত্র, হিমায়িত চিংড়ি, অন্যান্য মাছ, চামড়াজাত পণ্যসহ অনুমোদিত অন্যান্য খাতে রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তা এবং পোশাক রপ্তানির বিপরীতে ১ শতাংশ হারে বিশেষ নগদ সহায়তার জন্য দ্বিতীয় কিস্তির ১ হাজার কোটি টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পাটপণ্যের রপ্তানি নগদ সহায়তা বাবদ দেওয়া হয়েছে দ্বিতীয় কিস্তির ২০০ কোটি টাকা।
এদিকে পাটজাত পণ্য রপ্তানিকারকদের ভর্তুকির অর্থ উত্তোলনে নিজ নিজ ব্যাংকে যোগাযোগের জন্য মিলগুলোকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএমএ)। অ্যাসোসিয়েশনের সচিব আবদুল বারিক খান গত ২৪ অক্টোবর তাদের সদস্য মিলগুলোকে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়েছে, পাটপণ্যের রপ্তানির ভর্তুকি বাবদ ২০২১-২২ অর্থবছরে দ্বিতীয় কিস্তির (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ২০০ কোটি টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে। সদস্য মিলগুলোকে পাটপণ্যের রপ্তানি ভর্তুকি আদায়ে নিজ নিজ ব্যাংকে যোগাযোগ করতে হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রণোদনার টাকা ছাড়ে আটটি শর্ত দেওয়া হয়েছে। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- দ্বিতীয় কিস্তিতে ছাড় করা অর্থ দিয়ে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের অনুকূলে খাতভিত্তিক নগদ সহায়তা ও ভর্তুকি পরিশোধ করতে হবে। নগদ সহায়তার দাবি পরিশোধের পর নিরীক্ষায় প্রাপ্য অর্থের চেয়ে বেশি নেওয়া হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট অর্থ আদায় করা গ্রহীতার বিরুদ্ধে। ব্যবস্থা গ্রহণের পর তা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে জানাতে হবে।
নগদ সহায়তার অর্থ ব্যয়ে যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে প্রচলিত সব আর্থিক বিধিবিধান ও অনুশাসন এবং বিভিন্ন খাতে প্রদানের নীতিমালা। অর্থগ্রহীতাকে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে অঙ্গীকার দিতে হবে যে, প্রাপ্যতার অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ বা অন্য কোনো অনিয়ম পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে যে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে এবং প্রদত্ত অর্থ ফেরত প্রদানে বাধ্য থাকবেন।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে রপ্তানি খাতে নগদ সহায়তা ও ভর্তুকি পরিশোধে বিদ্যমান পদ্ধতি এবং এর প্রভাব সম্পর্কে একটি বিস্তারিত মূল্যায়ন প্রতিবেদন অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে, যা নগদ সহায়তা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করবে। কেবল প্রয়োজন অনুযায়ী অর্থ সংযুক্ত তহবিল থেকে উত্তোলন করা যাবে। নগদ সহায়তা ও ভর্তুকি পরিশোধের নিমিত্ত ছাড় করা অর্থের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এবং এই অর্থের মধ্যে যেন কোনো ব্যত্যয় না ঘটে, সেদিকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।