চীনের প্রাদেশিক সরকারগুলো অস্ট্রেলিয়ার পরিবর্তে রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও কাজাখস্তান থেকে কয়লা কিনতে আমদানিকারকদের উৎসাহ জোগাচ্ছে। উদ্দেশ্য স্থানীয় বাজারে সৃষ্ট সংকট কাটিয়ে ওঠা।
স্থানীয় চাহিদা মেটাতে রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হেইলংজিয়াং হংজিনলং ইলেকট্রিক পাওয়ার ব্যুরো সম্প্রতি রাশিয়া থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি হেইহি কনভার্টার স্টেশনের পরিচালন সময় ৫ ঘণ্টা থেকে ১৬ ঘণ্টায় বাড়িয়েছে। স্টেশনটির মাধ্যমে রাশিয়ার আমুর নদী থেকে চীনের হেইলংজিয়াং প্রদেশের হেইহি শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটি জানায়, এ উদ্যোগ চলমান বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে বড় ভূমিকা রাখবে।
কয়েক বছর ধরেই চীনে কয়লা ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়াচ্ছে রাশিয়া। সিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা সেন্টার ফর এনার্জি ইকোনমিকস রিসার্চের পরিচালক লিন বোকিয়াং গ্লোবাল টাইমসকে জানান, চীনে অস্ট্রেলিয়ার বড় কয়লার বাজার ছিল। রফতানি বৃদ্ধির মাধ্যমে এ বাজারে নিজেদের অবস্থান পোক্ত করেছে রাশিয়া।
তিনি আরো বলেন, রাশিয়ার বেশির ভাগ কয়লার মজুদ উত্তর-পূর্ব চীনের কাছাকাছি অবস্থিত। এ কারণে রাশিয়া থেকে কয়লা আমদানি করলে পরিবহন ব্যয় সাশ্রয়ের বড় সুবিধা পায় চীন।
চলতি বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) রাশিয়া সব মিলিয়ে ১০ কোটি ৭৩ লাখ টন কয়লা রফতানি করে। এক বছরের ব্যবধানে জ্বালানি পণ্যটির রফতানি ৯ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে চীনে রফতানি করা হয় ২ কোটি ৪১ লাখ ৫০ হাজার টন। গত বছরের একই সময় দেশটিতে রফতানি করা হয়েছিল ১ কোটি ৬২ লাখ টন। অর্থাৎ রাশিয়া থেকে চলতি বছরের প্রথমার্ধে বড় পরিসরে কয়লা ক্রয় করেছে চীন।
এনার্জি ইন্ডাস্ট্রি ওয়েবসাইট চায়নাফাইভইডটকমের প্রধান বিশ্লেষক হান জিয়াওপিং বলেন, কয়লার ভূগর্ভস্থ মজুদের দিক থেকে বেশ সমৃদ্ধ রাশিয়া। ভৌগোলিক দিক থেকে দেশটির খুবই কাছে চীন। দু দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কও বন্ধুত্বপূর্ণ। এসব কারণেই চীনের কয়লা আমদানির আদর্শ উৎস হয়ে উঠছে রাশিয়া। তবে চীনে ব্যবহূত কয়লার ছোট একটি অংশ রাশিয়া সরবরাহ করে বলেও জানান তিনি।
জিয়াওপিং বলেন, অতিমাত্রায় ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে প্রতি বছরই রাশিয়ার কর্মঘণ্টা সীমিত থাকে। অন্যদিকে চীন কয়লার ব্যবহার হ্রাসের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। এ দুটি বিষয় পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়, চীনে সরবরাহের জন্য রাশিয়ার নতুন করে কয়লা উত্তোলন খনি তৈরির সম্ভাবনা নেই।
চীনের বেশির ভাগ প্রদেশই আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কয়লা সরবরাহ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। পূর্ব চীনের ঝিজিয়াং প্রাদেশিক জ্বালানি গ্রুপ সম্প্রতি ঘোষণা করে, তারা কাজাখস্তান থেকে আমদানীকৃত ১ লাখ ৩৬ হাজার টন উচ্চমানসম্পন্ন কয়লা খালাস করেছে। প্রথমবারের মতো প্রদেশটি কাজাখস্তান থেকে কয়লা আমদানি করল।
প্রাদেশিক সরকার প্রশাসনের দেয়া তথ্যমতে, উত্তর-পূর্ব চীনের জিলিন প্রদেশ কয়লা আমদানিতে রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও মঙ্গোলিয়াকে প্রাধান্য দিচ্ছে। এদিকে অস্ট্রেলিয়ান কয়লা আমদানিতে দীর্ঘদিন ধরে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে উত্তপ্ত করে তুলছে। কয়েকটি জাহাজ থেকে অস্ট্রেলিয়ান কয়লা খালাস করে বন্ডেড স্টোরেজে রাখা হয়েছিল। তখন এসব কয়লা স্থানীয় বাজারে সরবরাহের জন্য ছাড় দেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বর্তমানে কয়লা ও তীব্র বিদ্যুৎ সংকট কাটাতে বন্ডেড স্টোরেজ থেকে অস্ট্রেলিয়ান কয়লা উন্মুক্ত করছে চীন।