সোহেল হোসেন, লক্ষ্মীপুর :
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ৬নং লামচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহেনারা পারভীনের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে সরকারি ঘর ও মাতৃত্বকালীন ভাতা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দেড় বছর পরিষদের সদস্যদেরকে (মেম্বার) মাসিক সম্মানি দেওয়া হচ্ছে না। তাদের অভিযোগ, চেয়ারম্যান নিজের সম্মানি ঠিকই নিয়মিত উত্তোলন করছেন।
১৮ অক্টোবর সকালে ইউনিয়ন পরিষদের দুইজন সদস্য ও ভূক্তভোগী ৯ জনের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি তারা উপজেলা প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হটলাইনে অভিযোগ করেছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চেয়ারম্যান মাহেনারা পারভীন সরকারি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেওয়ার কথা বলে সেবা প্রত্যাশিদের কাছ থেকে ‘খরচাপাতির’ নামে টাকা আদায় করছেন। বিধবা-বয়স্ক ও মাতৃত্বকালীন ভাতা, বিনামূল্যের সরকারি ঘর দিতে সুবিধা ভোগীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে তার সমন্বয় নেই। কোন কাজেই সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন না। ছেলেদের সঙ্গে নিয়েই মনগড়াভাবেই তিনি পরিষদ চালাচ্ছেন। গেল বছর এ ইউনিয়নে ১০ টাকা মূল্যে চালের ৭০৫টি কার্ড বরাদ্দ হয়। সদস্যদের না জানিয়েই চেয়ারম্যান ১৯১টি কার্ড বাতিল করে দেন। বাকি কার্ডগুলো তিনি ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত করে নিয়ে অনুমোদন দেয়। বাতিল হওয়া কার্ডগুলোর সুবিধাভোগীরা এনিয়ে তখন ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে।
জানা গেছে, ইউনিয়নের উত্তর মজুপুর গ্রামের ভাঙারি ফেরিওয়ালা শহিদ উদ্দিনের ঘর সম্প্রতি ঝড়ে ভেঙে যায়। এতে চেয়ারম্যান পারভিনসহ স্থানীয় ইউপি সদস্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তখন তাকে সরকারি ঘর দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। এ প্রেক্ষিতে শহিদের কাছ থেকে চেয়ারম্যানের ছেলে টাইপুন ১২ হাজার টাকা নিয়েছে। আর ঘর নির্মাণের জন্য ইট-টিনসহ বিভিন্ন মালামাল আনতে শহিদকেই গাড়ি ভাড়া দিতে হয়েছে।
একই গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর শারিরীক প্রতিবন্ধী মোহাম্মদ আলীর কাছ থেকেও চেয়ারম্যান পুত্র সরকারি ঘর দিবে বলে ১২ হাজার টাকা নিয়েছে। তবে একটি টিনের ঘর নির্মাণ করে দিলেও মেঝেটা আলী নিজ খরচেই পাকা করতে হয়েছে।
পানপাড়া গ্রামের বাসিন্দা এমরান হোসেনের স্ত্রী আমেনা বেগমের কাছ থেকে মাতৃত্বকালীন ভাতা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান পারভিন নিজেই তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। প্রথমবার সাড়ে ৬ হাজার টাকা উত্তোলন করলে তার কাছ থেকে ১৫০০ টাকা, দ্বিতীয়বার ২৫০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা, ও তৃতীয়বার ৯০০০ টাকা, থেকে ২ হাজার টাকা নিয়ে গেছে চেয়ারম্যান। একই গ্রামের তাহমিনা আক্তার ভাতা বই করতে দেওয়ার ৬ মাসেও টাকা পায়নি। টাকার জন্য বিকাশ নম্বর ও ব্যাংক হিসেব নাম্বার দিলেও এখনো টাকার কোন খোঁজ নেই। তাহমিনার মতো দক্ষিণ হাজিপুর গ্রামের শারমিন আক্তারসহ আরও অনেকের সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে দেড় বছর ধরে সম্মানি পাচ্ছে না ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা। কিন্তু চেয়ারম্যান নিজের টাকা ঠিকই তিনি উত্তোলন করেন। এতে বেতন না পেয়ে সদস্যদেরা আর্থিক সংকটে রয়েছেন। পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মহসিন মিঝি বলেন, চেয়ারম্যানের কর্মকাণ্ড উদ্বেগজনক। বিভিন্ন ভাতার জন্য আমরা নাম দিলেও তা অন্তর্ভূক্ত করা হয় না। টাকার বিনিময়ে তিনি ইচ্ছেমতো পছন্দের লোকজনকে সুবিধা দেন। আমাদের কিছু না জানিয়েই তিনি খামখেয়ালিভাবে পরিষদ পরিচালনা করেন।
সোমবার সন্ধ্যা ৬ টা ২০ মিনিটে মুঠোফোনে ইউপি চেয়ারম্যান মাহেনারা পারভীন বলেন, করোনাকালীন ট্যাক্স উঠাতে না পারায় ইউপি সদস্যদের ভাতা দেওয়া যায়নি। সরকারি ঘর ও ভাতার ব্যাপারে টাকা নেওয়ার অভিযোগ সত্য নয় একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপ্তি চাকমা বলেন, অভিযোগটি এখনো আমার কাছে আসেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।