পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (পিএলএফএসএল) শেয়ার লেনদেন বন্ধের মেয়াদ আরো এক দফায় বাড়ানো হয়েছে। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন আগামীকাল থেকে আরো ১৫ দিন বন্ধ থাকবে। এ নিয়ে ৬৩ দফায় কোম্পানিটির লেনদেন বন্ধের সময় বাড়ানো হয়েছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
২০১৯ সালের ১৪ জুন পিপলস লিজিংয়ের শেয়ার লেনদেন প্রথমবারের মতো স্থগিত করে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ। লিস্টিং রেগুলেশনের ধারা ৫০(১) অনুসারে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন স্থগিত করা হয়। পরবর্তী সময়ে ১৫ দিন পর পর এ স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। ৬৩তম দফায় ৮ মে থেকে পরবর্তী ১৫ কার্যদিবস কোম্পানিটির লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে।
লিস্টিং রেগুলেশনের ধারা ৫০(১) অনুসারে, তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি লিস্টিং রেগুলেশনের বিধান লঙ্ঘন করলে কিংবা কোম্পানির শেয়ারদরে প্রভাব পড়তে পারে—এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্যে ঘাটতি থাকলে স্টক এক্সচেঞ্জ সেই কোম্পানির শেয়ার লেনদেন স্থগিত করতে পারবে। আর লিস্টিং রেগুলেশনের ধারা ৫০(৩) অনুসারে, প্রথম দফায় ৩০ কার্যদিবস পর্যন্ত কোম্পানির শেয়ার লেনদেন স্থগিত থাকবে। পরবর্তী সময়ে স্টক এক্সচেঞ্জ চাইলে আরো ১৫ কার্যদিবসের জন্য এ স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়াতে পারবে।
এর আগে গত নভেম্বর দুর্দশাগ্রস্ত ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিংয়ের কার্যক্রম চালু করতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সভাপতিত্বে ৮০০তম কমিশন সভায় ওই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কোম্পানিটির নয় বছরের আর্থিক প্রতিবেদন বিশেষ নিরীক্ষার উদ্যোগ নেয় বিএসইসি। বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগের জন্য সম্প্রতি দরপত্রও আহ্বান করেছে সংস্থাটি। নয় মাসের মধ্যে বিশেষ নিরীক্ষা সম্পন্ন করে কমিশনের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
দরপত্র অনুসারে, ৩০ জুন ২০১৩ থেকে ৩০ জুন ২০২১ পর্যন্ত সময়ে কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষা করতে হবে। এর মধ্যে ৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৩ হিসাব বছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদন চুক্তি স্বাক্ষর করার তিন মাসের মধ্যে কমিশনের কাছে জমা দিতে হবে বিশেষ নিরীক্ষককে। আর ১ জুলাই ২০১৩ থেকে ৩০ জুন ২০২১ পর্যন্ত আট বছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে নয় মাস সময় পাবেন বিশেষ নিরীক্ষক। সব মিলিয়ে নয় বছরের আর্থিক প্রতিবেদন নয় মাসের মধ্যে জমা দিতে হবে।
নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের যোগ্যতার বিষয়ে দরপত্রে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটিকে বিএসইসির নিরীক্ষক প্যানেলের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। প্রতিষ্ঠানের পাঁচ বছরের সাধারণ অভিজ্ঞতার পাশাপাশি তিন বছর একই ধরনের নিরীক্ষা কিংবা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) কিংবা অন্য কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাজাপ্রাপ্ত কোনো প্রতিষ্ঠান নিরীক্ষার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। এ ধরনের নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দক্ষ লোকবল ও সক্ষমতা থাকতে হবে। ব্যবস্থাপনাগত সক্ষমতা ও আর্থিক ধারাবাহিকতা থাকার শর্তও দেয়া হয়েছে দরপত্রে।
২০০৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ২৮৫ কোটি ৪৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ২৮ কোটি ৫৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৯৭। এর মধ্যে ২৩ দশমিক ২১ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে রয়েছে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৮ দশমিক ৬২ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক, দশমিক ১৯ শতাংশ বিদেশী ও ৬৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।