একদিকে দ্রুত নির্বাচন ও ন্যূনতম সংস্কারের পক্ষে বিএনপি, অন্যদিকে মৌলিক কাঠামোগত পরিবর্তনের দাবিতে অনড় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে যখন বিএনপি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে, ঠিক সেদিনই এনসিপির তরফ থেকে জানানো হয়, ‘মৌলিক পরিবর্তন ছাড়া নির্বাচন হলে, তা গ্রহণযোগ্য হবে না’।
জুলাইয়ের গণ–অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের গঠিত এই দলটি বলছে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা এখন এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক, যেখানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে অসংগতিপূর্ণ ক্ষমতা কুক্ষিগত। এই ব্যবস্থার কারণেই শেখ হাসিনার সরকার ‘ফ্যাসিবাদী রূপ’ ধারণ করতে পেরেছে বলে এনসিপির অভিমত।
দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন,“ন্যূনতম সংস্কার বলে কিছু নেই। সংস্কার মানেই মৌলিক গুণগত পরিবর্তন। সবাইকে এ বিষয়ে একমত হতে হবে।”
এনসিপির শীর্ষ নেতারা মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর কিছু প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে:
- প্রধানমন্ত্রীর একই সঙ্গে দলীয় প্রধান ও সংসদ নেতা হওয়ার সুযোগ বাতিল
- প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সর্বোচ্চ দুবার দায়িত্ব পালনের সীমা
- রাষ্ট্রপতি, সরকারি-বিরোধী দল ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন
- দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠা: নিম্নকক্ষে সরাসরি ভোট, উচ্চকক্ষে আনুপাতিক ভিত্তিতে নির্বাচন
- সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কার
- বিএনপির অবস্থান: দ্রুত নির্বাচন, পরবর্তী সংস্কার
অন্যদিকে, বিএনপি চাইছে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন। দলটির মতে, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা নির্বাচিত সংসদে বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমেই হওয়া উচিত। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে বিএনপির নীতিগত সমর্থন থাকলেও তারা চায়—এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নির্বাচনের পরে নেওয়া হোক।
গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,“আমরা একেবারেই সন্তুষ্ট হতে পারিনি।”
ওই দিনই ঢাকায় সফররত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিক-এর সঙ্গে এনসিপির নেতারা বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, “কোনো মৌলিক পরিবর্তন ছাড়া নির্বাচন হলে সেটি গ্রহণযোগ্য হবে না। এমন নির্বাচনে এনসিপি অংশ নেবে কি না, তা বিবেচনার বিষয়।”
জেএস