বজ্রপাতে প্রাণহানি রোধে লাগানো হবে তাল ও খেজুর গাছ

 

 

বাংলাদেশে প্রতি বছরই বাড়ছে বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্ট—এ সাত মাসেই বজ্রপাতে মারা গেছে ২৪৬ জন। সবচেয়ে বেশি মারা গেছে রাজশাহী বিভাগের চার জেলায়। এ অবস্থায় বজ্রপাতে প্রাণহানি রোধে এ বিভাগের ১ হাজার ৬৭৫ কিলোমিটার সড়কে তাল গাছ ও খেজুর গাছ লাগাবে সরকার। এ-সংক্রান্ত একটি প্রকল্প কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।

জানা গেছে, আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়নে প্রায় ১৬৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকার একটি প্রকল্প নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এ প্রকল্পের একটি অঙ্গে বজ্রপাত প্রতিরোধ এবং দেশীয় গাছ লাগানোর অংশ হিসেবে তাল ও খেজুর গাছ রোপণ করা হবে। রাস্তার ধারে এসব গাছ রোপণ ও পরিচর্যা করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।

এরই মধ্যে প্রকল্পটি কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় প্রকল্পটির বিষয়ে বেশকিছু সুপারিশ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, রাজশাহী অঞ্চলটি যেমন খরাপ্রবণ, তেমনি বজ্রপাতে মানুষ মৃত্যুর ঝুঁকিও বেশি। আবার দেশীয় ফল গাছ লাগানোর প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে এখানে। এসব বিবেচনা করেই একটি প্রকল্পের আওতায় তাল গাছ ও খেজুর গাছ লাগানোর সুপারিশ করেছি আমরা। এ অঞ্চলে এ দুই ধরনের গাছ লাগানো গেলে বজ্রপাত ও খরার ঝুঁকি যেমন কমানো যাবে, তেমনি পাখির আবাসস্থানের পরিসরও বাড়বে। মানুষের ফলের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। ফলে বহুমুখী সুবিধা আসবে প্রকল্পটি থেকে।

প্রসঙ্গত, বজ্রপাতে বেশি মানুষ মারা যায় এমন ১০টি জেলার মধ্যে চারটিই হচ্ছে রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, রাজশাহী ও নওগাঁ জেলা। এসব এলাকায় বজ্রপাতের বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে, যার মধ্যে একটি হচ্ছে লম্বা গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া। এজন্য রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় তাল ও খেজুর গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের তথ্যমতে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে সবচেয়ে বেশি নিহতের ঘটনা ঘটেছে সাতক্ষীরা ও কিশোরগঞ্জ জেলায়। এছাড়া পাবনা, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নীলফামারী, জামালপুর, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, সুনামগঞ্জ, কক্সবাজার, নারায়ণগঞ্জ জেলায় বজ্রপাতে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। গত মে-জুন এ দুই মাসে রাজশাহীতে ১০ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে নয়, পাবনায় ছয়, দিনাজপুরে সাত, নীলফামারীতে চার, জামালপুরে চার, শেরপুরে চার ও নওগাঁয় ছয়জন মানুষ মারা গেছে বজ্রপাতে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাপমাত্রা যত বাড়বে বজ্রপাতের ঘটনাও তত বাড়বে। তাপমাত্রা গড়ে এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেলে বজ্রপাত ১০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি বেড়ে যেতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় কালো মেঘের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ায় হঠাৎ বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে বজ্রপাতের ঘটনাও। এখনই বজ্রপাত মোকাবেলায় প্রাকৃতিক নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে। নইলে অদূরভবিষ্যতে বজ্রপাতে প্রাণহানি আরো বাড়বে।

সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের গবেষণা সেলের প্রধান আব্দুল আলীম বলেন, প্রতি বছর বজ্রপাতে মানুষ মারা যাচ্ছে গড়ে ২৫০ জনের বেশি। এর মধ্যে সিংহভাগই রয়েছে উত্তর ও মধ্যবঙ্গের মানুষ। পাশাপাশি হাওড় অঞ্চলেও মানুষ মারা যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। বজ্রপাত প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, কিন্তু মোকাবেলা করা সম্ভব। সেটি করতে গেলে অবশ্যই বড় গাছ থাকতে হবে। সরকারের এ উদ্যোগ এ অঞ্চলের মানুষকে কিছুটা নিরাপত্তা দেবে। তবে সারা দেশে বিশেষ করে অন্য সব অঞ্চলের মানুষকে রক্ষায় আরো উদ্যোগ নিতে হবে। আর বজ্রপাত মোকাবেলায় ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহার আরো বাড়াতে হবে।