জনপ্রিয়তায় এপার-ওপারের বর্ডার আগেই ভেঙেছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। এপারে তাঁর নিত্য আসা-যাওয়া। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় নির্মিত ফটো স্টোরি ‘বনের দীঘি’র জন্য গত সপ্তাহে বাংলাদেশে এসেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় এই অভিনেতা-পরিচালক। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন হৃদয় সাহা।
বাংলাদেশের শিল্পীরা পশ্চিমবঙ্গে কাজ করে পুরস্কৃত হচ্ছেন, সেই দেশের শিল্পী হিসেবে আপনার কেমন অনুভূতি হয়?
খুবই ভালো লাগে, জয়া তো একেবারে আমার পাশেই থাকে। ও দারুণ দারুণ প্রজেক্টে অভিনয় করছে। চঞ্চলদা ‘পদাতিক’-এ মৃণাল সেন হলো। ফারিণ, সোহেলরা এবার ফিল্মফেয়ার পেয়েছে।
তাদের কাজ বা পুরস্কারপ্রাপ্তি বুঝিয়ে দেয় কাঁটাতারের সীমানা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। আমাদের শিল্পীরা যদি এখানে এসে ভালো ভালো কাজ করে, আমাদেরও প্রত্যাশা থাকবে তাদেরও যেন এই দেশ থেকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের প্রতি আপনার বিশেষ ভালো লাগা জড়িয়ে আছে, এটা আমরা জানি। কাজের সূত্রে তো বটেই, আপনার আত্মীয়-স্বজনও রয়েছে এই দেশে।
এবারের আগমনের হেতু কী?
এবার এসেছি পুরো ভিন্ন এক কাজ নিয়ে। এটা সিনেমা নয়, এখানে ফটোর মাধ্যমে গল্প বলা হবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি উপন্যাসকে ফটোগ্রাফির মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। ফটো স্টোরি ‘বনের দীঘি’, এখানে নায়ক চরিত্রটা আমি করছি।
ফটো স্টোরির মতো নতুন এই কনসেপ্ট সম্পর্কে আপনার ধারণা কেমন? এই কাজ করতে আগ্রহী হলেনই বা কেন? এটা আমার জন্য একেবারেই নতুন। এর আগে এইভাবে কাজ করা হয়নি। এই ফটো স্টোরির আলোকচিত্রী ফওজিয়া জাহান যখন আমাকে বিস্তারিত বলেন, তখনই আমাকে আগ্রহী করে তোলে। নতুন এই অভিজ্ঞতা নিতে রাজি হয়ে যাই। পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি নিয়ে কাজ, তাই আলাদা আকর্ষণ কাজ করেছে। এই উপন্যাসে আমার নায়িকা হবেন শ্রেয়া সেন, পেশায় একজন চিকিৎসক। আমার সঙ্গে আজই [সোমবার] সরাসরি তাঁর প্রথম দেখা হলো। মনে হয়েছে, তিনি বেশ সাহিত্যানুরাগী, তিনি চরিত্রকে ধারণ করতে পারবেন। মুক্তি পাবে আসছে ২৫ বৈশাখ, রবীন্দ্রনাথের জন্মজয়ন্তীতে।
পশ্চিমবঙ্গের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি এখন কোন পথে এগোচ্ছে?
একটি সন্ধিক্ষণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সিনেমা হিট হচ্ছে না, তা বলব না। কিন্তু মূলস্রোতের সিনেমা হিট হচ্ছে না। নিরীক্ষাধর্মী ছবি হবে, সেগুলো একটা ইন্ডাস্ট্রিকে পূর্ণতা দেবে। কিন্তু সচল রাখতে বাণিজ্যিক ছবি হিট হওয়া খুবই জরুরি।
আপনার অভিনীত বা পরিচালিত-প্রযোজিত সাম্প্রতিক ছবিগুলো কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পায়নি…
কভিড অতিমারির পর সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে একটা গুমট ভাব চলছিল, কে কী করবে, কিভাবে ছবি হিট করবে তা নিয়ে দিশাহীন ছিল। তখন আমরা সবাই মিলে কিছু ছবি করার সিদ্ধান্ত নিই। ওই ছবিগুলোর মধ্যে সব সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না, এটা সত্য। তবে ২০২২ সালের পর আমার নিজের প্রযোজিত ছবি বাদে অন্য কোনো বাংলা ছবি করিনি। হিন্দি সিরিজ-ছবি করেছি, যেগুলো সামনে মুক্তি পাবে। তবে বাংলা ছবিতে অভিনয়ের ব্যাপারে আরো সতর্ক হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাই।
পরিচালনায়ই এখন বেশি সময় দিচ্ছেন…
হ্যাঁ, আমার পরিচালিত ‘হাওয়া বদল’-এর সিক্যুয়াল নির্মাণ করেছি। গ্রীষ্মে মুক্তি পাবে ‘এ রাত তোমার আমার’, যে ছবিতে অঞ্জন দত্ত ও অপর্ণা সেন অভিনয় করেছে। ছবিটা নিয়ে খুবই আশাবাদী, আমার ক্যারিয়ারে খুব বিশেষ একটি ছবি। অভিনয়েও আছি, ‘যকের ধন’-এর তৃতীয় কিস্তি সামনে আসবে। পরিচালনা উপভোগ করি, তবে দর্শক তো চেনে অভিনেতা হিসেবেই।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবাদে বোঝা যায়, পশ্চিমবঙ্গের দর্শক বাংলাদেশের কনটেন্ট ভীষণভাবে পছন্দ করছে। অভিনয়শিল্পী বা পরিচালকরা কিভাবে দেখেন এ বিষয়টি?
দেখুন, বাংলাদেশের টিভিনাটকের কদর প্রথম থেকেই ছিল। এখন তো ইউটিউবে দেখা আরো সহজ। তবে গত দু-তিন বছরে সিনেমা, সিরিজের খুব জনপ্রিয়তা বেড়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে বিজ্ঞাপনজগৎ থেকে আসা কিছু তরুণ মুখ গল্পকে খুবই সাবলীলভাবে তুলে ধরছে, বিশেষ করে ওটিটিতে। গল্পগুলো ভীষণ মৌলিক, সবাই পছন্দ করছে। এখন পশ্চিমবঙ্গের শিল্পীরা স্বীকার করুক বা অস্বীকার করুক তাতে কিছু আসে না, এই ব্যাপারটা সত্য।
দুই বাংলার শিল্পীদের আসা-যাওয়া বেড়েছে, আবার কি যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণ শুরু করা যায়?
আসলে যৌথ প্রযোজনা কিছু সরকারি কাগজপত্রের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখান থেকে বেরিয়ে এই মুহূর্তে কাজ হওয়াটা কঠিন। আমি চাইব হোক, তবে সেটা যেন প্রপারলি হয়। আগেরবার খুব বাজে জায়গায় চলে গিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজকদেরও এই দেশের চাহিদা বুঝতে হবে। যৌথ প্রযোজনায় শৈল্পিক ধারাটা যেন থাকে, এটা নষ্ট না হোক।
মাসখানেক আগেও একবার ঢাকায় এসেছিলেন। বাংলাদেশের নতুন কোনো কনটেন্টে আপনাকে পাওয়া যাবে?
এখানে আমি প্রথম করি ‘ভয়ংকর সুন্দর’, তবে আগে মুক্তি পায় ‘ভুবন মাঝি’। ‘শনিবার বিকেল’ তো বাংলাদেশে মুক্তি পেল না। যৌথ প্রযোজনায় আমার পরিচালনায় ‘ফেলুদা’ করেছি। এ বছরই ‘আজব কারখানা’ মুক্তি পাবে বলে শুনেছি। ওটিটি তো আমাদের দুই বাংলার কাজ আরো সহজ করে দিয়েছে, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে করতে পারি, এখনো ফাইনাল হয়নি।
নিজের পছন্দের পাঁচটি ছবি বাছতে বললে কোনগুলো রাখবেন?
অভিনেতা হিসেবে এমন কিছু ছবির নাম বলব, সেই অর্থে অতটা জনপ্রিয়তা পায়নি, তবে আমার খুব পছন্দের—‘চতুষ্কোণ’, ‘হারকিউলিস’, ‘কালের রাখাল’, ‘কালবেলা’ ও ‘সিনেমাওয়ালা’। পরিচালক হিসেবে ‘অভিযান’ ছবিটা আমার কাছে চ্যালেঞ্জের ছিল।
‘চাহিদাসম্পন্ন চিরকুমার’ থেকে বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করলেন, কেমন উপভোগ করছেন?
ভালোভাবেই উপভোগ করছি। আমার আর পিয়ার ব্যস্ততার মধ্যেও দুজন দুজনকে সময় দিচ্ছি। বিয়ের আগের জীবন এক রকমভাবে কাটে, পরে পুরো ভিন্ন। তবে বিয়ে করলে সবার একটু দেখেশুনেই করা উচিত।
এন এস