নিষ্ক্রিয় ব্রোকারের বিরুদ্ধে কঠোর বিএসইসি

বিনিয়োগকারীদের জন্য গত দুই বছরে ৫ শতাংশ করে নগদ লভ্যাংশ, টাকার অঙ্কে প্রতিবছরের জন্য গড়ে ২১ লাখ ৪৩ হাজার টাকা দিয়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। এই দুই বছরে ৪২ লাখ ৮৭ হাজার টাকা লভ্যাংশ পেতে আইসিবি সিকিউরিটিজ সিএসইর লেনদেনে অবদান রেখেছে প্রায় দুই হাজার ৭১২ কোটি টাকা। আর লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজ ও মাল্টি সিকিউরিটিজের পুঁজিবাজারে সিএসইর লেনদেনে অবদান ছিল যথাক্রমে দুই হাজার ৪৩৫ কোটি ও দুই হাজার ৪১৬ কোটি টাকা।

অথচ সমপরিমাণ লভ্যাংশ পেতে পুরো দুই বছরে সিএসইতে এক পয়সাও লেনদেন করেনি বিজনেস ক্যাপিটাল শেয়ারস, এনসি সিকিউরিটিজ, ফজলে সিকিউরিটিজ, এএম সিকিউরিটিজ এবং ইউনিটি শেয়ার ট্রেড লিমিটেড। সিএসইতে দিনের পর দিন নিষ্ক্রিয় কিংবা নামমাত্র লেনদেন করে এমন ব্রোকারেজ হাউসগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরই মধ্যে তালিকা ধরে এসব নিষ্ক্রিয় ব্রোকারেজ হাউসের সঙ্গে কথা বলতে বলেছে সিএসইকে। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সময়ে হয়তো লাইসেন্স স্থগিত কিংবা বাতিলের মতো কঠোর সিদ্ধান্তেও আসতে পারে বিএসইসি। সিএসইর সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সিএসই সূত্র জানায়, সিএসইতে সর্বমোট সদস্যসংখ্যা ১৪৮। এর মধ্যে গড়ে সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৬০টি লেনদেনে সক্রিয় থাকে। অন্যগুলো অনেকাংশে নিষ্ক্রিয়। সদস্যদের এমন আশঙ্কাজনক স্থবিরতা প্রভাব ফেলছে পুঁজিবাজারে এক্সচেঞ্জটির দৈনন্দিন লেনদেনে। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) যেখানে সাম্প্রতিক সময়ে লেনদেন আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি টাকায় ওঠানামা করছে, সেখানে সিএসইতে তা শতকোটি টাকার নিচে সীমাবদ্ধ থাকছে।

২০১৯-২০ অর্থবছরে সিএসইর লেনদেন বিশ্লেষণে দেখা যায়, এক হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা লেনদেন করে সর্বোচ্চ লেনদেনকারী ছিল আইসিবি সিকিউরিটিজ। এর পরেই লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের লেনদেন ছিল এক হাজার ৫২ কোটি টাকা। তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে ছিল মাল্টি সিকিউরিটিজ ৮০১ কোটি ও ব্র্যাক ইপিএল স্টক ৬০৬ কোটি টাকা। অথচ এই সময়ে বিজনেস ক্যাপিটাল শেয়ারস, এনসি সিকিউরিটিজ, ফজলে সিকিউরিটিজ, এএম সিকিউরিটিজ, ওয়েসিস টার্নার লিমিটেড এবং ইউনিটি শেয়ার ট্রেড লিমিটেড কোনো লেনদেনই করেনি। এ ছাড়া পুরো অর্থবছরে নূরজাহান সিকিউরিটিজ মাত্র এক হাজার ৩৪০ টাকা এবং এক্সপ্রেস সিকিউরিটিজ এক হাজার ৪০০ টাকা লেনদেন করেছে।

সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরেও এই ব্রোকারেজ হাউসগুলোর লেনদেনের চিত্র প্রায় একই। বিজনেস ক্যাপিটাল শেয়ারস, এনসি সিকিউরিটিজ, ফজলে সিকিউরিটিজ, এএম সিকিউরিটিজ এবং ইউনিটি শেয়ার ট্রেড লিমিটেড গত অর্থবছরেও সিএসইতে কোনো লেনদেন করেনি। আর ওয়েসিস টার্নার লিমিটেড পুরো বছরে এক হাজার ৯৩৩ টাকা লেনদেন করে ‘শূন্য’ খাতা থেকে নাম কাটিয়েছে। এ ছাড়া এক্সপ্রেস সিকিউরিটিজ ও নূরজাহান সিকিউরিটিজ আগের অর্থবছরের মতোই পুরো বছরে যথাক্রমে তিন হাজার ৪৬০ এবং চার হাজার ৪০ টাকা লেনদেন করেছে।

অথচ এসব ব্রোকারেজ হাউস সিএসইর লেনদেনে কোনো অবদান না রেখেই বছর শেষে বিশাল অঙ্কের লভ্যাংশ পকেটে পুরছে। এই লভ্যাংশ পেতে আইনত বাধা না থাকলেও এটাকে বিবেকবর্জিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সিএসইতে লেনদেনে খরার সময়ও বিনিয়োগকারীরা এত লভ্যাংশ কিভাবে পান—এমন প্রশ্নও করেছেন অনেকে। সিএসইর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, মূলত এই লভ্যাংশ আসে এক্সচেঞ্জটির এফডিআর খাত থেকে। ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সিএসইর প্রায় ৫০০ কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে, যে কারণে সিএসইতে লেনদেন যা-ই হোক সদস্যদের লভ্যাংশ পেতে সমস্যা হয় না। কারণ বার্ষিক মুনাফার বড় অংশই আসে এফডিআর থেকে অর্জিত সুদ বাবদ।