ধসে পড়ল কুঞ্জভবন

রাজশাহী মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে অবস্থিত কুঞ্জভবনের ঝুলবারান্দা ধসে পড়েছে। ১৯৪৫ সালে জমিদার রায় বাহাদুর কুঞ্জ মোহন মৈত্রেয় দোতলা এ ভবন নির্মাণ করেছিলেন। এখন ভবনের নিচতলায় রাজশাহী প্রেস ক্লাব আর দোতলায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কার্যালয় রয়েছে।

মঙ্গলবার ভোর ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে বিকট শব্দে ভবনের সামনের অংশের ঝুলবারান্দা ধসে পড়ে। দুটি ইটের পিলারের ওপর দোতলা থেকে ছিল ওই ঝুলবারান্দা। এ ঘটনায় কেউ আহত হননি। সকালে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ভবনটি পরিদর্শন করে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে। ভবনের সামনে ‘বিপজ্জনক’ লেখা একটি ফেস্টুনও রাখা হয়েছে।

ভবনের দোতলায় ওয়ার্কার্স পার্টির কার্যালয়ে ছিলেন শহীদ জামিল ব্রিগেডের স্বেচ্ছাসেবক ইফতি হাসান ও অ্যাম্বুলেন্স চালক মেহেদী হাসান চয়ন। তারা জানান, সকালে হঠাৎ বিকট শব্দে তাদের ঘুম ভাঙে। তখন দেখেন, ভবনের সামনের ঝুলবারান্দা ধসে পড়েছে। এরপর তারা দ্রুত ভবন থেকে বের হয়ে আসেন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের রাজশাহী সদর স্টেশনের উপসহকারী পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, কাঠের পাটাতনের ওপর ইট এবং সুরকি দিয়ে ছাদ। ভবনটি আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। এটি আর ব্যবহার না করার জন্য আমরা বলে এসেছি। এখন প্রকৌশলীরা পরীক্ষা করে ব্যবস্থা নেবেন।

তিনি বলেন, সারাদিন ওই এলাকায় জনাকীর্ণ থাকে। দিনে বারান্দাটি ধসে পড়লে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটতো।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৯৪৫ সালে কুঞ্জভবনটি নির্মাণ করেন জমিদার রায় বাহাদুর কুঞ্জ মোহন মৈত্রেয়। পরবর্তীতে তিনি একজন বিহারীর কাছে ভবনটি বিক্রি করে দেন। ওই বিহারীর দুই ছেলে ছিলেন। পরবর্তীতে তারা দুজন এ সম্পত্তির মালিক হন। স্বাধীনতার পর একজনের আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। অন্যজনের জমিতে পাশে এখন একটি ভবন করা হয়েছে। আর যিনি লাপাত্তা, তার মালিকানায় থাকা ভবনটি পরবর্তীতে সরকারি সম্পদ হয়ে যায়। লিজ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ভবনটির নিচতলায় রাজশাহী প্রেস ক্লাব আছে। আর ২০০৩ সালের দিকে লিজ নিয়ে দোতলায় করা হয় ওয়ার্কার্স পার্টির কার্যালয়।

ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ প্রামাণিক দেবু বলেন, ভবন সংস্কার করবে রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-১। এজন্য জেলা প্রশাসকের অনুমতিও লাগে। ভবনটি সংস্কারের জন্য ১৫ দিন আগেও আমরা রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ রানাকে বলেছি। কিন্তু তিনি কোনো উদ্যোগই নেননি। এ দুর্ঘটনার জন্য গণপূর্ত বিভাগই দায়ী।

নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ রানা সম্প্রতি বদলি হয়ে গেছেন। সোমবার নতুন নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দিয়েছেন হারুন-অর-রশিদ। তিনি বলেন, আমি তো সবে এলাম। সবকিছু চিনি না, জানি না। এ ধরনের ভবন ধসে পড়েছে সেটাও প্রথম শুনলাম। আমি এখন লোক পাঠাব। তারপর এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।