মাদকবিরোধী অভিযানের নামে গত ১৮ মাসে ৪৬৬ জনকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এমন অভিযোগ এনেছে।
সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি জানায়, মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বাংলাদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গড়ে প্রতিদিন খুন হয়েছেন একজন।
কিল্ড ইন “ক্রসফায়ার’: এলেগেশন্স অব এক্সট্রাজুডিশিয়াল ইক্সিকিউশন্স ইন বাংলাদেশে ইন দ্য গুইজ অব এ ওয়ার অন ড্রাগস” শিরোনামে ২৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে জোরপূর্বক গুম করা, ভুয়া প্রমাণ তৈরির অভিযোগও আনা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ২০১৮ সালের ৩ মে মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যার সংখ্যা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এই ঘোষণার প্রথম ১০ দিনেই নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে খুন হন অন্তত ৫২ জন।
২০১৮ সালে দেশজুড়ে সন্দেহভাজন বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন অন্তত ৪৬৬ জন। আগের বছরের তুলনায় এ সংখ্যা তিনগুণেরও বেশি।
অ্যামনেস্টি জানায়, সন্দেহভাজন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডগুলো নিয়ে যথাযথ তদন্ত চালুর পরিবর্তে সেগুলোকে সত্য প্রমাণ করতে ভুয়া প্রমাণ তৈরি করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সাধারণত ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘ক্রসফায়ার’ এর নামে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড চালানো হয়।
এইসব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের দাবি, দুই পক্ষের গুলি বিনিময়ে তারা মারা গিয়েছে। সন্দেহভাজন অপরাধী প্রথমে তাদের দিকে গুলি ছুড়ে। পাল্টা জবাবে তারা গুলি ছুড়লে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
কিন্তু আন্তর্জাতিক সংগঠনটিকে সাক্ষাৎকারে এসব হত্যাকাণ্ডের কথিত প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তারা নিজ চোখে কোনো হত্যাকাণ্ড দেখেননি। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে বলে মনগড়া বক্তব্য দিতে বলা হয়েছে।
কয়েকটি ঘটনা অনুসন্ধান করে দেখা গিয়েছে, কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ব্যক্তিদের কয়েক দিন আগে জোরপূর্বকভাবে গুম করত পুলিশ বা র্যাব। কাউকে কাউকে হত্যার ছয় সপ্তাহ আগেও গুম করা হয়েছে, এমন ঘটনাও ঘটেছে।
গুম হওয়া ব্যক্তিদের আত্মীয়-স্বজনরা তাদের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারে কিছু জানে না বলে দাবি করত বা প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানাতো।
চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় ঘর থেকে তুলে নিয়ে মাদকবিরোধী অভিযানে নামে হত্যা করা হয়েছে, এমন ঘটনাও ঘটেছে।
অ্যামনেস্টির দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক দিনুশিকা দিসানায়াকে বলেন, ‘মাদকবিরোধী যুদ্ধে গড়ে প্রতিদিন অন্তত একজন ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। র্যাব সংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলোয় আইন মানা হয়নি, সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়নি, বিচারকার্যের সম্মুখীনও করা হয়নি। অনেককে ঘর থেকে তুলে নেওয়া হয় আর আত্মীয়-স্বজনেরা মর্গে তাদের গুলিবিদ্ধ লাশ পায়।’
তিনি বলেন, ‘মাদক নিষিদ্ধের নামে এই হত্যাকাণ্ডগুলো করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে দেশটির প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাস করা মানুষদের বিচারবহির্ভূতভাবে শাস্তি দিয়েছে ও তাদের ওপর সহিংস হামলা চালিয়েছেন। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই এসব হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে।’