ব্যয় বৃদ্ধির চাপে তালিকাভুক্ত সিমেন্ট কোম্পানি

চলতি ২০২১-২২ হিসাব বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিক ব্যবসায়িকভাবে ভালো যায়নি দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর। বিভিন্ন ধরনের ব্যয় বৃদ্ধির চাপে এ সময়ে কোম্পানিগুলোর নিট মুনাফা কমে গেছে। অন্যদিকে কারো কারো মুনাফার পাশাপাশি আয়ও কমেছে।

দেশের পুঁজিবাজারে সিমেন্ট খাতের সাতটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে ক্রাউন সিমেন্ট, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, মেঘনা সিমেন্ট ও প্রিমিয়ার সিমেন্ট জানুয়ারি-মার্চ সময়ের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে আরামিট সিমেন্ট ও কনফিডেন্স সিমেন্টের আর্থিক প্রতিবেদন এখনো প্রকাশিত হয়নি।

চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ক্রাউন সিমেন্টের আয় হয়েছে ৫৪৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ৫১১ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এ সময়ে কোম্পানিটির আয় বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ। তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে নিট মুনাফা ছিল ৪০ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমেছে প্রায় ৯৪ শতাংশ।

চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) হাইডেলবার্গ সিমেন্টের আয় হয়েছে ৫৪১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ৫৫০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এ সময়ে কোম্পানিটির আয় কমেছে ১ দশমিক ৬ শতাংশ। এ বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট লোকসান হয়েছে ১৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে নিট মুনাফা ছিল ৪৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা।

এ বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের আয় হয়েছে ৬২৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ৬৩১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এ সময়ে কোম্পানিটির আয় কমেছে প্রায় ১ শতাংশ। প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৯৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে নিট মুনাফা ছিল ১০৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমেছে প্রায় ৯ শতাংশ।

তৃতীয় প্রান্তিকে মেঘনা সিমেন্টের কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে নিট মুনাফা ছিল ৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট মুনাফা বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ।

চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে প্রিমিয়ার সিমেন্টের আয় হয়েছে ৪২৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে আয় ছিল ৩৬৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এ সময়ে কোম্পানিটির আয় বেড়েছে ১৭ শতাংশ। তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ১ কোটি ৫১ লাখ টাকা। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে নিট মুনাফা ছিল ১৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমেছে প্রায় ৯১ শতাংশ।

বেশ কয়েক বছর ধরেই সিমেন্টের প্রধান কাঁচামাল ক্লিঙ্কারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চাপে ছিল সিমেন্ট কোম্পানিগুলো। এর সঙ্গে বর্তমানে কয়লা ও জাহাজের জ্বালানি ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি যোগ হয়েছে। এছাড়া ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেও এ খাতের কোম্পানিগুলোর ব্যয় বেড়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমএ) প্রেসিডেন্ট ও ক্রাউন সিমেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান মো. আলমগীর কবির বণিক বার্তাকে বলেন, সিমেন্ট তৈরির কাঁচামালের দাম যে হারে বেড়েছে সে অনুসারে আমরা পণ্যের দাম বাড়াতে পারিনি। এতে কোম্পানিগুলোর মুনাফা কমে গেছে। সিমেন্টের মূল কাঁচামাল তৈরিতে কয়লার প্রয়োজন। এক বছর ধরেই কয়লার দাম ঊর্ধ্বমুখী। জাহাজের জ্বালানির দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে বিভিন্ন খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে সিমেন্ট কোম্পানিগুলোর মুনাফা কমে গেছে বলে জানান তিনি।