ছয় দফা দাবিতে রোববার সারাদেশে মহাসমাবেশের ডাক কারিগরি ছাত্রদের

ছয় দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আগামীকাল রোববার সারাদেশের সব কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ। আজ শনিবার সকালে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

আজকের কর্মসূচির নাম ছিল ‘রাইজ ইন রেড’। কর্মসূচির অংশ হিসেবে আন্দোলনকারীরা ইনস্টিটিউটের মূল ফটকের নামফলক লাল কাপড়ে ঢেকে দেন—যা ছিল প্রতীকী প্রতিবাদ। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রতিবাদী স্লোগান দেন—
“মামা থেকে মাস্টার, মামাবাড়ির আবদার”,
“ষড়যন্ত্রের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও”,
“এক হও এক হও, পলিটেকনিক এক হও”

“কুমিল্লায় হামলা কেন, প্রশাসন জবাব দাও”।

চূড়ান্ত সময়সীমা ঘোষণা হবে রোববার

কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি মাসফিক ইসলাম বলেন,
“আমরা আর কোনো বৈঠকে যাচ্ছি না। কালকের মহাসমাবেশ থেকেই ছয় দফা দাবির বাস্তবায়নে চূড়ান্ত সময়সীমা ঘোষণা করা হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়ছি না।”

ছয় দফা দাবিসমূহ সংক্ষেপে:

১. জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০% কোটা বাতিল।
২. পদোন্নতির রায় বাতিল।
৩. ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন।
৪. মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের চাকরিচ্যুত করা।
৫. ২০২১ সালে নিয়োগপ্রাপ্তদের বিতর্কিত নিয়োগ বাতিল।
৬. নিয়োগবিধি সংশোধন।

আজকের কর্মসূচির পাশাপাশি আগারগাঁও মেট্রোস্টেশনের সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। তাঁরা একই দাবিতে স্লোগান দেন এবং মহাসমাবেশে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেন।

গত বুধবার থেকেই দেশের বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সড়ক, মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। এতে রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। পরে বৃহস্পতিবার রেল অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও, শিক্ষামন্ত্রণালয়ে বৈঠকের কারণে তা শিথিল করা হয়।

বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার ও সচিব খ ম কবিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন না, ফলে অতিরিক্ত সচিব রেহানা ইয়াছমিনের সঙ্গে আলোচনা হয়। তিন ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে কোনো সুস্পষ্ট সমাধান না আসায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দেশজুড়ে মশাল মিছিল, শুক্রবার জুমার পর কাফনের কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ মিছিল—সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এখন আরও সংগঠিত ও আগ্রাসী রূপ নিচ্ছে।

কারিগরি ছাত্রদের ছয় দফা আন্দোলন ধীরে ধীরে একটি জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হচ্ছে। আগামীকালকের মহাসমাবেশ কতটা প্রভাব ফেলবে, প্রশাসন ও সরকারের নীতিনির্ধারকরা সেই বার্তা কতটা আমলে নেবেন—তা সময়ই বলে দেবে।

জেএস