বেইলি রোডের আগুন
‘আমার বুক চিড়ে দেখেন, বৃষ্টি আমারই মেয়ে’

রাজধানীর বেইলি রোডে ভবনে আগুনে পুড়ে নিহত সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রির পরিচয় নিয়ে জটিলতা যেন কাটছেই না। তবে তিনিই যে কুষ্টিয়ার বৃষ্টি খাতুন তা নিয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। অনুসন্ধানে মিলেছে এমনই তথ্য।

দুপুরে নিজ বাড়ি অর্থাৎ কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বেতবাড়িয়া ইউনিয়নের বনগ্রাম পশ্চিমপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায় সেখানে চলছে শোকের মাতম। বিলাপ করছেন মা বিউটি পারভীন। আর পাশে অঝরে কাঁদছে ছোট দুই বোন ঝর্ণা আর বর্ষা। নিকটাত্মীয় পাড়া প্রতিবেশীরা তাদেরকে সান্তনা দিচ্ছেন।

এমন পরিস্তিতিতে তাদের সঙ্গে কথা বলতেও সংকোচ বোধ হচ্ছিল। এরই মধ্যে সুযোগ বুঝে কথা হলো ঝর্ণার সঙ্গে। তার কাছে জানতে চাওয়া বৃষ্টির নাম পরিচয় নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে বিষয়টি আসলে কী? অশ্রুসিক্ত কন্ঠে তার জবাব। বৃষ্টি আমাদের আদরের বড় বোন। এর চেয়ে বড় পরিচয় আর কিইবা হতে পারে। তবে প্রমাণ হিসেবে অনেক কিছুই উপস্থাপন করলেন তিনি। এসএসসি’র রেজিষ্ট্রেশন কার্ড, এনআইডি’র ফটোকপি, ইন্টার মিডিয়েট পরীক্ষার সনদ। সব কিছুতেই বৃষ্টি খাতুনের নাম রয়েছে। বাবার নাম সবুজ শেখ। এরই মধ্যে ছোট বোন বর্ষা খাতুনও আসেন। বড় বোন বৃষ্টির সঙ্গে তার নানা স্মৃতিময় তথ্য বলতে থাকেন। গোটা পাড়াই যেন শোকাচ্ছন আবহ। গণমাধ্যমকর্মীদের দেখে অনেকেই এগিয়ে আসেন। বৃষ্টির পরিচয় নিয়ে যা হচ্ছে তা ঠিক নয় দাবি তাদের।

এরই মধ্যে কথা বলার সুযোগ হয় বৃষ্টির মা (অভিশ্রুতি শাস্ত্রি)র সঙ্গে। কথা বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। কিছু বলার আগেই তিনি বলেন, বৃষ্টি আমার মেয়ে। সে অন্য কারো মেয়ে হতে পারে না। আমার বুক চিড়ে প্রয়োজনে পরীক্ষা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একজন মা। আমি তার কাছে আমার মেয়েকে ফেরত চাওয়ার আকুতি জানাচ্ছি। দয়া করে যেন আমার মেয়েকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন। এভাবেই বেশ কিছু সময় বিলাপ করতে থাকেন তিনি।

প্রতিবেশীদেরও একই কথা, রাজধানীয় ঢাকায় আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া সাংবাদিক আমাদের এলাকার সন্তান। বৃষ্টি প্রাথমকি শিক্ষা নিয়েছিলেন বনগ্রাম ব্র্যাক স্কুলে। ছয় বছর বয়সে তিনি ব্র্যাক স্কুলে ভর্তি হন। ২০০৯ সালে সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এমনটিই জানান শিক্ষক মিলিয়া পারভীন। জন্মের পর থেকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছেন চাচি শাহিদা পারভীন। তার কথা বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। জানান বৃষ্টি অধিকাংশ সময় তার কাছে থাকত।

কথা হয় বেদবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। একই সাথে তিনি বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকও। তিনি জানান, রাজধানী ঢাকায় বেইলি রোডে একটি ভবনে যে আগুনের ঘটনা ঘটেছে সেখানে মারা গেছেন আমাদের মেয়ে বৃষ্টি। গণমাধ্যমে তার নাম শোনা যাচ্ছে অভিশ্রুতি শাস্ত্রি। তার বাড়ি বনগ্রাম পশ্চিম পাড়ায়। বাবার নাম সবুজ শেখ। মা বিউটি বেগম। জন্ম নিবন্ধনও তার পরিষদ থেকেই নেয়া। এনআইডিও একই নামে।

এনআইডি’র তথ্যমতে, বৃষ্টির পুরো নাম বৃষ্টি খাতুন। জন্ম ১৯৯৮ সালের ৯মার্চ। বাবার নাম সবুজ শেখ এবং মাতার নাম বিউটি বেগম। জাতীয় পরিচয়পত্র নং-৫১০৪৯৮০৬৮৪, ভোটার নাম্বার-৫০১১৮৫০০০১৬৬, ভোটার এরিয়া কোর্ড ৫০১১৮৫, সিরিয়ার নাম্বার-৩৬৪, ভোটার এলাকা- বনগ্রাম পশ্চিমপাড়া। এনআইডিতে লিঙ্গ পরিচয় অবিবাহিত, ধর্ম-
ইসলাম, রক্তের গ্রুপ-(ও+), জন্মস্থান কুষ্টিয়া।

চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম আরও জানান, মাস তিনেক আগেও বৃষ্টির সঙ্গে ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় তার দেখা হয়। আমি তার সাথে ছবিও তুলি। যে ছবি আমার কাছে রয়েছে।

বেতবাড়িয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড মেম্বর আব্দুল মজিদ জানান, বৃষ্টি আমাদের ওয়ার্ডেরই বাসিন্দা। একই গ্রামে বাড়ি। তিনি যে আমাদের এলাকার বাসিন্দা তাতে কোন সন্দেহ নেই। তারা সবাই মুসলিম পরিবারেই তার জন্ম।