ভারতের বার্ষিক চা রফতানিতে নিম্নমুখিতার আভাস

চলতি বছর ভারতের চা রফতানি কমার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত বছরের তুলনায় রফতানি কমতে পারে প্রায় ৮-১০ শতাংশ। রফতানিতে নিম্নমুখিতার প্রাথমিক কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিটিসি পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াকৃত চায়ের দাম স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেড়েছে। অন্যদিকে বর্তমানে জাহাজীকরণ ব্যয়ও বেশি।

টি বোর্ড অব ইন্ডিয়ার ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি-আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে দেশটির চা রফতানি প্রায় ১২ শতাংশ কমেছে। রফতানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ৮৮ লাখ ৪০ হাজার কেজিতে। গত বছরের একই সময় রফতানি হয় ১৩ কোটি ৪৪ লাখ ৭০ হাজার কেজি।

তবে দাম বেশি থাকায় মূল্যমানের দিক থেকে রফতানি বেড়েছে প্রায় ৪ শতাংশ। জানুয়ারি-আগস্ট পর্যন্ত ভারত ৩ হাজার ২৪৩ কোটি ৩৭ লাখ রুপির চা রফতানি করে। গত বছরের একই সময় রফতানি করা হয় ৩ হাজার ১০৪ কোটি ৪ লাখ রুপির চা। ইউনিটপ্রতি দাম বেড়েছে ১৮ শতাংশ। প্রতি কেজি বিক্রি করা হয় ২৭২ দশমিক ৯২ রুপিতে। গত বছর দাম ছিল কেজিপ্রতি ২৩০ দশমিক ৮৪ রুপি।

উল্লেখ্য, গত বছরও ভারতের চা রফতানি কমে গিয়েছিল। বছর শেষে রফতানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ২০ কোটি ৭৫ লাখ ৮০ হাজার কেজিতে। ২০১৯ সালে দেশটি ২৪ কোটি ৮২ লাখ ৯০ হাজার কেজি চা রফতানি করে। সে হিসাবে রফতানি ১৬ শতাংশ কমে গিয়েছিল। ওই বছর রফতানি কমে যাওয়ার প্রধান কারণ ছিল উৎপাদন ঘাটতি। কভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবে শ্রমিক সংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ নানা কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়। ওই বছরও সিটিসি চায়ের দাম ছিল চড়া। তবে মূল্যমানের দিক থেকে রফতানি ৮ শতাংশ বেড়েছিল। গত বছর সব মিলিয়ে ভারত ৫ হাজার ৬১০ কোটি ৬৫ লাখ রুপির চা রফতানি করে।

ইন্ডিয়ান টি এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (আইটিইএ) চেয়ারম্যান অংশুমান কানোরিয়া জানান, চা উৎপাদনে গত বছরের দুঃসময় কেটেছে। কভিড-১৯ জনিত লকডাউনের কারণে পুরো মৌসুমেই উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়। তবে এ বছর সিটিসি ও সনাতন পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াকৃত চা উৎপাদন বেড়েছে। তা সত্ত্বেও রফতানি নিম্নমুখী।

ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য হিন্দু বিজনেস লাইনকে কানোরিয়া বলেন, চলতি বছর চা রফতানি ৫-১০ শতাংশ কমতে পারে। সিটিসি পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াকৃত চায়ের মূল্য অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অন্যদিকে বৃহৎ আকারে বেড়েছে জাহাজীকরণ ব্যয়। এর বাইরে কনটেইনার সংকটও চা বাণিজ্য ব্যাহত করছে।

তথ্য বলছে, ভারতের চা রফতানির প্রায় ৬০ শতাংশই আসে সিটিসি চা থেকে। ফলে সিটিসি চায়ের চাহিদায় কোনো প্রভাব পড়লে তা পুরো রফতানিকে প্রভাবিত করে। অন্যদিকে এ চায়ের দাম বাড়ায় সুবিধা পেয়েছে কেনিয়া। দেশটির চা তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী হওয়ায় দুই দেশের মাঝে প্রতিযোগিতা বেড়েছে।

ভারতের চা রফতানির অন্যতম বড় বাজার ইরান। মোট রফতানির ২১ শতাংশই দেশটিতে সরবরাহ করা হয়। জানুয়ারি-আগস্ট পর্যন্ত ইরানে ভারতীয় চা রফতানি ৩৫ শতাংশ কমেছে। এ সময় রফতানি করা হয় ১ কোটি ৫৪ লাখ ৭০ হাজার কেজি চা। ভারতের সঙ্গে ইরানের অমীমাংসিত পেমেন্ট-সংক্রান্ত বিবাদের কারণে রফতানি কমেছে। অন্যদিকে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোয় রফতানি ১৮ শতাংশ কমে ২ কোটি ৮১ লাখ ৮০ হাজার কেজিতে নেমেছে।