একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে চলমান সংলাপে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ আইন প্রণয়নসহ পাঁচটি এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ) তিনটি প্রস্তাবনা দিয়েছে।
চলমান আলোচনার ১৪তম দিনে মঙ্গলবার ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আল্লামা সৈয়দ মোহাম্মদ বাহাদুর শাহ মুজাদ্দেদী ও মহাসচিব অধ্যক্ষ আ ব ম জয়নুল আবেদীন জুবাইরের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এবং বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গনির নেতৃত্বে আট সদস্যের আরেকটি প্রতিনিধি দল বঙ্গভবনের দরবার হলে আলাদাভাবে সংলাপে অংশ নেয়।
বৈঠকের পর রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বাসসকে বলেন, দুই দল সংবিধান অনুযায়ী সময়োপযোগী আইন প্রণয়ন ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের প্রস্তাব দেন। তারা বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে জনমতের প্রতিফলন ঘটে। তাই সংবিধান মোতাবেক একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, স্বয়ংসম্পন্ন ইসি গঠনের প্রস্তাব করেন। এ ছাড়া নির্বাচনের সার্বিক কর্মকাণ্ড সরকারি প্রভাবমুক্ত রাখারও প্রস্তাব করে দল দুটি।
ইসলামী ফ্রন্ট নির্বাচন কমিশনের সব নির্দেশনা রেডিও টেলিভিশনসহ সব গণমাধ্যমে প্রচার বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করেন। তারা সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে নির্বাহী শাখার সহযোগিতায় ইসি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলেও প্রস্তাব করেন।
প্রেস সচিব জানান, বাংলাদেশ ন্যাপের প্রতিনিধি দল আধুনিক নির্বাচন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি (ইএমএস) গ্রহণ করার প্রস্তাব করেছেন।
প্রতিনিধিরা প্রতিটি নির্বাচনী কেন্দ্রে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে ভোটগ্রহণের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার (যেমন- পিপল কাউন্টিং মেশিন, সিসিটিভি বা আইপি ক্যামেরা, রেকর্ডিং লাইভ স্ট্রিমিং প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা) বিষয়টি নিশ্চিত করার প্রস্তাব করেন। তারা বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছাড়া অর্থবহ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাহী বিভাগসহ দল-মত নির্বিশেষে সবার সহযোগিতা একান্ত অপরিহার্য। রাষ্ট্রপতি বলেন, এ ছাড়া এক্ষেত্রে জনগণের মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে।
রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এসএম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন ও সচিব (সংযুক্তি) মো. ওয়াহিদুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
আবেদীন বলেন, রাষ্ট্রপতি একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য ইসি গঠনের বিষয়ে সংলাপের জন্য ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ ৩২টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলমান সংলাপের প্রথম দিন গত ২০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপ করেন তিনি।
বঙ্গভবন সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল বুধবার বিকাল ৪টায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি এবং সন্ধ্যা ৬টায় ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) সঙ্গে পরবর্তী সংলাপ হওয়ার কথা রয়েছে।
১৩ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় জাকের পার্টি, সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি এবং রাত ৮টায় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) সঙ্গে সংলাপ হওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে আগামী ১৭ জানুয়ারি সোমবার বিকাল ৪টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সংলাপের কথা রয়েছে।
এর আগে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপতিকে সিইসি এবং চারজনের বেশি নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। গত কয়েক মেয়াদে সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন।
বর্তমান ইসির পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। এই সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপতি একটি নতুন ইসি গঠন করবেন, যার অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।