বাইডেনের ঘোষণায় ক্ষোভ কমছে না
বিমান থেকে গাজায় ত্রাণ ফেলবে যুক্তরাষ্ট্র

আগামী কয়েকদিনের মধ্যে গাজায় বিমান থেকে খাবার ও জরুরি জিনিসপত্র ফেলতে শুরু করবে যুক্তরাষ্ট্র। ত্রাণপ্রত্যাশী দুর্গত ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের বর্বর হামলা এবং গাজায় জাতিসংঘের দুর্ভিক্ষ সতর্কতার মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শুক্রবার এ ঘোষণা দিয়েছেন। তবে সমালোচকরা বলছেন, বাইডেনের এ ধরনের বক্তব্য সৌজন্যমূলক আচরণের বেশি কিছুকে ইঙ্গিত করে না। এতে এটা প্রতীয়মান হয়, বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলকে ত্রাণ সরবরাহ সহজ করতে চাপ প্রয়োগের বিষয়ে উদাসীন।

শনিবার দ্য গার্ডিয়ান অনলাইনের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ত্রাণ সরবরাহবিষয়ক বৈশ্বিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি বাইডেনের বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেছে, বিমান থেকে ত্রাণ ফেলা গাজার দুর্ভোগের কোনো সমাধান নয়। বরং এটা সময় ও প্রচেষ্টার অপচয়। গাজায় ইসরায়েলের দখলদারিত্ব থামানোর ওপর সব ধরনের কূটনৈতিক ফোকাস থাকা উচিত।

হোয়াইট হাউসে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে বৈঠককালে বাইডেন ঘোষণা দেন, ‘মানুষের প্রাণহানি হৃদয়বিদারক। নির্দোষ লোকেরা যুদ্ধের মধ্যে অভুক্ত থাকছে; তারা নিজ পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে পারছে না। যুক্তরাষ্ট্রকে আরও বেশি কিছু করতে হবে। এজন্য জর্ডান ও আঞ্চলিক বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে মিলে আমরা বিমান থেকে ত্রাণ ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ এরই মধ্যে জর্ডান ও ফ্রান্সের বিমানবাহিনী এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার ত্রাণপ্রত্যাশী শত শত মানুষের ওপর বর্বর হামলা চালায় ইসরায়েল। গাজা সিটির বাইরে এ হামলায় অন্তত ১১৫ জন নিহত হন। হাসপাতাল সূত্রের বরাত দিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, হতাহতদের ৮০ শতাংশই গুলিবিদ্ধ। এ ঘটনা তদন্তের জন্য ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন জরুরি ভিত্তিতে এ ঘটনার তদন্ত ও জবাবদিহি চেয়েছেন। পাশাপাশি তিনি বলেন, ইসরায়েলকে অবশ্যই গাজায় আরও বেশি ত্রাণ সরবরাহের সুযোগ দিতে হবে। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁও। তিনি আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান দেখাতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানান।

হামাস বলেছে, ইসরায়েলের বোমায় তাদের কাছে থাকা সাত ইসরায়েলি জিম্মি নিহত হয়েছেন। হামাসের কাসেম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবায়দা এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানান।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে হামাস ২৫০ জন ইসরায়েলিকে জিম্মি করে। এদের মধ্যে কয়েক দফায় নারী-শিশু, বৃদ্ধসহ শতাধিক ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। তবে এখনও তাদের হাতে ১৩০ জিম্মি রয়েছেন।

রাশিয়ায় হামাস-ফাতাহ ঐকমত্য

ফিলিস্তিনের দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হামাস ও ফাতাহ মস্কোয় আলোচনার ভিত্তিতে একটি রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছানোর পথে রয়েছে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশন বা পিএলওর প্রতি হামাস স্বীকৃতি ও সম্মান দেখিয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে ফাতাহর সঙ্গে তাদের আলোচনা চলছে।

দায়ের আল বালাহে রাতভর হামলা

আলজাজিরা জানায়, গাজার দক্ষিণাঞ্চলের দায়ের আল বালাহতে রাতভর হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ সময় কমপক্ষে ১০টি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এতে ১৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে, উত্তর গাজায় জ্বালানির খড়কুটো ও শুকনো কাঠ কুড়াতে গিয়ে ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও সাতজন। সব মিলিয়ে শনিবার আরও ৯২ জন নিহত হয়েছেন। বিদ্যুৎ-ইন্টারনেট না থাকা এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় গাজায় প্রকৃত মৃতের সংখ্যা সম্পর্কে জানা যায়নি। তবে এক হিসাবে দেখা গেছে, প্রতিদিনই গড়ে শতাধিক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করছে ইসরায়েল।