ইস্পাতের বৈশ্বিক চাহিদা মহামারীপূর্ব প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরে যাওয়ার প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকবে শীর্ষ ইস্পাত ব্যবহারকারী দেশ চীন। শিল্প উৎপাদন কার্যক্রমে দ্রুত প্রসার চাহিদা পুনরুদ্ধারে জ্বালানি জোগাচ্ছে। ওয়ার্ল্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশনের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছর ইস্পাতের বৈশ্বিক চাহিদা ৪ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়বে। চাহিদার পরিমাণ দাঁড়াবে ১৮৫ কোটি ৫৪ লাখ টনে। গত বছর কভিড-১৯ মহামারীর ধাক্কায় শিল্প ধাতুটির চাহিদা প্রবৃদ্ধির হার ছিল মাত্র দশমিক ১ শতাংশ। ওয়ার্ল্ড স্টিল জানায়, আগামী বছর চাহিদা আরো ২ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে ১৮৯ কোটি ৬৪ লাখ টনে পৌঁছতে পারে।
বিশ্বজুড়ে করোনার টিকাদান কর্মসূচি গতিশীল হচ্ছে। ফলে ভাইরাসের ধরনগুলো আগের তুলনায় দুর্বল হয়ে পড়ছে। জনজীবনে স্বাভাবিকতা ফিরছে। অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠতে শুরু করায় বাড়ছে অবকাঠামো ও শিল্প উৎপাদন। এসব খাতে প্রবল হয়ে উঠছে ইস্পাতের প্রয়োজনীয়তা।
তবে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, চাহিদা বৃদ্ধির যে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে তা প্রত্যাশার তুলনায় কম। এপ্রিলে ওয়ার্ল্ড স্টিল ৫ দশমিক ৮ শতাংশ হারে ইস্পাতের চাহিদা বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল। কিন্তু বিশ্বের শীর্ষ ইস্পাত ব্যবহারকারী দেশ চীনে চাহিদায় ধস নামায় প্রভাব পড়েছে বিশ্ববাজারে। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটি বৈশ্বিক চাহিদা পূর্বাভাস কমিয়ে এনেছে। আগামী বছরের জন্যও চাহিদা প্রবৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ দশমিক ২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।
এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইস্পাতের বৈশ্বিক ব্যবহারের অর্ধেকই ব্যবহার করে চীন। চলতি বছর দেশটিতে চাহিদা ১ শতাংশ বাড়ার পরিবর্তে ৩ শতাংশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আগামী বছরও চাহিদায় প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখছে না সংস্থাটি।
ওয়ার্ল্ড স্টিল ইকোনমিকস কমিটির চেয়ারম্যান সাইদ আর রেমিথি বলেন, চলতি বছর ইস্পাতের চাহিদায় প্রত্যাশার তুলনায় শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম চীন। বলিষ্ঠ প্রবৃদ্ধির কারণে চীন ব্যতীত বৈশ্বিক চাহিদা মহামারীপূর্ব অবস্থায় ফিরে যাবে।
এদিকে উন্নত দেশগুলোতে গত বছর মহামারীর প্রভাবে ইস্পাতের চাহিদা ১২ দশমিক ৭ শতাংশ কমে গিয়েছিল। কিন্তু চলতি বছর চাহিদা ১২ দশমিক ২ শতাংশ বাড়তে পারে। এছাড়া আগামী বছর চাহিদায় ৪ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আসবে।
যুক্তরাষ্ট্রে মোটরগাড়ি শিল্প এবং টেকসই পণ্য খাতে সম্প্রসারণ ইস্পাতের চাহিদা বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা রাখছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোতে চাহিদা পুনরুদ্ধার হতে শুরু করে গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকেই। করোনার ঢেউগুলোর ক্রমাগত আঘাত সত্ত্বেও ইস্পাতনির্ভর খাতগুলো ঘুরে দাঁড়ায়। এদিকে জার্মানিতে চাহিদা পুনরুজ্জীবিত করেছে দেশটির রফতানি।
করোনায় ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খায় ইতালি। কিন্তু খুব দ্রুতই দেশটি ক্ষতি কাটিয়ে ওঠায় ইতিবাচক হচ্ছে ইস্পাতের চাহিদা।
এশিয়ার উন্নত দেশগুলোয় চলতি বছর কভিড-১৯ পরিস্থিতি আরো ভয়ানক হয়ে ওঠে। টিকাদান কার্যক্রমে শ্লথগতিকে এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ী করা হচ্ছে। কিন্তু এর পরও ইস্পাতের চাহিদা পুনরুদ্ধার থেমে থাকেনি। ঘুরে দাঁড়ানো বৈশ্বিক বাণিজ্য