চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) মহামারীর সংকট কাটিয়ে স্বর্ণের বৈশ্বিক চাহিদায় ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা দেখা দেয়। কিন্তু তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আবারো চাহিদায় ভাটা পড়েছে। মূল্যবান ধাতুটির চাহিদা ৭ শতাংশ কমেছে। গত বছরের শেষ প্রান্তিকের পর এটিই সর্বনিম্ন চাহিদা। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের (ডব্লিউজিসি) সর্বশেষ প্রান্তিকভিত্তিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
স্বর্ণ বিনিয়োগের জনপ্রিয় মাধ্যম এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ)। এ খাত থেকে বিনিয়োগকারীরা সরাসরি মুনাফা পান না। চলতি বছর মুনাফার হার বাড়তে থাকায় এ খাতে আগ্রহ হারাচ্ছেন অর্থনৈতিক বিনিয়োগকারীরা। তারা স্বর্ণ বিক্রি করে দিচ্ছেন। চাহিদা কমে যাওয়ার পেছনে এ বিষয়কেই প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করছে ডব্লিউজিসি।
তবে সংস্থাটি বলছে, অর্থনৈতিক বিনিয়োগকারীদের মাঝে স্বর্ণ ক্রয়ের প্রবণতা কমলেও ক্ষুদ্র ও অপ্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সর্বশেষ প্রান্তিকে বেশ ভালো পরিমাণ স্বর্ণের বার ও কয়েন ক্রয় করেছেন। অলংকার খাত এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোতে মূল্যবান ধাতুটির চাহিদা ছিল শক্তিশালী।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে স্বর্ণের মোট চাহিদা দাঁড়িয়েছে ৮৩১ টনে। গত বছরের একই সময় চাহিদার পরিমাণ ছিল ৮৯৪ দশমিক ৩ টন। ২০১৯ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে বিশ্বজুড়ে ১ হাজার ৮৪ দশমিক ৯ টন স্বর্ণের চাহিদা ছিল। অর্থাৎ বর্তমান চাহিদা গত দুই বছরের নিচে অবস্থান করছে। চাহিদায় ধারাবাহিক নিম্নমুখিতা কভিড-১৯ মহামারীর নেতিবাচক প্রভাবের প্রতিফলনও বটে।
ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো স্বর্ণ কেনা স্থগিত রাখে। লকডাউন এবং অন্যান্য বিধিনিষেধের কারণে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে পড়া এবং ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব অলংকার বাণিজ্যকে খাদের কিনারে নিয়ে যায়। সবচেয়ে বেশি বিপর্যয়ে পড়ে এশিয়ার ব্যবসায়ীরা। তবে অর্থনৈতিক ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা মজুদ বাড়াতে থাকেন। পাশ্চাত্যের দেশগুলোর বিনিয়োগকারীরা এক্ষেত্রে এগিয়ে ছিলেন।
বিনিয়োগের সবচেয়ে নিরাপদ মাধ্যম স্বর্ণ। অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার সময় মূল্যবান ধাতুটির বিনিয়োগ বেড়ে যায়। মানুষ নিরাপদ বিনিয়োগের আশায় বেশি বেশি স্বর্ণ কেনে। মহামারীর ধাক্কা সামলে অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত হতে শুরু করায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অলংকার খাতে আংশিকভাবে বেড়েছে স্বর্ণের চাহিদা। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা মহামারীর আগের তুলনায় দ্রুতগতিতে স্বর্ণ ক্রয় করছে। কিন্তু বড় বিনিয়োগকারীরা এখনো টালমাটাল অবস্থার মধ্যে রয়েছে। ফলে সর্বোপরি চাহিদায় পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব।
ডব্লিউজিসির প্রতিবেদন বলছে, এক্সচেঞ্জ ট্রেড ফান্ডে নিট স্বর্ণ বিক্রি এক বছরের ব্যবধানে স্বর্ণের চাহিদাকে নিম্নমুখী করে তুলেছে। যদিও অন্যান্য খাতে চাহিদা বাড়ছে। তৃতীয় প্রান্তিকে ধাতুটির মোট চাহিদা কমেছে ৭ শতাংশ। ভোক্তা খাতে স্বর্ণালংকার ক্রয় ৩০০ শতাংশ বেড়ে ৪৪৩ টনে উন্নীত হয়েছে। বার ও কয়েন অপ্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এ খাতে চাহিদা বেড়েছে টানা পাঁচ প্রান্তিক ধরে। প্রযুক্তি খাতে স্বর্ণের চাহিদা গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় ৯ শতাংশ বেড়েছে।
ডব্লিউজিসির ঊর্ধ্বতন বাজার বিশ্লেষক লুইস স্ট্রিট বলেন, ইটিএফে স্বর্ণ বিক্রি কমে যাওয়ায় চলতি বছর মোট চাহিদায় বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। তবে অন্যান্য খাতে চাহিদা ইতিবাচক রয়েছে। বছরের বাকি সময়জুড়ে চাহিদা নিম্নমুখীই থাকবে। ইটিএফের কারণে সাধারণ ভোক্তা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।
তিনি আরো বলেন, চলতি বছর অলংকারের চাহিদা গত বছরের চাহিদাকে ছাড়িয়ে যাবে। চাহিদার পরিমাণ দাঁড়াবে ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টন পর্যন্ত। কিন্তু বার ও কয়েনের ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা সত্ত্বেও বিনিয়োগ খাতে চাহিদা দুর্বল থাকবে।