কিছুটা কমার পর আবারও রাজধানীর বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। শেষ দুই দিনে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০ টাকা। এর আগে হু হু করে বেড়ে পেঁয়াজের দাম পৌঁছায় ২৫০ টাকায়। এরপর গত সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম কমে দুইশ টাকার নিচে আসে। অস্বাভাবিক বাড়ার পর ধারাবাহিকভাবে কমে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ ১৮০ এবং নিম্ন মানের পেঁয়াজ ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
তবে শুক্রবার থেকে আবার বাড়তে শুরু করে পেঁয়াজের দাম। শুক্রবার পেঁয়াজের দাম কেজিতে বাড়ে ২০ টাকা। শনিবারও কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০ টাকা। এতে ভালো মানের পেঁয়াজের কেজি ২২০ এবং নিম্ন মানের পেঁয়াজের কেজি ১৭০ টাকায় পৌঁছেছে।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) রাজধানীর রামপুরা, খিলগাঁও ও মালিবাগ হাজীপাড়ার বিভিন্ন খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে এ তথ্য জানা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, শ্যামবাজারে দাম বেড়ে গেছে।
হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মিলন বলেন, গত বৃহস্পতিবার যে পেঁয়াজ ১৭০-১৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছি, আজ তা ২২০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। গত দুই দিনে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৪০ টাকার বেশি বেড়েছে। এরমধ্যে শুক্রবার কেজিতে বাড়ে ২০ এবং আজ বেড়েছে আরও ২০ টাকা।
এ ব্যবসায়ী বলেন, পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার পর অনেকটাই কমেছিল। ভালো মানের পেঁয়াজের কেজি ১৭০ এবং নিম্নমানের পেঁয়াজ ১২০ টাকায় বিক্রি করছিলাম। এখন কোনো পেঁয়াজ ১৭০ টাকা নিচে বিক্রির উপায় নেই।
খিলগাঁওয়ে ব্যবসায়ী জহির বলেন, পেঁয়াজের কেজি ২৫০ টাকায় ওঠার পর গত কয়দিন নিয়মিত দাম কমে যায়। এতে দুই বস্তা পেঁয়াজে আমার পাঁচ হাজার টাকা লস হয়। কিন্তু আমার পেঁয়াজ ফুরিয়ে যাওয়ার পর এখন আবার দাম বাড়ছে। গত দুই দিনে শ্যামবাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০ টাকা। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার যে পেঁয়াজ ১৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছি আজ তা ২২০ টাকা হয়েছে।
এদিকে অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় পেঁয়াজের ঝাঁজ আর সইতে পারছেন না রাজধানীর নিম্ন আয়ের মানুষ। বাজারে পেঁয়াজের দাম শুনে সব শ্রেণি পেশার ক্রেতাদের হা-হুতাশ করছেন।
রামপুরার বাসিন্দা জুয়েল বলেন, পেঁয়াজ তো কিছুতেই স্বস্তি দিচ্ছে না। গত বুধবার পেঁয়াজের কেজি ছিল ১৬০ টাকা। দাম আরও কমবে এ আশায় ওই দিন এক পোয়া পেঁয়াজ ৪০ টাকা দিয়ে কিনি। গতকালও সেই পেঁয়াজে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়। আজ তা আরও বেড়ে ২০০ টাকা হয়েছে। কাল হয়তো দেখা যাবে দাম আরও বেড়েছে।
উল্লেখ্য, ভারত রফতানি বন্ধ করায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে দেশে পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে উঠে। দফায় দফায় বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের সংবাদে ২৯ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো ১০০ টাকায় পৌঁছে যায় দেশি পেঁয়াজের কেজি। খুচরা পর্যায়ে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে থাকে। এরপর বেশি কিছুদনি পেঁয়াজের দাম অনেকটাই স্থির ছিল। ৭০-৮০ টাকা কেজিতে নেমেছিল।
কিন্তু ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের পর আবারও পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং আমদানি করা পেঁয়াজ আসছে না এমন অজুহাতে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেন। এতে আবারও ১০০ টাকায় পৌঁছায় পেঁয়াজের কেজি।
এরপর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এক বক্তৃতায় বলেন- পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকার নিচে নামা সম্ভব নয়। মন্ত্রীর এ বক্তব্য পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়টি আরও উসকে দেয় বলে অভিযোগ খুচরা ব্যবসায়ীদের। ১০০ টাকা থেকে পেঁয়াজের কেজি ১৩০ টাকায় পৌঁছে যায়। এ পরিস্থিতিতে শিল্পমন্ত্রী জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক আছে। এর পরের দিন ওই পেঁয়াজের কেজি ১৫০ টাকায় পৌঁছে।
তবে এখানেই থেমে থাকেনি পেঁয়াজের দাম। দফায় দফায় বেড়ে পেঁয়াজের কেজি ২৫০ টাকায় পৌঁছে যায়। এরপর বিমানে পেঁয়াজ আসার সংবাদে গত সপ্তাহে দাম কমে ২০০ টাকার নিচে চলে আসে। কিন্তু সেটি বেশি দিন স্থায়ী থাকল না।