আন্তর্জাতিক বাজারে গতকাল কিছুটা কমেছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম। এ পরিস্থিতিতেও সদ্যবিদায়ী বছরে ১২ বছরের সর্বোচ্চ বার্ষিক ঊর্ধ্বমুখী ধারা অর্জন করেছে বিশ্ববাজারের নিত্যপ্রয়োজনীয় এ জ্বালানি পণ্যটি। কভিড-১৯ মহামারী উত্তর সময়ে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে পুনরুদ্ধার কার্যক্রম প্রত্যাশিত মাত্রা অর্জন করায় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দামে এমন ঊর্ধ্বমুখী ধারা অনুভব করা যায়। এমনকি বর্তমানে বিভিন্ন দেশে কভিডের নতুন সংক্রমণ ওমিক্রনের ঊর্ধ্বমুখী ধারা চলমান থাকার পরও বিশেষ কোনো প্রভাব পড়েনি। ২০২০ সালে মহামারীর চূড়ায় বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেল উত্তোলন ও রফতানি ব্যাপক হারে কমে এসেছিল। খবর রয়টার্স।
বছরের শেষ দিনে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজারআদর্শ ব্রেন্ট ক্রুডের ভবিষ্যৎ সরবরাহ মূল্য কমেছে প্রতি ব্যারেলে ৩ সেন্ট। ফলে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম দাঁড়ায় ৭৯ ডলার ৫০ সেন্ট। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের মার্কিন বাজারআদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমেডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুডের দাম প্রতি ব্যারেলে দশমিক ১ শতাংশ বা ১০ সেন্ট কমেছে। এ সময় প্রতি ব্যারেল ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম দাঁড়িয়েছে ৭৬ ডলার ৮৯ সেন্ট।
২০২০ সালের তুলনায় সদ্য সমাপ্ত বছরের শেষ নাগাদ ব্রেন্ট ক্রুডের দাম বেড়েছে ৫৩ শতাংশ, একই সময়ে ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম বেড়েছে ৫৮ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি পণ্যটির প্রধান দুই বাজারআদর্শে এ পরিমাণ মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা ২০০৯ সালের পর সবচেয়ে বেশি। ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি পণ্যটির দাম ৭০ শতাংশের বেশি বেড়েছিল। বিদায়ী বছরের অক্টোবরে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজারআদর্শ ব্রেন্ট ও মার্কিন বাজারআদর্শ ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম তাদের সর্বোচ্চ সূচক স্পর্শ করেছিল। উল্লিখিত মাসে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্টের দাম ছিল ৮৬ ডলার ৭০ সেন্ট ও প্রতি ব্যারেল ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ছিল ৮৫ ডলার ৪১ সেন্ট। অক্টোবরে বাজারআদর্শ দুটির মূল্য সূচক ব্রেন্ট ক্রুডের ক্ষেত্রে ২০১৮ সালের পর সর্বোচ্চ ও ডব্লিউটিআই ক্রুডের ক্ষেত্রে ২০১৪ সালের পর সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছিল।
বিশ্লেষকরা আশা করছেন, নতুন বছরে বিশ্বব্যাপী উড়োজাহাজের ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের চাহিদা আরো ঊর্ধ্বমুখী হবে। বিভিন্ন দেশে ওমিক্রন সংক্রমণ বাড়লেও কভিড টিকার বুস্টার ডোজ প্রয়োগের ফলে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ চাহিদা কভিডপূর্ব স্তরের কাছাকাছি পৌঁছবে।
অস্ট্রেলিয়ান ব্রোকারেজ ফার্ম কমসেকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ক্রেইগ জেমন জানান, বর্তমানে আমরা কভিড-১৯-এর ডেল্টা এবং ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টসহ বিভিন্ন স্তরের লকডাউন প্রত্যক্ষ করছি। একই সঙ্গে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন মাত্রার ভ্রমণ বিধিনিষেধও অনুভব করছি। তবে এ পরিস্থিতিতেও আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের চাহিদা বেশ দৃঢ়। চলমান পরিস্থিতির জন্য জ্বালানি পণ্যটির চাহিদা বৃদ্ধির উদ্দীপনা ও সরবরাহ শৃঙ্খলে সীমাবদ্ধতাকে দায়ী করা যেতে পারে।
বর্তমানে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম প্রায় ৮০ ডলার সমপরিমাণ। এমন পরিস্থিতিতেও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানিকারকদের সংগঠন ও তাদের অংশীদার দেশগুলো তাদের বিদ্যমান নীতিতে অটল থাকবে বলে জানা গেছে। অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ, রাশিয়া অ্যান্ড অ্যালাইস (ওপেক প্লাস) ফেব্রুয়ারিতে সরবরাহের জন্য বর্তমানে প্রতিদিন চার লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল উত্তোলন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বজায় রেখেছে। ৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় ওপেক প্লাসের বৈঠকে দেশগুলো এ নীতিতে অটল থাকবে বলে জানিয়েছে খাতসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।
ক্রেইগ জেমস জানান, বাজারের চাহিদার আলোকে পর্যাপ্ত পরিমাণ জ্বালানি তেল সরবরাহ করার জন্য ওপেক প্লাসকে বেশ চাপের মুখে থাকতে হবে।