পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে ৪৮ শতাংশ

দেশের পুঁজিবাজারে গত সপ্তাহে মিশ্র প্রবণতা দেখা গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে মন্দা ভাবের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ থাকলেও তাদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। বিশেষ করে সম্প্রতি কোম্পানিগুলোর প্রান্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ আবার বাড়তে দেখা গিয়েছে। এতে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত সপ্তাহে লেনদেন বেড়েছে ৪৮ শতাংশ। তবে লেনদেন বাড়লেও এ সময়ে পয়েন্ট হারিয়েছে সব সূচক। দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সূচক ও লেনদেন দুটোই কমেছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসইতে গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ৪ হাজার ৫৮ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে লেনদেন ছিল ২ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকার। সেই হিসাবে সাপ্তাহিক লেনদেন বেড়েছে ১ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা বা ৪৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ। গত সপ্তাহে এক্সচেঞ্জটিতে দৈনিক গড়ে ৮১১ কোটি ৫৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের সপ্তাহে দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ৫৪৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকার।

গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের সপ্তাহের তুলনায় ৬ দশমিক ৭০ পয়েন্ট বা দশমিক ১০ শতাংশ কমে ৬ হাজার ৬৫৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ৬ হাজার ৬৬২ পয়েন্টে। সূচকের পতনে গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল বিকন ফার্মা, ইবিএল, ইউসিবি, ডেল্টা লাইফ, গ্রামীণফোন, যমুনা ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংক শেয়ারের।

ডিএসইর অন্য সূচকের মধ্যে নির্বাচিত কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ সপ্তাহের ব্যবধানে ১৭ পয়েন্ট বা দশমিক ৭০ শতাংশ কমে ২ হাজার ৪৬১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ২ হাজার ৪৭৮ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ১৭ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২০ শতাংশ কমে ১ হাজার ৪৪৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ১ হাজার ৪৬৪ দশমিক ৬৩ পয়েন্টে।

গত সপ্তাহে এক্সচেঞ্জটির খাতভিত্তিক লেনদেনে শীর্ষে ছিল বিবিধ খাত। ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ ছিল খাতটির দখলে। ১০ দশমিক ৭ শতাংশ নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। ৯ দশমিক ৯ শতাংশ নিয়ে লেনদেন তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে প্রকৌশল খাত। ৮ দশমিক ৮ শতাংশ দখলে নিয়ে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে বস্ত্র খাত।

ডিএসইতে গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে ভ্রমণ খাতে, ১২ দশমিক ৪ শতাংশ। ২ দশমিক ৯ শতাংশ নিয়ে পরের অবস্থানে রয়েছে প্রকৌশল খাত। তৃতীয় অবস্থানে থাকা পেপার খাতে রিটার্ন এসেছে ২ দশমিক ৪ শতাংশ। সাধারণ বীমা খাতে ২ শতাংশ রিটার্ন এসেছে। অন্যদিকে ঋণাত্মক রিটার্নে গত সপ্তাহে শীর্ষ ছিল জীবন বীমা খাত। এ খাত থেকে রিটার্ন এসেছে ১ দশমিক ৯ শতাংশ। ১ দশমিক ৫ শতাংশ ঋণাত্মক রিটার্ন নিয়ে এ তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পাট খাত।

গত সপ্তাহ শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকায়। যেখানে সপ্তাহের শুরুতে বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকায়। সপ্তাহ শেষে এক্সচেঞ্জটির বাজার মূলধন বেড়েছে ১ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা বা দশমিক ২৫ শতাংশ। ডিএসইতে গত সপ্তাহে মোট ৩৯৩টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৫৫টির, কমেছে ১৯৮টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৩৪টির। লেনদেন হয়নি ৬টির।

অন্যদিকে সিএসইতে গত সপ্তাহে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই দশমিক ৬১ শতাংশ কমে ১৯ হাজার ৪৭৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহে যা ছিল ১৯ হাজার ৫৯৩ পয়েন্টে। সিএসসিএক্স সূচকটি গত সপ্তাহ শেষে দশমিক ৬১ শতাংশ কমে ১১ হাজার ৬৮৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের সপ্তাহ শেষে সূচকটির অবস্থান ছিল ১১ হাজার ৭৫৭ পয়েন্টে। সিএসইতে গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছে প্রায় ১৩১ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে যেখানে লেনদেন হয়েছিল প্রায় ১৬৫ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৪০টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১২৩টির, কমেছে ১৯৭টির, অপরিবর্তিত রয়েছে ২০টির।