ভারতে হুমকির মুখে খাদ্য সরবরাহ চেইন

বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের মতো ভারতেও রেকর্ড উচ্চতায় অবস্থান করছে খাদ্যপণ্যের দাম। বাজারে চলমান অস্থিতিশীলতা কাটাতে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে দেশটির সরকার। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তিতে (ফিউচার মার্কেট) কৃষিপণ্য বাণিজ্য। চলতি মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে বলে জানানো হয়েছে। সরকারের এমন সিদ্ধান্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে খাদ্য সরবরাহ চেইন। অনেকেই মনে করছেন, এর ফলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। নেতিবাচক প্রভাব পড়বে আমদানিতেও।

সম্প্রতি স্থানীয় স্টক এক্সচেঞ্জগুলোকে ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তিতে সাত ধরনের কৃষিপণ্য বাণিজ্য স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছে সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (এসইবিআই)। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা পণ্যগুলো হলো— অপরিশোধিত পাম অয়েল, সয়াবিন এবং এটি থেকে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য, বাসমতি ব্যতীত অন্যান্য ধান, গম, ছোলা, সরিষা এবং এটি থেকে উৎপাদিত পণ্য ও মুগ ডাল। এসইবিআই জানায়, কয়েক মাসে ভারতে খাদ্যপণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েছে। পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্যই এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

তথ্য বলছে, চলতি বছর ভারতে ভোজ্যতেলের দাম রেকর্ড মাত্রায় বেড়েছে। ফলে দেশটির সরকার অক্টোবরে পাম, সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেলের আমদানি শুল্ক কমাতে বাধ্য হয়েছে। তবে এ পদক্ষেপ বাজারে খুব বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলেনি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ বিশ্ববাজারে এখনো পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী ও অস্থিতিশীলই রয়েছে।

এদিকে কৃষিপণ্যের বাণিজ্য বন্ধের সিদ্ধান্তকে অনুপযোগী বলে মনে করছেন পাম অয়েল বাণিজ্য সংস্থা সলভেন্ট এক্সট্রাক্টর অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট অতুল ত্রিবেদি। তবে ভোজ্যতেলের মূল্যস্ফীতি নিয়ে সরকারের উদ্বেগকে ভালোভাবে নিয়েছেন তিনি।

পরিসংখ্যান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বরে ভারতে খুচরা মূল্যস্ফীতি ৪ দশমিক ৯১ শতাংশে পৌঁছেছে, যা তিন মাসের সর্বোচ্চ। অন্যদিকে পাইকারি মূল্যস্ফীতির হার এক মাসের ব্যবধানে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৪ দশমিক ২৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এ নিয়ে টানা আট মাস ধরে দুই অংকের মূল্যস্ফীতি অব্যাহত আছে পাইকারি বাজারে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগামী বছরের শুরুর দিকে ভারতের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনের আগে খাদ্যপণ্যের এমন ঊর্ধ্বমুখী দাম দেশটির সরকারকে চাপের মধ্যে ফেলেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে নীতিনির্ধারকরা। এক্ষেত্রে কৃত্রিম মজুদ বন্ধে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ভবিষ্যৎ চুক্তিতে নির্ধারিত কৃষিপণ্য বাণিজ্য স্থগিত করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, সরকার এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্য কিছু একটা করতে চায়। তারই অংশ হিসেবে বাণিজ্য বন্ধের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ পদক্ষেপ অর্থবহ নাকি নিরর্থক, তাতে সরকারের কিছু এসে যায় না।

ভোজ্যতেল ব্রোকার ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সানবিন গ্রুপের প্রধান নির্বাহী সন্দীপ বাজোরিয়া বলেন, সরকারের এমন সিদ্ধান্ত ভোজ্যতেল আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের বিপাকে ফেলেছে। ব্যবসায়ীরা লোকসানের ঝুঁকি এড়াতে স্থানীয় এক্সচেঞ্জগুলোর মাধ্যমে বাণিজ্য করে থাকেন। এক কথায় ব্যবসায়ীরা এসব এক্সচেঞ্জে ভবিষ্যৎ লেনদেনের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। কিন্তু সরকার ভবিষ্যৎ চুক্তিতে কৃষিপণ্যের বাণিজ্য বন্ধের ঘোষণা দেয়ায় তাদের জন্য ব্যবসা করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। লোকসান এড়ানোর সুযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমদানি প্রবাহ মন্থর হয়ে পড়তে পারে বলেও মনে করছেন বাজোরিয়া।