চলতি বছরের এখন পর্যন্ত মূল্যমানের দিক থেকে চীনে অস্ট্রেলীয় পণ্য রফতানি বেড়েছে ৭২ শতাংশ
অস্ট্রেলিয়া চীনের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় রফতানি গন্তব্যও চীন। দেশটি চীন থেকে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করে তার চেয়ে বেশি রফতানি করে। কিন্তু বর্তমানে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৈরিতায় রূপ নিয়েছে। এক বছর ধরে চলা বাণিজ্য বিবাদ কমার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। এর মধ্যেও দেশ দুটির মধ্যে পণ্য লেনদেন বেড়েছে ব্যাপক হারে। স্থানীয় চাহিদা মেটাতে অস্ট্রেলিয়ার ওপর এখনো অনেকাংশেই নির্ভরশীল চীন। চলতি বছর চীনে অস্ট্রেলিয়ার পণ্য রফতানিতে উল্লম্ফন সেদিকেই ইঙ্গিত করছে।
মূল্যমানের দিক থেকে চলতি বছর চীনে অস্ট্রেলিয়ার পণ্য রফতানি বেড়েছে ২৪ শতাংশ। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের সর্বশেষ তথ্য বলছে, বছরের এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া চীনে ১৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করে।
আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, মাসভিত্তিক তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, শুধু জুলাইতেই চীনে ১ হাজার ৯৪০ ডলারের (অস্ট্রেলিয়ান) পণ্য রফতানি করে ওশেনিয়া অঞ্চলের দেশটি। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রফতানি বেড়েছে ৭২ শতাংশ।
গত বছর কভিড-১৯ মহামারীর উৎস এবং প্রথম দিকে তা কীভাবে ছড়িয়েছে, এ বিষয়ে নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি উঠলে তা প্রত্যাখ্যান করে চীন। কিন্তু এতে সমর্থন জানায় অস্ট্রেলিয়া। এর পরই দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কে ফটল ধরে। সম্পর্কের তিক্ততার ফলস্বরূপ অস্ট্রেলীয় পণ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে চীন। শুল্ক আরোপ থেকে শুরু করে অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা ও বিধিনিষেধের দেয়াল তুলে দেয়া হয়। ফলে যব, ওয়াইন, মাংস, তুলা, কয়লাসহ অস্ট্রেলীয় পণ্য রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের প্রধান অর্থনীতিবিদ শন ল্যাংকেক বলেন, চীনের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যিক বিবাদ এক বছর ধরে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। নির্দিষ্ট কিছু অস্ট্রেলীয় পণ্য বাণিজ্যে দেয়াল তুলে দেয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার পরিমাণ এবং মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ানো হয়েছে। ফলে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা প্রকট আকার ধারণ করেছে। তবে পাহাড়সম প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও চীনে অস্ট্রেলীয় পণ্য রফতানি বাড়ছে বলে এক নোটে জানায় অক্সফোর্ড ইকোনমিকস।
চীন বিশ্বের শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদক। শিল্প ধাতুটির প্রধান কাঁচামাল আকরিক লোহার চাহিদা মেটাতে অস্ট্রেলিয়ার ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল বৃহৎ অর্থনীতির দেশটি। আকরিক লোহার মোট চাহিদার ৮০ শতাংশই আসে বহির্বিশ্ব থেকে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশই সরবরাহ করে অস্ট্রেলিয়া। চলতি বছরও অস্ট্রেলিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ আকরিক লোহা আমদানি করেছে চীন। অক্সফোর্ড ইকোনমিকস বলছে, পণ্য রফতানিতে উল্লম্ফনের পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে আকরিক লোহা। ল্যাংকক বলেন, আকরিক লোহার আকাশচুম্বী দাম এবং চীনের বাজারে শক্তিশালী চাহিদার কারণে রফতানি ফুলেফেঁপে উঠেছে।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠানটির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, আকরিক লোহা ও খনি থেকে উত্তোলিত পণ্যের বাইরে অন্যান্য পণ্য রফতানি এ বছর কমেছে। তবে খাদ্যপণ্যের মধ্যে কিছু কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে ঘটেছে এর উল্টো ঘটনা। নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও মাংস ও পশুজাত পণ্য রফতানি স্থিতিশীল রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে অস্ট্রেলীয় কাঠ, সামুদ্রিক খাদ্য, পানীয়, ভোজ্যতেল, কয়লা, টেক্সটাইল, পাদুকা, দানাদার খাদ্যশস্য ও চিনি।