ডলারের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধিতে বিপাকে যশোরের আমদানিকারকরা

মুদ্রাস্ফীতিসহ নানা কারণে টাকার বিপরীতে ঊর্ধ্বমুখী ডলারের দাম। প্রতিদিনই স্থানীয় মুদ্রাবাজারে এ অবস্থার উত্থান-পতন চলছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমদানিকারকরা। সাধারণত একটি পণ্য চালান আমদানির পর ব্যবসায়ীরা তিন মাস সময় পেয়ে থাকেন এলসির টাকা পরিশোধের জন্য। বর্তমানে মুদ্রাবাজারের এমন অস্থিরতার কারণে যে দরে ডলার কিনে এলসি করছেন, পণ্য ছাড়করণের সময় তার চেয়ে বেশি দরে ডলারের দাম পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসেই দেশের আমদানি ব্যয় ৬ হাজার ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। শুধু বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২৯৫ টন পণ্য। রেকর্ড সৃষ্টি করা এ আমদানি ব্যয় চাপে ফেলেছে দেশের অর্থনীতিকে। এতে সারা দেশে ডলারের বাজার অস্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।

বেনাপোল বন্দর দিয়ে যেসব ব্যবসায়ী আমদানি বাণিজ্য করেন, তারা ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন। ২৫ হাজার ডলারের এলসির জন্য ব্যবসায়ীদের ডলারের দর দিতে হচ্ছে ৮৫ টাকা ৭৫ পয়সা, ৫০ হাজার ডলারের এলসি করলে প্রতি ডলার ৯৩ টাকা এবং তারচেয়ে বেশি ডলারের এলসির ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দর ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা পরিশোধ করতে হচ্ছে।

যশোরের মোটরসাইকেল পার্টস আমদানিকারক রিপন অটোসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এজাজ উদ্দিন টিপু বলেন, ডলারের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধিতে আমরা এলসি করতে পারছি না। একটি পণ্য চালান এলসি করার পর ৮০ দিন সময় পাওয়া যায় টাকা পরিশোধের। দেখা যায় টাকা পরিশোধের সময় ডলারের দাম আরো বেড়েছে। তখন সেই দামে টাকা দিতে গিয়ে লোকসানের শিকার হতে হবে। কেননা পণ্যের দাম আমরা ইচ্ছা করলেও বাড়াতে পারছি না। এভাবে ডলারের দাম বাড়তে থাকলে আমাদের মতো আমদানিকারকদের জন্য খারাপ সময় বয়ে আনবে।

ফারিয়া মোটরসের স্বত্বাধিকারী রেজোয়ান আহমদ মুরাদ জানান, এলসি করার পর ভারত থেকে পণ্য চালান আসতে দুই মাস পর্যন্ত সময় লেগে যায়। আবার ভারতের বনগাঁ কালীতলায় পার্কিংয়ের নামে গাড়ি আটকিয়ে রাখে এক মাস। তখন দেখা যায় ডলারের দাম আরো বেড়ে গেছে। এতে পণ্য বিক্রি করে লোকসান দিতে হবে।

ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের খুলনা-বরিশাল বিভাগের রিজিওনাল প্রধান ফকির আক্তারুল আলম জানান, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এলসির হার কমে গেছে। এতে আমদানিকারকদের পাশাপাশি ব্যাংকও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সামনে পরিস্থিতি খারাপ হলে ডলারের দাম আরো বাড়বে।

ইসলামী ব্যাংক যশোর জোন প্রধান শফিউল আজম বলেন, সব জায়গায় ডলারের সংকট পড়েছে। এতে খাদ্যপণ্য বাদে অন্য আমদানিকারকদের বেশি দামে ডলার কিনতে হবে। রূপালী ব্যাংক যশোরের ডিজিএম রোকনুজ্জামান বলেন, রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার কারণে ডলার সংকট বেশি হচ্ছে। যে কারণে অনেকে এলসি করা কমিয়ে দিয়েছেন। এখন যারা এলসি করবেন, তাদের বেশি দামে ডলার ক্রয় করতে হবে।

যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান জানান, সরকার ডলারের রিজার্ভ যাতে না কমে আসে, সেজন্য বিলাসপণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত করছে। তবে অন্যান্য পণ্য যারা আমদানি করবেন, তাদের বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে। আবার একটি পণ্য চালান দেশে আসতে কমপক্ষে তিন মাস সময় লেগে যায়, তখন দেখা যায় ডলারের রেট আরো বেড়েছে। সবদিক দিয়ে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এভাবে ডলার সংকট চলতে থাকলে আগামীতে ব্যবসায়ী বিশেষ করে আমদানিকারকদের পথে বসার উপক্রম হবে।