আয় বেড়েছে সাধারণ বীমায়

বাংলাদেশ থেকে ইউএস-বাংলার একটি বিমান (ফ্লাইট নম্বর ২১১) ২০১৮ সালের ১২ মার্চ নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে যাত্রা করেছিল। বিমানটি অবতরণ করার সময় দুর্ঘটনায় পড়ে। দুর্ঘটনায় ৫১ জন যাত্রী ও ক্রু নিহত হন এবং ২০ জন প্রাণে বেঁচে যান।

ইউএস-বাংলার সেই বিমানটি সাধারণ বীমার আওতায় ছিল। ফলে দুর্ঘটনার পরবর্তী সময়ে এয়ারলাইনসটি ক্ষতিপূরণ পায়। এয়ারলাইনসের বীমাকারী প্রতিষ্ঠান ছিল সেনা কল্যাণ ইনস্যুরেন্স কম্পানি লিমিটেড। দুর্ঘটনার এক মাসের মধ্যে ইউএস-বাংলাকে ৭০ লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ দেয় সেনা কল্যাণ ইনস্যুরেন্স। এ ছাড়া আহত যাত্রীরা চিকিৎসা ও সামাজিক নিরাপত্তা বাবদ প্রত্যেকে ৫২ হাজার ১৫০ ডলার করে ক্ষতিপূরণ পান। সেনা কল্যাণ ইনস্যুরেন্স জানায়, সেই বিমানটিতে থাকা আহত যাত্রীদের সর্বনিম্ন বীমার ক্ষতিপূরণ রাখা হয়েছিল ১৫ লাখ ডলার এবং সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ ৮০ হাজার ডলার।

প্রতিবছর মোটর, জাহাজ, বিমান, জাহাজ ও বিমানের দেহাবশেষ এবং এগুলোর যন্ত্রও বীমার আওতায় আনা হয়। ফলে ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। আবার জাহাজের মালামাল আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে ব্যক্তি কিংবা রপ্তানিকারকরা বীমার আওতায় আনে। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ আইডিআরএর তথ্য মতে, গত তিন বছরের মধ্যে ২০১৯ সালে প্রিমিয়াম আয় বেড়েছে। তবে করোনার কারণে ২০২০ সালে প্রিমিয়াম আয় কম হলেও তা ছিল ২০১৮ সালের চেয়ে বেশি।

আইডিআরএর সূত্র মতে, সাধারণ বীমায় প্রিমিয়াম আয় বেড়েছে। তবে করোনার কারণে ২০২০ সালে প্রিমিয়াম আয় কম হলেও ২০১৯ সালে প্রবৃদ্ধি ছিল ধনাত্মক। ২০১৮ সালে চার হাজার ১৮৬ কোটি ৪২ লাখ টাকার প্রিমিয়াম আয় হয়। ২০১৯ সালে প্রিমিয়াম বেড়ে দাঁড়ায় চার হাজার ৭১৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আইডিআরএর এক সূত্র জানায়, ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা স্থবির হয়ে যায়। ফলে ২০২০ সালে প্রিমিয়াম আয় হয় চার হাজার ৪০২ কোটি ছয় লাখ টাকা। তবে সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হচ্ছে ২০২০ সালে করোনার প্রভাবে প্রিমিয়াম আয় কমলেও তা ২০১৮ সালের তুলনায় বেশি ছিল। আবার ফায়ার ইনস্যুরেন্সে ২০২০ সালে প্রিমিয়াম আয় হয় ২০১৮ সালের থেকে বেশি। ২০১৮ সালে ফায়ার ইনস্যুরেন্সের আয় এক হাজার ৭০৫ কোটি পাঁচ লাখ টাকা, ২০১৯ সালে বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৯৯৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং ২০২০ সালে প্রিমিয়াম আয় হয় এক হাজার ৭৩৯ কোটি ৯ লাখ টাকা।

আবার মেরিন (কার্গো) প্রিমিয়াম আয় ২০১৮ সালের এক হাজার ১৮২ কোটি ২০ লাখ টাকা, যা ২০১৯ সালে বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৩২৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা এবং ২০২০ সালে কমে দাঁড়ায় এক হাজার ২৫০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

মেরিন (হাল) প্রিমিয়াম আয় ৭৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ছিল ২০১৮ সালে, ২০১৯ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১১০ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং ২০২০ সালে ১৫০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। মোটর বীমায় তৃতীয় পক্ষের বা থার্ড পার্টি ইনস্যুরেন্স বাতিল করা হয়েছে। ২০১৮ সালে মোটর ইনস্যুরেন্সে প্রিমিয়াম আয় হয় ৩৭৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, ২০১৯ সালে ৩৯৮ কোটি ১২ লাখ এবং ২০২০ সালে ৩৮৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

করোনা মহামারির মধ্যেও সেনা কল্যাণ ইনস্যুরেন্স কম্পানির প্রিমিয়াম আয় বেড়েছে। কম্পানিটির ২০১৯ সালে ফায়ার ইনস্যুরেন্সে প্রিমিয়াম আয় ১১ কোটি ৬৩ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। সেখানে করোনার মধ্যেও ২০২০ সালে প্রিমিয়াম আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৫২ লাখা ৬৯ হাজার টাকা। এ ছাড়া মেরিন ইনস্যুরেন্সও বেড়েছে। তবে থার্ড পার্টি ইনস্যুরেন্স বাতিল করে দেওয়ায় অন্যান্য কম্পানির মতো মোটর ইনস্যুরেন্সে প্রিমিয়াম আয় কম হয়েছে।

সেনা কল্যাণ ইনস্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শফিক শামীম (অব.) বলেন, ‘বেশ কিছু সংস্কার হয়েছে এই খাতে। এজেন্টদের ভুয়া কমিশন দেওয়া থেকে শুরু করে নানা রকমের অনিয়মের সমস্যা দূর করা হচ্ছে। গত পাঁচ বছরে ধাপে ধাপে কিছু নিয়ম ও সার্কুলার দিয়ে এ সমস্যা সমাধান করা হয়েছে। থার্ড পার্টি বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য মোটর ইনস্যুরেন্সে প্রিমিয়াম ব্যবসা কমেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘বীমাও ব্যাংকের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ফলে বীমা নিয়ে যে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়েছিল, তা আস্তে আস্তে দূর হবে।’

আইডিআরএর এক সূত্র জানায়, ফায়ার ইনস্যুরেন্স ও মেরিন ইনস্যুরেন্স ছাড়া আর অন্য যে ইনস্যুরেন্সগুলো রয়েছে সেগুলো মিসসেলেনিয়াস ইনস্যুরেন্সের মধ্যে কাভারেজ থাকবে। এ ছাড়া বর্তমানে ৫০ লাখ মোটরযান রয়েছে। এগুলোর থার্ড পার্টি ইনস্যুরেন্স ছিল। প্রায় ৪৫০ কোটি টাকার প্রিমিয়াম আয় হয়েছে। নতুন গাড়ি ও ব্যাংক লোনের মাধ্যমে যে গাড়িগুলো কেনা হচ্ছে সেগুলোকে কম্প্রেহেন্সিভ বীমার আওতায় আনা হয়েছে। এ ছাড়া বাকি গাড়িগুলো বীমার আওতায় আনা হয়নি।