ডিসেম্বরে সর্বোচ্চ পণ্য আমদানি

Dux - um importador e um exportador dando as mãos em um porto - GS2 MKT - Freepik

দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রভাবে পণ্য আমদানি ব্যবসায় ভাটা পড়ে। অন্তর্বর্তী সরকারের শুরুর কয়েক মাস রাজনৈতিক অস্থিরতায় ব্যবসা-বাণিজ্যেও ছিল মন্দাভাব। ঋণপত্র খোলার জটিলতা, ডলারের বাড়তি দাম ও ব্যাংকের দুরবস্থার কারণে নতুন আমদানিকারকদের নানান জটিলতা পোহাতে হয় এসব কারণে ডিসেম্বরে আমদানি কমতে পারে বলে শঙ্কায় ছিলেন ব্যবসায়ীরাও। তবে ব্যবসায়ীদের সেই শঙ্কা ভুল প্রমাণিত করে ডিসেম্বরে কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ পণ্য আমদানি হয়েছে।

এনবিআরের হিসাবে, ডিসেম্বরে মোট পণ্য আমদানি হয়েছে ১ কোটি ৩৪ লাখ টন। এই আমদানি গত ৩৩ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে সর্বোচ্চ পরিমাণ পণ্য আমদানির রেকর্ড হয়েছিল ২০২২ সালের মার্চে। ওই মাসে ১ কোটি ৪৪ লাখ টন পণ্য আমদানি হয়েছিল।

শুধু পরিমাণে নয়, শুল্কায়ন মূল্যের দিক থেকেও দেড় বছরের মধ্যে আমদানির রেকর্ড হয়েছে ডিসেম্বরে। ডিসেম্বরে দেশে আমদানি হওয়া সব ধরনের পণ্যের শুল্কায়ন মূল্য ছিল ৭৩৮ কোটি মার্কিন ডলার, যা ১৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে সর্বশেষ ২০২৩ সালের মে মাসে ৭৬৩ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল। পণ্যের দাম, পরিবহন ভাড়া ও বিমা খরচসহ পণ্যের দাম নির্ধারণ করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ, যা শুল্কায়ন মূল্য হিসেবে পরিচিত। শুল্কায়ন মূল্যের তুলনায় প্রকৃত আমদানি ব্যয় কম হয়।

এদিকে ডিসেম্বরের পণ্য আমদানির প্রবৃদ্ধির ওপর ভর করে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই–ডিসেম্বর) সার্বিকভাবে আমদানি বেড়েছে। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আমদানি হয়েছে ৬ কোটি ৮৫ লাখ টন পণ্য। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৬ কোটি ৫৮ লাখ টন। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে পরিমাণের দিক থেকে আমদানি বেড়েছে ৪ শতাংশ।

এনবিআরের হিসাবে, গত জুলাই-ডিসেম্বরে আমদানি পণ্যের শুল্কায়ন মূল্য ছিল ৩ হাজার ৯৪৯ কোটি ডলার। এক বছর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৬৯৮ কোটি ডলার। শুল্কায়ন মূল্যের দিক থেকে আমদানি বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় গত ডিসেম্বরে পরিমাণের দিক থেকে পণ্য আমদানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২৯ শতাংশ। এ সময়ে নিত্যপণ্য থেকে শুরু করে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে চাল আমদানি। গত ডিসেম্বরে ১ লাখ ৩৬ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে চাল আমদানি হয়নি।

আবার গত ডিসেম্বরে গম আমদানি হয়েছে ৭ লাখ ৪১ হাজার টন, যা ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় ৭৩ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া ভোজ্যতেল, পাম ও সয়াবিন আমদানি ৫৫ শতাংশ বেড়ে ২ লাখ ৪০ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে। চিনি আমদানি ২ শতাংশ বেড়ে ১ লাখ ৪ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে। পেঁয়াজ আমদানি বেড়েছে ২১৩ শতাংশ, ডিসেম্বরে আমদানি হয়েছে ৮২ হাজার টন। ডাল আমদানি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় সর্বশেষ ডিসেম্বরে ১৬৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯৫ হাজার টনে।

শিল্পের কাঁচামাল আমদানিও বেড়েছে। বস্ত্রশিল্পের কাঁচামাল তুলা আমদানি ৬ শতাংশ বেড়ে ১ লাখ ৩২ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে। সয়াবিন তেল ও প্রাণিখাদ্য তৈরির কাঁচামাল সয়াবিন বীজ আমদানি ৫৫ শতাংশ বেড়ে ২ লাখ ২২ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে। সিমেন্ট তৈরির প্রধান কাঁচামাল ক্লিংকার আমদানি ১৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৮৪ হাজার টনে।

এলপি গ্যাসের আমদানি ৫৪ শতাংশ বেড়ে ১ লাখ ৪৫ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে। নির্মাণ উপকরণ পাথর আমদানি ২১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ লাখ ৬৬ হাজার টনে। বেড়েছে কয়লা আমদানিও। ডিসেম্বর মাসে কয়লা আমদানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ লাখ টনে। পুরোনো জাহাজ আমদানিও ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় ২৫৮ শতাংশ বেড়েছে।

রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল আমদানিও বেড়েছে। রপ্তানিমুখী শিল্পের বন্ড সুবিধায় ডিসেম্বরে ২০৮ কোটি ডলারের ৫ লাখ ৫৭ হাজার টন কাঁচামাল আমদানি হয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ১৫১ কোটি ডলারের ৪ লাখ ৮ হাজার টন কাঁচামাল আমদানি হয়েছিল।

নিত্যপণ্যের কাঁচামাল ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো দেশে শিল্প খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাণিজ্যিক পণ্য আমদানি বৃদ্ধি পেলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ছে বলে ধরে নেওয়া হয়।