প্রায় দুই বছর পর করোনায় মৃত্যুহীন দিন দেখল ঢাকা

দেশে করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর ১৮ মাসের মধ্যে বুধবার প্রথমবারের মতো মৃত্যুহীন দিন পার করেছে ঢাকা বিভাগ। এর আগে সর্বশেষ গত বছরের ৩ এপ্রিল করোনায় মৃত্যুহীন দিন দেখেছিল বাংলাদেশ। দেশে প্রায় দুই বছর ধরে চলা করোনা সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি দৈনিক মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এ বিবেচনায় ঢাকায় মৃত্যু না হওয়াকে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, বুধবার ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে করোনায় মোট ছয়জন মারা গেছেন। তবে এদিন ঢাকা বিভাগের কেউ মারা যাননি। এর আগে ২০২০ সালের ৩ এপ্রিল ঢাকা বিভাগে করোনায় কোনো মৃত্যু হয়নি। এদিকে, মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৩৬৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদিন মোট আক্রান্তের ২৪৩ জনই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। যা দিনের মোট শনাক্তের দুই তৃতীয়াংশের বেশি ছিল। আর এ সময় দেশে করোনামুক্তি ঘটেছিল ৪৮১ জনের। আগের দিন মঙ্গলবার সারা দেশে সাতজনের মৃত্যু হয়। আর ৪৬৯ জনে করোনা শনাক্ত হয়। সে তুলনায় বুধবার শনাক্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা দুটোই কমেছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা পরিস্থিতি সংক্রান্ত সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ১০ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগের তিনজন, চট্টগ্রামের চারজন, খুলনার একজন, বরিশালের একজন এবং ময়মনসিংহ বিভাগের একজন রয়েছেন। তাদের মধ্যে পুরুষ চারজন ও নারী ছয়জন। এ নিয়ে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২৭ হাজার ৮০১ জনে। ১০ জনের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে আটজন এবং বেসরকারি হাসপাতালে দুজন মারা যান। মারা যাওয়া ১০ জনের মধ্যে চল্লিশোর্ধ তিনজন, পঞ্চাশোর্ধ দুজন, ষাটোর্ধ্ব তিনজন ও সত্তরোর্ধ্ব দুজন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানায়, ২৪ ঘণ্টায় সরকারি ও বেসরকারি ৮৩২টি ল্যাবরেটরিতে ১৫ হাজার ৬০৯টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর যাচাই-বাছাই শেষে পূর্বে জমা কিছু স্যাম্পলসহ মোট ১৬ হাজার ৮৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ সময় ২৪৩ জন রোগী শনাক্ত হয়। এ নিয়ে দেশে করোনায় মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৫ লাখ ৬৬ হাজার ৯০৭ জনে দাঁড়াল। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ১ দশমিক ৫১ শতাংশ।

দেশে গত বছরের অর্থাৎ ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষার ভিত্তিতে রোগী শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। এ ছাড়া ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৫৩৪ জন। এ নিয়ে দেশে করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১৫ লাখ ৩০ হাজার ৮৩ জনে।

বাংলাদেশে করোনার প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে গত বছরের ৮ মার্চ। তার ১০ দিন পর ১৮ মার্চ আসে প্রথম মৃত্যু খবর।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কোনো দেশে টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে রোগী শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে বলে ধরা হয়। বাংলাদেশে প্রায় এক মাস ধরে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি ৫ শতাংশের নিচে রয়েছে। এ হিসাবে বর্তমানে ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।