চাল আমদানির অনুমতি ১৭ লাখ টন, বাস্তবে এসেছে মাত্র ৫ লাখ ৪০ হাজার

সরকারের পক্ষ থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চাল আমদানির জন্য প্রায় ১৭ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হলেও বাস্তবে দেশে এসেছে মাত্র ৫ লাখ ৪০ হাজার টন। কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, আমদানিকারকদের অনাগ্রহ, ডলার সংকট এবং আন্তর্জাতিক বাজারে চালের মূল্যবৃদ্ধি এর পেছনে বড় কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বাস্তবতা দেশের খাদ্য নিরাপত্তার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে যখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা বা উৎপাদন ঘাটতির আশঙ্কা থাকে।

অনুমতির তুলনায় বাস্তবতা অনেক কম

২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে, খাদ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে মোট ১৭ লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন দেয়। উদ্দেশ্য ছিল অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের সরবরাহ নিশ্চিত রাখা এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা।

কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ৫ লাখ ৪০ হাজার টন চাল দেশে এসেছে। অর্থাৎ, প্রায় ১১ লাখ ৬০ হাজার টন চালের অনুমতি অকার্যকর রয়ে গেছে।

মূল কারণ ডলার সংকট ও মূল্যবৃদ্ধি

বেসরকারি আমদানিকারকরা জানাচ্ছেন, চাল আমদানিতে ব্যাংক থেকে এলসি (ঋণপত্র) খোলা কঠিন হয়ে পড়েছে। ডলার সংকটের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানই সময়মতো এলসি খুলতে পারেনি। সেইসঙ্গে ভারতসহ আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম বাড়ায় লাভজনকতা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

একজন আমদানিকারক বলেন, “আমরা চাল আমদানির অনুমতি পেয়েছি ঠিকই, কিন্তু ডলারের সংকটে এলসি খোলা যাচ্ছে না। আবার ভারতীয় বাজারে রফতানি মূল্যে শুল্ক ও রফতানি শর্ত কঠোর হওয়ায় আমাদের লোকসানে পড়তে হচ্ছে।”

চাল আমদানির হ্রাসে বাজারে প্রভাব

চাল আমদানি কমে যাওয়ার ফলে দেশের বাজারে চালের দামে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে সাধারণ মানের সিদ্ধ চাল ও আতপ চালের দামে সাম্প্রতিক সময়ে ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা গেছে। যদিও খাদ্য মন্ত্রণালয় দাবি করছে, সরকারি গুদামে পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে এবং পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে।

বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা

খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অনুমতি দিয়ে চুপ করে বসে থাকলে হবে না। বাস্তবায়ন না হলে অনুমতি কোনো কাজে আসে না।

বিশিষ্ট কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. আবদুল করিম বলেন, “অনুমতি একটি প্রশাসনিক প্রক্রিয়া মাত্র। কিন্তু বাস্তবায়ন না হলে বাজারে তার প্রভাব পড়ে না। সরকারের উচিত ছিল এলসি প্রক্রিয়া সহজ করা ও প্রয়োজনীয় ডলার বরাদ্দ নিশ্চিত করা।”

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। প্রয়োজনে আবার নতুন করে অনুমতি দেওয়া হবে বা সরকারি পর্যায় থেকে আমদানি বাড়ানো হবে।”

তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—যখন অনুমতি থাকলেও চাল আসে না, তখন সেটার পেছনে দায়ী কে? আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কারা?

জেএস