আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের বিজয়ের ঠিক আগ মুহূর্তে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তার দোসর রাজাকার, আলবদর, আল-শামসের সদস্যরা পরিকল্পনা করে হত্যা করে এ মাটির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। ন্যক্কারজনক এ ঘটনার দুদিন পর ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি বাহিনী। যার মাধ্যমে জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ। মূলত পরাজয় আসন্ন জেনে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে সেদিন বুদ্ধিজীবী নিধনের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।
বরাবরের মতো এবারো বিজয় উৎসবের আগে এ দিনটিতে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা ও বেদনার সঙ্গে স্মরণ করে বাংলাদেশের মানুষ। দিবসটি উপলক্ষে আলাদা বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ২০২১ পালনের লক্ষ্যে জাতীয় কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। দিনের শুরুতেই সকাল ৭টা ৫ মিনিটে মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হবে। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য, যুদ্ধাহত ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন। সকাল সাড়ে ৮টায় তারা শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য যাবেন রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে। সকাল সাড়ে ৮টা থেকেই সর্বস্তরের মানুষ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন।
দেশের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দিবসটি স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল দিবসটির তাত্পর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। পাশাপাশি পত্রিকা ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমগুলোও দিবসের কর্মসূচি ও তাত্পর্য গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করবে।
বুদ্ধিজীবী দিবস পালনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আলাদা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন। এ সময় অর্ধনমিত রাখা হবে জাতীয় ও দলীয় পতাকা। সকাল ৮টায় দলের পক্ষ থেকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দেয়া হবে। এরপর সকাল সাড়ে ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ও সকাল ৯টায় রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা জানানো হবে দলের পক্ষ থেকে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কর্মসূচি গ্রহণ করতে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মী, সমর্থক, সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি এসব কর্মসূচিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে চলতেও সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এ উপলক্ষে এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, বুদ্ধিজীবীরা দেশ ও জাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির রূপকার। তাদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা, সৃজনশীল কর্মকাণ্ড, উদার-গণতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনা জাতীয় অগ্রগতির সহায়ক। জাতির বিবেক হিসেবে খ্যাত বুদ্ধিজীবীরা তাদের ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরি, যুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারকে পরামর্শ দেয়াসহ বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিতে সহায়তা করেন। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর দেশের খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ড ছিল জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তাদের রেখে যাওয়া আদর্শ অনুসরণ করে অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়তে পারলেই তাদের আত্মত্যাগ সার্থক হবে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে দেয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাদের আত্মত্যাগ জাতি চিরদিন গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। আমি দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একাত্তরের ঘাতক, মানবতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-মৌলবাদী চক্রের রাষ্ট্র ও গণতন্ত্রবিরোধী সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে দেশের উন্নয়ন এবং অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।