ইসলামী আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি

 

আবুল কালাম আজাদ

কোন প্রলেটারিয়েত সদস্যকে জেল, জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন আর হত্যার মতো ঘটনায়ও যখন সমাজতন্ত্রের পথ থেকে সরানো না যায় তাহলে পুঁজিবাদী আর সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠি তাকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী করে তোলার পরিকল্পনা নেয়। এবং এ পরিকল্পনা তারা সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে।

সমাজতন্ত্রের পতনের পর ইহুদীবাদ, সাম্রাজ্যবাদী, জাতীয়তাবাদী আর ব্যাক্তিসাতন্ত্রবাদী(personallism) গোষ্ঠি ইসলাম তথা ইসলামী আন্দোলনকে টার্গেট করেছে। কৌশল হিসেবে দু’টি দৃস্টিভংগি ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের মনে ঢুকিয়েছে এবং তারা সফলতার দিকে দ্রুত এগুচ্ছে।

১। সমাজতন্ত্রের বিপ্লবী কর্মীর মতো আর্থিক সচ্ছলতা আনয়ন।

২।রাস্ট্র ক্ষমতায় যাওয়া অর্থাৎ রাজনৈতিক তৎতপরতা জোরদার করা।

বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপি ইসলামী আন্দোলনের কর্মীগন আন্দোলনের চাইতে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবার তৎপরতায় অধিকতর ব্যাস্ত থাকে। যুক্তি হচ্ছে সফল আন্দোলনের জন্য আর্থিক সচ্ছলতা প্রয়োজন।তারা সংগঠনে অনুদান দিয়েই সন্তুষ্ট থাকে এবং মাঠে-ময়দানের কর্মীদের বোকা মনে করে বড় বড় পরামর্শ দিতে থাকে আর সফল্য-ব্যর্থতার পোষ্টমার্টম করে।

ইদানীং ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের মাঋে একটা বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। দ্বীনি কর্মী আর সাংগঠনিক বা রাজনৈতিক কর্মী।

যেসব কর্মী আল্লাহ, রাসুল, কোরআন, হাদীস, ইসলামী সাহিত্য, দ্বীন আর ইসলামী আন্দোলন বুঝার পর সংগঠনে যোগদান করেছে, তারা দ্বীনি কর্মী। আল্লাহর সনতুস্টি অর্জনই তাদের লক্ষ্য থাকে। রাজনৈতিক সাফল্য-ব্যর্থতা তাদেরকে আন্দোলিত করেনা। পরকালীন সাফল্য-ব্যর্থতাই তাদের টার্গেট থাকে। এ জাতীয় নেতা-কর্মীদের কারনেই যুগে যুগে ইসলামী আন্দোলন টিকে ছিলো এবং এগিয়েছে।

যেসব কর্মী সরাসরি সংগঠনের দাওয়াতে এসেছে, সংক্ষিপ্ত সিলেবাস অধ্যয়ন করে দায়িত্বশীল হয়ে গেছে, তারা সাংগঠনিক তথা রাজনৈতিক কর্মী ও নেতা। এ শ্রেনীর নেতা-কর্মীদের চিন্তা-চেতনায় দ্বীনের পরিবর্তে রাজনৈতিক কর্মসূচী বিরাজমান থাকে। রাজনৈতিক সাফল্য-ব্যর্থতা তাদেরকে আন্দোলিত করে। দলের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করার কোশেস খোঁজে, দায়িত্বশীল হতে চায়, নেতা হবার খায়েশ থাকে, প্রয়োজনে মিথ্যা প্রতিবেদন তৈরী করে, দায়ত্বশীল বা নেতা হবার জন্য হঠকারী পলিসি গ্রহন করে, নীতি-নৈতিকতার ধার-ধারেনা। দলের মধ্যে কোঠারী গ্রুপ তৈরী করে,আভ্যন্তরিন রাজনীতি শুরু করে, তার চাইতে যোগ্য কাউকে বরদাস্ত করেনা। তাদের দ্বীনি অনুভূতি থাকেনা, মুখলেসিয়াত থাকেনা। উর্ধতন দায়িত্বশীলকে খুশি করতে ব্যস্ত থাকে, আল্লাহকে নারাজ করে হলেও।

ইসলামী আন্দোলন আল্লাহ কতৃক দেয়া বিধান আর নবী-রাসুলদের দেখানো পথেই হতে হবে। আল্লাহ প্রদত্ব আর রাসুল(সা:)এর দেখানো পথ যা কোরআন-হাদীসে বর্নীত এবং যুগে যুগে মুজাদ্দেদদের রেখে যাওয়া সাহিত্যই হতে হবে ইসলামী আন্দোলনের পাথেয়। দাওয়াত, সংগঠন আর প্রশিক্ষনই হচ্ছে ইসলামী আন্দোলনের স্হায়ী কর্মসূচী। পাশাপাশি সামর্থ অনুযায়ী সামাজিক কার্যক্রম হাতে নেয়া। প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল তৈরী আর জন-সমর্থন উল্লখযোগ্য পর্যায়ে পৌঁছলে এবং দেশের জনগন চাইলেই রাজনৈতিক কর্মসূচী গ্রহন করা।

সংগঠন যখন প্রথম তিনদফা কর্মসূচীর পরিবর্তে রাজনৈতিক কর্মসূচীর দিকে নজর দেয় এবং দ্বীনের পরিবর্তে সংগঠনের বা দলের দাওয়াত বৃদ্ধি পায় তখন সাংগঠনিক বা রাজনৈতিক কর্মী তৈরী হয়। রাজনৈতিক কর্মী দ্বারা রাজনৈতিক কাজ চলে ইসলামী আন্দোলন হয়না। দ্বীনি কর্মীদের দ্বারাই দ্বীনি আন্দোলন সম্ভব ।

ষঢযন্ত্রকারীগের পাতা ফাঁদে পা দেয়া নেতৃত্ব ও জনশক্তি সংগঠনকে বিপদগামী করবে, যা বাতিল সরাসরি করতে পারবেনা। দ্বীনি অনুভূতির চাইতে রাজনৈতিক ভাবাপন্ন নেতৃত্ব প্রবনতা প্রতিয়মান হচ্ছে।ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে উপলব্দি করার তৌফিক দিন।

– Assistant Managing Director, Admin, Establishment & Company Secretary

Takaful Islami Insurance Ltd.