২০২১ সালজুড়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকায় ভোক্তা পর্যায়ে খাদ্যপণ্যের চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। কিন্তু সে তুলনায় সরবরাহ ছিল নিম্নমুখী। ফলে বছরের প্রথম দিকেই বাড়তে শুরু করে সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম। শেষ দিকে এসে যা এক দশকের সর্বোচ্চ পর্যায় অতিক্রম করে। মূল্যবৃদ্ধির এ ঊর্ধ্বগতিতে জ্বালানি জুগিয়েছে পাম অয়েল। নানামুখী প্রতিবন্ধকতার কারণে পণ্যটির দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। এদিকে চলতি বছরও আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েলের দাম বাড়তির দিকে থাকবে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ আশঙ্কার কথা জানিয়েছে কাউন্সিল অব পাম অয়েল প্রডিউসিং কান্ট্রিজ (সিপিওপিসি)।
কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, নভেল করোনাভাইরাস মহামারী দেখা দেয়ার পরই শীর্ষ পাম অয়েল উৎপাদন দেশগুলোয় শ্রমিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। এ সংকট কিছুটা শিথিল হলেও এখনো কাটেনি। এর মধ্যেই করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণপ্রবাহ আবারো পাম অয়েল খাতে শ্রমিক শূন্যতা তৈরি করতে পারে। বিষয়টি পাম অয়েল উৎপাদনে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া সারের ঊর্ধ্বমুখী দাম পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে। ২০১৮-২০১৯ সাল থেকে পাম অয়েল উৎপাদকরা সার ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছেন। এ কারণে এমনিতেই পণ্যটির উৎপাদনে মন্দাভাব বিরাজ করছে। চলতি বছরও নিম্নমুখী ব্যবহার উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। উৎপাদন কমতে থাকায় আমদানিকারক দেশগুলো সরবরাহ নিশ্চিতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে বেশি দামেই পণ্যটি কিনতে হচ্ছে তাদের।
সিপিওপিসি প্রতিবেদনে জানায়, গত বছরের মাঝামাঝি থেকে এখন পর্যন্ত নাইট্রোজেন ও ফসফেটের দাম বেড়েছে ৫০-৮০ শতাংশ। ফলে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলো অতিরিক্ত ব্যয় কমাতে উৎপাদন সীমিত করতে পারে। এছাড়া চলতি বছর সরবরাহজনিত সমস্যার কারণে পাম অয়েল খামারগুলো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
বৈশ্বিক পাম অয়েল উৎপাদনের ৮৫ শতাংশই আসে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে। কিন্তু চলতি বছর এসব প্রতিবন্ধকতার কারণে দেশ দুটির উৎপাদন প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে।
তথ্য বলছে, সংকুচিত সরবরাহের কারণে গত বছরই আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ অপরিশোধিত পাম অয়েলের ভবিষ্যৎ সরবরাহ মূল্য ৩১ শতাংশ বাড়ে। প্রতি টনের গড় মূল্য ১ হাজার ২৫২ ডলার ২৫ সেন্টে উন্নীত হয়েছে, যা রেকর্ড সর্বোচ্চ।
কাউন্সিলের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি ২০২১-২২ বিপণন মৌসুমে চীন ৭২ লাখ টন পাম অয়েল আমদানি করতে পারে। ২০২০-২১ মৌসুমে দেশটি ৬৮ লাখ টন আমদানি করেছিল। সে হিসাবে আমদানি বাড়বে চার লাখ টন। দ্বিতীয় শীর্ষ আমদানিকারক ভারত চলতি মৌসুমে আমদানি করতে পারে ৮৬ লাখ টন পাম অয়েল। আগের মৌসুমে আমদানির পরিমাণ ছিল ৮৫ লাখ টন। সে হিসাবে আমদানি বাড়বে এক লাখ টন। অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর সম্মিলিত আমদানির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৬৯ লাখ টনে। ২০২০-২১ বিপণন মৌসুমে এসব দেশ ৬২ লাখ টন পাম অয়েল আমদানি করেছিল।
এদিকে আমদানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখলেও ওমিক্রনের বিস্তারকেও গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে সিপিওপিসি। সংস্থাটির আশঙ্কা, ওমিক্রন বিস্তার আরো জোরালো হলে পাম অয়েলের বৈশ্বিক চাহিদা পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া আবারো ব্যাহত হতে পারে।