ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘নন-ট্যারিফ প্রতিবন্ধকতা, টেকনিক্যাল ও টেস্টিং সুবিধার অপর্যাপ্ততা এবং পিটিএ ও এফটিএর অনুপস্থিতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিদ্যমান সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।’
ভৌগোলিক দিক থেকে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে কৌশলগত স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। তবে অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) ও মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) অভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিদ্যমান সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, আঞ্চলিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ আরও বাড়াতে হবে। এজন্য বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক নীতিমালার সংস্কার ও সহায়ক নীতি প্রণয়ন, পণ্য বহুমুখীকরণ, কর ও শুল্ক কাঠামোর আধুনিকায়ন, অবকাঠামোখাতের উন্নয়ন, ক্রস বর্ডার বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
শুক্রবার ‘এশিয়া-প্যাসিফিক এবং বাংলাদেশ: অর্থনৈতিক সম্ভাবনা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে তারা এসব কথা বলেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) যৌথ আয়োজনে ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২১’ এর অংশ হিসেবে ওয়েবিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন। এছাড়া বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নায়োকি।
সূচনা বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘নন-ট্যারিফ প্রতিবন্ধকতা, টেকনিক্যাল ও টেস্টিং সুবিধার অপর্যাপ্ততা এবং পিটিএ ও এফটিএর অনুপস্থিতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিদ্যমান সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৩৬ বিলিয়ন ডলার এবং বাংলাদেশের মোট আমদানির প্রায় ৫০ ভাগই আসে এ অঞ্চলের দেশগুলো হতে। এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সিঙ্গাপুর থেকে ২০২১ সালে ২৩৯ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ এসেছে।
রিজওয়ান রাহমান জানান, মূলত খাদ্য, কৃষি, ফিশারিজ, কেমিক্যাল, টেক্সটাইল, তৈরি পোষাক, সিমেন্ট, নির্মাণ, টেলিকম, ইন্স্যুরেন্স ও ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন খাতে এ বিনিয়োগ এসেছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, ‘এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রবেশদ্বার বাংলাদেশ। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বেসরকারি খাত থেকে উত্থাপিত বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক প্রতিবন্ধকতাগুলো সম্পর্কে সরকার অবগত রয়েছে। এগুলো দ্রুত নিরসনে সরকার বদ্ধ পরিকর।’
তিনি বলেন, ‘সরকার দক্ষ মানব সম্পদ তৈরিতে বেশকিছু প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করেছে। এতে ভবিষ্যতে শিল্প-কারখানার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তি তৈরি হবে। একই সঙ্গে টেকসই অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দিতে হবে।’
ইআরডি সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন বলেন, ‘দেশের অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে ইতোমধ্যে মেগা প্রকল্পসমূহসহ অন্যান্য প্রকল্পে ৪০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে একটি দেশের সঙ্গে পিটিএ (অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি) সই করেছে। ১০টি দেশের সঙ্গে পিটিএ এবং এফটিএ (মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি) সইয়ের প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যে শিগগিরই দুটি দেশের সঙ্গে পিটিএ সই হবে।
জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নায়োকি বলেন, ‘আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় তিন হাজার ডলারে পৌঁছাবে। এতে অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা বাড়বে। বাণিজ্য ও সেবা খাতের সম্প্রসারণের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। বিনিয়োগের জন্য অবকাঠামো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে বাংলাদেশের চলমান অবকাঠামো প্রকল্পসমূহের কাজ যথাযথ সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘এদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ উন্নয়নে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স, পণ্য আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ার সহজ করা, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে জোর দিতে হবে। এতে বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের ইমেজ বাড়বে, যা বৈদেশিক বিনিয়োগও বাড়াবে।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘ঢাকার অদূরে আড়াইহাজারে স্থাপিত জাপান ইকোনোমিক জোনে ১০০টি কোম্পানির শিল্প-কারখানা স্থাপনের সুযোগ রয়েছে। এ শিল্পাঞ্চলটি পুরোপুরি চালু হলে বাংলাদেশ আরও বেশি হারে বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে। করোনার মধ্যেও গত অর্থবছরে জাপানে বাংলাদেশের রপ্তানি ১০ শতাংশ বেড়েছে। আশা করি, সামনের দিনগুলোতে এটি আরও বাড়বে।’