চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে জীবাশ্ম জ্বালানি (অপরিশোধিত জ্বালানি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লা) উত্তোলন ব্যাপক হারে বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আগামী বছর উত্তোলন নতুন উচ্চতায় পৌঁছতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার কথা বললেও বাস্তবে ঘটছে তার উল্টো। অপরিচ্ছন্ন এসব জ্বালানি উত্তোলন ও ব্যবহার বাড়লে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে গৃহীত সব পরিকল্পনা বিফলে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সম্প্রতি মার্কিন এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ইআইএ) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, ২০২০ সালে বিশ্বে করোনা মহামারী আঘাত হানার পর যুক্তরাষ্ট্রে জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলন শ্লথ হয়ে পড়ে। তবে গত বছর টিকাদান কার্যক্রম বাড়ায় সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কমেছে। এ কারণে অর্থনীতিতে গতি ফিরেছে। ঊর্ধ্বমুখী চাহিদার কারণে বছরজুড়ে জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলন পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। উত্তোলনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৭ দশমিক ১৪ কোয়াড্রিলিয়ন এমএমবিটিইউ। সংস্থাটির প্রত্যাশা চলতি বছর উত্তোলন আরো বাড়বে। আগামী বছর যা মহামারীপূর্ব পর্যায়কে ছাড়িয়ে যাবে।
শর্ট টার্ম এনার্জি আউটলুক শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর মোট উত্তোলিত জীবাশ্ম জ্বালানির মধ্যে ৪৬ শতাংশই শুষ্ক প্রাকৃতিক গ্যাস। এছাড়া অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ৩০ শতাংশ ও ১৫ শতাংশ কয়লা উত্তোলন করা হয়। ৯ শতাংশ এসেছে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে। চলতি ও আগামী বছরও এসব পণ্যের বাজার হিস্যা ঊর্ধ্বমুখী থাকবে।
মাসভিত্তিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিদায়ী বছর শুষ্ক প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন আগের বছরের তুলনায় ২ শতাংশ বেড়েছে। ড্রিলিং সক্ষমতা বৃদ্ধি ও নতুন ক্ষেত্র থেকে উত্তোলনের কারণে ২০২২ ও ২০২৩ সালে জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন ৩ শতাংশ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন কিছুটা কমেছে। প্রাক্কলন অনুযায়ী, উত্তোলন কমার হার ১ শতাংশ। তবে চলতি বছর পণ্যটির উত্তোলন ৬ শতাংশ এবং আগামী বছর ৫ শতাংশ বাড়তে পারে। এ বছর আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকবে। এটি সক্রিয় ড্রিলিং রিগসগুলোকে উত্তোলন বাড়াতে উৎসাহিত করছে। অন্যদিকে ড্রিলিং সক্ষমতা বাড়ানোর প্রচেষ্টাও অব্যাহত আছে।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রাক্কলিত কয়লা উত্তোলন ৭ শতাংশ বেড়েছে। মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে প্রাকৃতিক গ্যাসের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে তুলনামূলক সাশ্রয়ী পণ্য হিসেবে কয়লার চাহিদা বেড়েছে। ফলে যেসব কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হতো, সেগুলোয় বিকল্প হিসেবে কয়লার ব্যবহার বেড়েছে।
তথ্য বলছে, ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কয়লা উত্তোলন ৫৬ বছরের সর্বনিম্নে নেমে গিয়েছিল। তবে চলতি বছর উত্তোলন ৬ শতাংশ বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছে ইআইএ। কারণ কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো জ্বালানি পণ্যটির মজুদ পরিপূর্ণ করার প্রয়াস চালাচ্ছে। তবে আগামী বছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার চাহিদা কমতে পারে। ফলে ওই বছর জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন বাড়ছে ১ শতাংশ।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে ন্যাচারাল গ্যাস প্লান্ট লিকুইডস উত্তোলন ৪ শতাংশ বেড়েছিল। চলতি বছর পণ্যটির উত্তোলন ৯ শতাংশ বাড়তে পারে। আগামী বছর বৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৪ শতাংশে।