ইভ্যালিসহ বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ২১৪ কোটি টাকা আটকে আছে পেমেন্ট গেটওয়েতে। এই টাকা আগামী তিন মাসের মধ্যে ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে বলে জানান তিনি। গতকাল সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহেমদ পলক, এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিমউদদীনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে নিবন্ধনের জন্য ইউনিক আইডি, সেন্ট্রাল লগ ইন ট্র্যাকিং সিস্টেম, কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু এবং ১ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত এসক্রো সার্ভিসে আটকে পড়া টাকা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে এই কাজ সম্পন্ন হবে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এবিষয়ক সফটওয়্যার বিষয়ে আইসিটি বিভাগ তথ্য জানাবে।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন না করলে ব্যবসা থেকে ‘আউট’ হয়ে যাবে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ইউনিক বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর সব ব্যবসায়ীকে দেওয়া হবে। আইসিটি বিভাগ এসব করে দিলে তা বাস্তবায়ন করা হবে। যারা নিবন্ধন করবে না, তারা ব্যবসা থেকে আউট হয়ে যাবে। এ নিবন্ধন করতে কোনো খরচ নেই। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আইনগতভাবে চেক করার জন্য সেন্ট্রাল লজিস্টিক ট্র্যাকিং প্ল্যাটফর্মের (সিএলটিপি) ব্যবস্থা করতে হবে। সেন্ট্রাল ম্যানেজমেন্ট কমপ্লেইন সিস্টেম, কোথাও কারো অভিযোগ থাকলে এখানে আসবে। আইসিটি বিভাগ আগামী তিন মাসের মধ্যে এসব করে দেবে। আগামী দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে তারা ফলোআপ দেবে। এসক্রো সার্ভিস অটোমেটেড হবে।
ইভ্যালি ছাড়াও আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তাদের নিয়ে ভাবনা কী, সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, একটি নির্দেশনা এসেছে ইভ্যালির ব্যাপারে। এটি একটি গাইডলাইন, এটি দিয়ে আমরা শুরু করতে পারি।
যুবক ও ডেসটিনির গ্রাহকদের টাকা ফেরত পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুবক ও ডেসটিনির স্থাবর সম্পত্তি আছে, সে সম্পত্তি তারা নিয়ে যেতে পারেনি। কিছু ক্যাশ তারা নিয়ে গেছে। আইনি প্রক্রিয়ায় সে সম্পত্তি রিলিজ করা গেলে, সেটার দাম পাওয়া গেলে, আদালত নির্দেশ দিলে দেওয়া যেতে পারে। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের অনেক প্রপার্টি বেদখল হয়ে আছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘টাকা ফেরতের বিষয়টি একটি বড় ইস্যু হয়ে গেছে। এটার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি দেখবে। নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সত্যিকার অর্থে জুলাই মাস থেকে যাদের টাকা আটকে আছে, সেগুলো যেন তাদের কাছে ফেরত যায়। এ বিষয়ে যেসব আইনি জটিলতা আছে, সেগুলো নিয়ে আমরা কথা বলেছি। ব্যবস্থা নিচ্ছি, একটু সময় লাগবে। জুলাই থেকে পেমেন্ট দিয়ে যারা বিভিন্ন কারণে ফেরত পায়নি, সেটা ক্লিয়ার করে তারা যেন পায়, সে লক্ষ্যে কাজ চলছে।’ তিনি জানান, মন্ত্রিসভা থেকে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে, তারাও কাজ করছে।
বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি বলেন, ‘গত ৩০ জুন এসক্রো সার্ভিসের নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। ১ জুলাই থেকে যেসব ট্রানজেকশন হয়েছে, সে ট্রানজেকশনের বিপরীতে টাকাগুলো ব্লক করা আছে। যেটা ডেলিভারি হয়নি, সে টাকাটা পেমেন্ট গেটওয়ের কাছে আছে। সুতরাং সে ক্ষেত্রে কাস্টমার ও টাকার পরিমাণ আইডেন্টিফায়েড। সেগুলো আমরা আইনি জটিলতা কাটিয়ে ফেরতের ব্যবস্থা করব।’ এ প্রতিনিধি আরো জানান, যেটা এসক্রো অ্যাকাউন্টে আছে, সেটা দেওয়া হবে। যে টাকা ই-কমার্স কম্পানি নিয়েছে, সেটা তো বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে নেই, সেটা তো দিতে পারবে না।
ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা বোর্ডের প্রথম সভা আজ
এদিকে ইভ্যালির ব্যবস্থাপনার জন্য গঠিত নতুন বোর্ডের প্রথম সভা আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। সভায় বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। বোর্ডের একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইভ্যালির বর্তমান অবস্থা, দায়দেনা, সম্পদের পরিমাণ, পরিচালনার প্রক্রিয়া, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে সভায় প্রাথমিক আলোচনা হবে। জানতে চাইলে বোর্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন বলেন, মঙ্গলবার সকাল ১১টায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সভা হবে। এখানে নতুন বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন। এটি প্রথম সভা। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কিভাবে কাজ করবে, সে বিষয়ে আলোচনা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বোর্ডের আরেক সদস্য জানান, তাঁকে ফোনে মঙ্গলবারের মিটিংয়ের বিষয়ে জানানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি কিভাবে পরিচালনা করা যায়, ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা কী হবে—এসব বিষয়ে আলোচনা হবে।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু প্রতিষ্ঠানটি অনেক সাধারণ মানুষের স্বার্থসংশ্লিষ্ট; তাই আমরা চাইব কিভাবে এটি বাঁচানো যায়। এটি বোর্ডের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। জানা গেছে, ইভ্যালি নিয়ে কারাগারে থাকা সিইও রাসেলের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা করা যায় কি না, এতে কোনো আইনি বাধা আছে কি না—এসব বিষয়ে সার্বিক আলোচনা করবে বোর্ড।’