জয়নালের ১০ এনআইডি, ঢাকায় সাততলা বাড়ি, উত্তরা-আশকোনায় ৯ ফ্ল্যাট

জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের দাবি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। ব্যাংক ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরির কাজে জড়িত ব্যক্তিদের যোগসাজশে ওই ব্যক্তি অন্তত ৩০ কোটি টাকা হাতিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ডিবির কর্মকর্তারা। একাধিক ব্যাংক থেকে জালিয়াতি করে ঋণ নেওয়ার কথা বলা হলেও কোন কোন ব্যাংক থেকে নেওয়া হয়েছে সেটা বলেননি তারা।

গ্রেপ্তার করা ওই ব্যক্তির নাম জয়নাল আবেদীন ওরফে ইদ্রিস। এসব টাকায় তিনি রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় একটি সাততলা বাড়ি, উত্তরা, আশকোনা এলাকায় প্রায় ৯টি ফ্ল্যাট ও মাদারীপুরে বাড়ি করেছেন বলে ডিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।

এর আগে গত শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় জয়নালের অফিস থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া অন্যরা হলেন নির্বাচন কমিশনের কর্মচারী পল্লব দাস (৩৬), রফিকুল ইসলাম খান (৩৮) ও আলিফ হোসেন (২০)।

ডিবি বলছে, জয়নালের কার্যকর ১০টি এনআইডি ছিল। এসব এনআইডি দিয়ে তিনি বিভিন্ন ব্যাংকে লোনের জন্য আবেদন করতেন। এনআইডির নাম ও ঠিকানা ঠিক থাকত, শুধু সেটির নম্বর পরিবর্তন করে তিনি আরেকটি তৈরি করতেন। এ ছাড়া একটি কোম্পানি খুলে সেখান থেকে আরও সাতটি কোম্পানির নামে কাগজপত্র তৈরি করে রেখেছিলেন। পরে সেগুলো দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ঋণ নিতেন জয়নাল। অন্যকেও ঋণ নিয়ে দিতেন। এর বিনিময়ে ওই লোকদের কাছ থেকে কমিশন নিতেন জয়নাল।

সাংবাদিকদের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, জয়নালের একসময় কিছুই ছিল না। তিনি ইমিটেশন পণ্যের দোকান করতেন। কিন্তু সেই ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় তিনি ব্যবসা ছাড়েন।

ডিবিপ্রধান বলেন, জয়নাল তার এনআইডির একই তথ্য দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন নামে আরও এনআইডি বানাতেন। এজন্য কোনোটাতে দাড়িসহ ছবি দিতেন। আবার কোনোটাতে গোঁফ, কোনোটা দাড়ি-গোঁফ ছাড়া। কোনোটা দুই বছর আগের আবার কোনোটা পরের। একই জমি, একই ফ্ল্যাট ও একই অফিস দেখিয়ে ব্যাংকে ঋণের জন্য আবেদন করতেন জয়নাল। কিছু ব্যাংক থেকে তিনি ঋণ নিয়েছিলেন আবার কিছু ব্যাংক থেকে তার ঋণ পেইন্ডিং অবস্থায় ছিল। এমন ঋণের পরিমাণ ৫০ কোটির টাকার কম নয়। তার এনআইডিগুলো তৈরি করে দিতেন পল্লব দাস।

ডিএমপির গোয়েন্দাপ্রধান হারুন জানান, পল্লব দাসের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে একাধিক এনআইডি তৈরি করেন জয়নাল। পল্লব দাস রংপুরে এনআইডি সার্ভারে আউট সোর্সিংয়ে ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের কাজ করেন। এসব ভুয়া এনআইডি দিয়ে তিনি বিভিন্ন ভুয়া নামজারি ও ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের সিল-স্বাক্ষর জালিয়াতি করে বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণের জন্য আবেদন করতেন। এ ছাড়া আয়করের ভুয়া কর্মকর্তাদের সিল-স্বাক্ষরে বিভিন্ন কাগজ তৈরি করে সেগুলো বিভিন্ন ব্যাংকে জমা দিতেন।

ডিবিপ্রধান বলেন, ‘আমরা জয়নালসহ পল্লব দাসকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করব। পল্লব দাস জয়নালের মতো আর কতজনকে এমন কার্যকর এনআইডি তৈরি করে দিয়েছেন। এ ছাড়া তারা আর কতটি ব্যাংক থেকে এমন ঋণ নিয়েছেন তা আমরা খতিয়ে দেখব।’

এন এস