আয় বাড়লেও মুনাফা কমেছে ওয়ালটন হাই-টেকের

চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইলেকট্রনিক ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স উৎপাদক ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির আয় বাড়লেও কর-পরবর্তী নিট মুনাফা কমে গেছে। মূলত বৈশ্বিক বাজারে কাঁচামালের দাম বাড়ার পাশাপাশি জাহাজীকরণ বাবদ ব্যয় বেড়ে যাওয়ার বিপরীতে পণ্যের দাম না বাড়ানোর কারণে কোম্পানিটির মুনাফা কমে গেছে। অবশ্য এ বছরের শুরু থেকে পণ্যের দাম বাড়ানোর মাধ্যমে বাড়তি ব্যয় সমন্বয় করা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানিটির কর্মকর্তারা।

গতকাল অনুষ্ঠিত সভায় চলতি ২০২১-২২ হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করেছে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের পর্ষদ। প্রতিবেদন অনুসারে চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে কোম্পানিটির আয় হয়েছে ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। যেখানে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে আয় ছিল ২ হাজার ৬৬৪ টাকা। এ সময়ের ব্যবধানে কোম্পানিটির আয় বেড়েছে ১৮ শতাংশ। এদিকে চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে কোম্পানিটির পণ্য উৎপাদনে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। যেখানে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে এ খাতে ব্যয় হয়েছিল ১ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে এ খাতে ব্যয় বেড়েছে ৩৮ শতাংশ। আর এ ব্যয় বাড়ার প্রভাবে চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩১ শতাংশ কমে ৪৪৬ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। যেখানে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে মুনাফা ছিল ৬৪৬ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১৪ টাকা ৭৩ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২১ টাকা ৪৮ পয়সায়।

এদিকে চলতি হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের আয় হয়েছে ১ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। যেখানে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে আয় ছিল ১ হাজার ৯২ কোটি টাকা। চলতি হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ১৬৫ কোটি টাকা। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে নিট মুনাফা ছিল ২৪২ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৫ টাকা ৪৫, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৮ টাকা ৫ পয়সা। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষে পুনর্মূল্যায়নসহ কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩০৯ টাকা ২৪ পয়সা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের কোম্পানি সচিব মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বাড়ার পাশাপাশি জাহাজীকরণ বাবদ ব্যয় বেড়ে গেছে। এর বিপরীতে আমরা পণ্যের দাম বাড়াইনি। এ কারণে আয় বাড়া সত্ত্বেও মুনাফা কমেছে। তবে এ বছরের জানুয়ারি থেকে বাড়তি ব্যয় সমন্বয়ের জন্য পণ্যের দাম বাড়িয়েছি। ফলে সামনের প্রান্তিকগুলোতে কোম্পানির আর্থিক পারফরম্যান্সে উন্নতি হবে আশা করছি।

৩০ জুন সমাপ্ত ২০২০-২১ হিসাব বছরে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের জন্য ১৭০ শতাংশ নগদ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ২৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৫৪ টাকা ২১ পয়সা। যেখানে আগের হিসাব বছরে ইপিএস ছিল ২৪ টাকা ২১ পয়সা। ৩০ জুন ২০২১ শেষে পুনর্মূল্যায়নসহ কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ৩১১ টাকা ৫৯ পয়সায়। আগের হিসাব বছর শেষে যা ছিল ২৬৪ টাকা ৪৮ পয়সায়। এর আগে ২০২০ হিসাব বছরের জন্য সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ২০০ শতাংশ নগদ এবং উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ৭৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি।

সর্বশেষ রেটিং অনুযায়ী, ওয়ালটনের ঋণমান দীর্ঘমেয়াদে ‘ট্রিপল এ’ ও স্বল্পমেয়াদে ‘এসটি-ওয়ান’। ২০১৭ থেকে ২০২১ হিসাব বছর পর্যন্ত নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন ও চলতি ২০২১-২২ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য হালনাগাদ তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রত্যয়ন করে ইমারজিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেড (ইসিআরএল)।

প্রকৌশল খাতের কোম্পানিটির পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু ২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৬০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৩০২ কোটি ৯২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ৯ হাজার ৪২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৩০ কোটি ২৯ লাখ ২৮ হাজার ৩৪৩। এর মধ্যে ৯৯ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ শেয়ারই রয়েছে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে দশমিক ৩৪ শতাংশ, বিদেশী দশমিক ১৩ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে দশমিক ৫০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার সর্বশেষ ১ হাজার ১৩২ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। গত এক বছরে শেয়ারটির সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দর ছিল যথাক্রমে ১ হাজার ৮ টাকা ও ১ হাজার ৫২৪ টাকা।

সর্বশেষ নিরীক্ষিত ইপিএস ও বাজারদরের ভিত্তিতে এ শেয়ারের মূল্য-আয় (পিই) অনুপাত ২০ দশমিক ৮৯, হালনাগাদ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে যা ৩০ দশমিক ৫১।