কভিড মহামারীর মধ্যেও দেশে ব্যবসার পরিবেশ ক্রমে উন্নতির দিকে। বেশ কয়েকটি সূচক বিশ্লেষণের পর উঠে এসেছে এমন তথ্য। মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের (পিইবি) যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনটি জানানো হয়েছে। দেশে নিজস্ব সংস্থার উদ্যোগে এই প্রথম এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশিত হলো।
‘বাংলাদেশ বিজনেস ক্লাইমেট ইনডেক্স (বিবিএক্স)’ শীর্ষক এ প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে গতকাল এক ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন এমসিসিসিআইয়ের সভাপতি নিহাদ কবির। ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ক কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সংগঠন এফআইসিসিআইয়ের সভাপতি রূপালী হক চৌধুরী, এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান, বিল্ডের চেয়ারপারসন ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক আবুল কাশেম খান, এমসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি আনিস এ খান প্রমুখ। ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের ড. এম মাশরুর রিয়াজ।
সভাপতির বক্তব্যে নিহাদ কবির বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম নিজস্ব কোনো সংস্থার উদ্যোগে বিজনেস ক্লাইমেট ইনডেক্স প্রকাশ হয়েছে। দেশের আটটি বিভাগ থেকেই গবেষকরা বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন। এ ইনডেক্সের আলোকে দেখা যায়, বাংলাদেশ ক্রমে অর্থনৈতিক উন্নতির দিকে যাচ্ছে। পাশাপাশি আমাদের সামাজিক উন্নয়নও হচ্ছে। ২০৩০-৪০ সালে আমাদের ব্যবসার অবস্থানকে অনেক দূর নিয়ে যেতে হলে এ ধরনের গবেষণা অব্যাহত রাখা জরুরি।
মূল প্রবন্ধে ড. এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, বাংলাদেশ বিজনেস ক্লাইমেট ইনডেক্স তৈরিতে ১০টি মানদণ্ড বিবেচনা করা হয়েছে। এগুলো হলো ব্যবসা শুরু করা, জমির সহজলভ্যতা, নিয়ন্ত্রণমূলক তথ্যের সহজলভ্যতা, অবকাঠামো, শ্রম বিধিবিধান, বিরোধ নিষ্পত্তি, সীমান্ত বাণিজ্যের সহজীকরণ, কর পরিশোধ, প্রযুক্তির অভিযোজন ও ঋণের প্রাপ্যতা। মোট ১০০ পয়েন্টের ভিত্তিতে তৈরি এ সূচকে ব্যবসায়িক পরিবশকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। পয়েন্ট শূন্য থেকে ২০ হলে ব্যবসার পরিবেশ কঠিন, ২১ থেকে ৪০ হলে ব্যবসায়িক পরিবেশে মারাত্মক প্রতিকূলতা রয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়। পরবর্তী ২০ পয়েন্টের মধ্যে সূচক অবস্থান করলে জটিল ব্যবসায়িক পরিবেশ, ৬১ থেকে ৮০-এর মধ্যে সূচক হলে ব্যবসার পরিবেশ উন্নতির দিকে এবং ৮১ থেকে ১০০-এর মধ্যে সূচক থাকলে দেশে ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ বিরাজ করছে বলে ধরে নেয়া হয়েছে। প্রথমবারের মতো তৈরি করা ব্যবসায়িক পরিবেশ সূচকে বাংলাদেশের পয়েন্ট ৬১ দশমিক শূন্য ১। প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নতির দিকে। তবে আরো উন্নতির সুযোগ রয়েছে।
অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বিশ্বব্যাংকের ব্যবসা সহজীকরণ সূচক প্রকাশ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উদ্যোক্তাদের জন্য ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ পরিকল্পনা নেয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল। তবে এমসিসিআই ও পিইবির এমন উদ্যোগ সরকারি সংস্থাগুলোর জন্য ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এতে এসডিজি ও ভিশন ২০৪১ অর্জন সহজ হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালমান এফ রহমান বলেন, এ সূচক শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রাম নয়, সত্যিকার অর্থেই পুরো বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশকে তুলে ধরেছে। বিশদ ও কার্যকর গবেষণা পদ্ধতির কারণে এ সূচক শিগগিরই বৈশ্বিক উদ্যোক্তাদের মাঝে গ্রহণযোগ্যতা পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বিডার নির্বাহী চেয়ার?ম্যান তার বক্তব্যে বলেন, বিশ্বব্যাংক তাদের সূচক প্রকাশ বন্ধের ঘোষণা দিলেও দেশের ব্যবসার পরিবেশ সহজ করতে সংস্থাটির কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এমসিসিআই ও পিইবির ব্যবসায়িক পরিবেশ সূচক তৈরির উদ্যোগ বিডার কার্যক্রমে আরো গতি আনবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, বাংলাদেশের অবকাঠামো, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করতে মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে জাপান। এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ হলে এ দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশের আরো উন্নতি হবে।