জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের আপিল বেঞ্চ পর্যবেক্ষণসহ এই আদেশ দেন।
পর্যবেক্ষণে আপিল বিভাগ বলেছেন, যদি আবেদনকারী প্রয়োজনীয় সম্মতি দেন, তাহলে মেডিকেল বোর্ড দ্রুত তার অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্টের জন্য পদক্ষেপ নেবে, যা বোর্ড সুপারিশ করেছে।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে খালেদার জামিন আবেদনের শুনানির শুরুতে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে আপিল বেঞ্চে বিএনপি চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্য প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম খালেদার স্বাস্থ্য প্রতিবেদনের সারমর্ম উপস্থাপন করেন।
এরপর শুনানিতে অংশ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবী ও দলটির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ‘মানবিক দিক’ বিবেচনা করে খালেদার জামিন আবেদন করেন। পরে ১১টার দিকে আধাঘণ্টার জন্য জামিন আবেদনের ওপর শুনানি মুলতবি ঘোষণা করা হয়।
আধাঘণ্টা বিরতির পর বেলা সাড়ে ১১টায় আবার শুরু হয় আপিল বেঞ্চের শুনানি। এসময় জয়নুল আবেদীন আবার শুনানিতে অংশ নিয়ে খালেদার পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
পরে সোয়া ১২টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষে শুনানিতে অংশ নিয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বক্তব্য উপস্থাপন করেন। শেষে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম খান আদালতে বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
বেলা ১টার দিকে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের আপিল বেঞ্চ এই আবেদনের শুনানি শেষ ঘোষণা করে আদেশের জন্য অপেক্ষমান রাখেন। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষ। কিছুক্ষণ পর বেঞ্চের মতামতের ভিত্তিতে পর্যবেক্ষণ করে রায় দেওয়া হবে।
পরে দুর্নীতির এই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিন আবেদন খারিজ করেন আপিল বেঞ্চ।
জামিন আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর সাংবাদিকদের কাছে খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বিষয়টিকে ‘নজিরবিহীন’ বলে মন্তব্য করেন। আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, আদেশ যুক্তিযুক্ত। আর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানান, খালেদা জিয়া রাজি থাকলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এর আগে বুধবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ খালেদার সর্বশেষ স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন উচ্চ আদালতের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে দাখিল করে।
খালেদা জিয়ার জামিন আবদেনের শুনানি ঘিরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই আদালতপাড়ায় কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। আদালতে প্রবেশেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। আর্চওয়ে ও মেটাল ডিরেক্টর দিয়ে তল্লাশির পর আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী, সাংবাদিকসহ সংশ্নিষ্টদের আদালতে প্রবেশ করানো হয়।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের পর গত ২৮ নভেম্বর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ খালেদা জিয়ার সর্বশেষ স্বাস্থ্যগত অবস্থার মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই দিন প্রতিবেদন দাখিল না করায় শুনানিকে কেন্দ্র করে প্রধান বিচারপতির আদালতে প্রায় তিন ঘণ্টা ‘নজিরবিহীন’ হট্টগোল হয়।
ওইদিনের শুনানিতে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বেঞ্চ ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে খালেদার স্বাস্থ্য প্রতিবেদনে জমা দিয়ে ১২ ডিসেম্বর পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ঠিক করেন।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত বছরের ২৯ অক্টোবর বিচারিক আদালতে সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। এ রায়ের বিরুদ্ধে গত ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টে আপিল করেন তিনি। সর্বশেষ গত ৩১ জুলাই তার জামিন আবেদন খারিজ করেন হাইকোর্ট। পরে আপিল বিভাগে যান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।
এছাড়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত খালেদা জিয়াকে জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেন। পরে ওই বছরের ৩০ অক্টোবর খালেদার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের দিন নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। দুই দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া গত ১ এপ্রিল থেকে অসুস্থ অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন।