নতুন করপোরেট নাম নিয়েছে ফেসবুক ও ফেসবুক মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো। মেটা নামের আওতায় এসেছে হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার ও ফেসবুক। একই সঙ্গে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রকল্পগুলো থাকছে এ প্যারেন্ট কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে। খবর সিএনবিসি।
মেটার যাত্রা ও গুগলের অ্যালফাবেটের সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে মিল রয়েছে। আবার চ্যালেঞ্জের সঙ্গেও রয়েছে প্রচুর মিল। অ্যালফাবেটের ব্যর্থতা থেকে মেটা কতটুকু শিক্ষা নিতে পারে তা এখন দেখার বিষয়। প্রথাগত সোস্যাল প্লাটফর্ম ও মেসেজিং অ্যাপ ছাড়িয়ে ভার্চুয়াল দুনিয়ায় পার্সোনাল কম্পিউটিং থেকে শুরু করে স্মার্ট গ্লাস নির্মাণে ঝুঁকছে মার্ক জাকারবার্গ প্রতিষ্ঠিত প্রযুক্তি জায়ান্টটি।
নতুন করপোরেট নামে যাত্রা শুরু ৯০ হাজার কোটি ডলার বাজার মূল্যের কোম্পানিটির জন্য একটি ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ। ফেসবুকের ডিজিটাল বিজ্ঞাপন ব্যবসা অব্যাহত সম্প্রসারিত হচ্ছে। এখন নতুন সাই-ফাই কনসেপ্ট মেটাভার্স বাস্তবে রূপ দিতে শতকোটি ডলার বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে ফেসবুক।
ফেসবুক গ্রুপের মেটাতে রূপান্তরের মাধ্যমে ২০১৫ সালে গুগলের অ্যালফাবেটে রূপান্তরের মিল রয়েছে। ওই সময় বিভিন্ন ভবিষ্যত্মুখী প্রকল্পে বড় অংকের বিনিয়োগ শুরু করে অ্যালফাবেট। অ্যালফাবেটের আদার বেটস নামে ওই প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে স্বচালিত গাড়ি ও জীবন প্রলম্বিত করার মতো বিভিন্ন প্রকল্প।
অ্যালফাবেটের গত ছয় বছরের যাত্রা থেকে হয়তো ফেসবুক কিছু অভিজ্ঞতা নিতে পারে। তবে এতে মেটার সামনে যে সুবিধা হচ্ছে, তাকে অ্যালফাবেটের ভুলগুলো করতে হচ্ছে না।
এটা স্পষ্ট মেটা হয়তো দুটো কৌশল অনুসরণ করবে।
ল্যারি পেজের মতো হারিয়ে যাচ্ছেন না জাকারবার্গ। যখন অ্যালফাবেটের যাত্রা শুরু হলো তখন তার সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সিইও ল্যারি পেজ গুগলের ব্যবসা সুন্দর পিচাইয়ের হাতে ছেড়ে দেন। এরপর সাধারণের দৃষ্টি থেকে দূরে চলে যান পেজ। তখন তিনি আসলে কী দায়িত্ব পালন করতেন এটা স্পষ্ট ছিল না। দেখা যেত দৈনন্দিন কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন সিইও সুন্দর পিচাই ও সিএফও রুথ পরাট। এক পর্যায়ে অ্যালফাবেটের সিইওর দায়িত্বও পিচাইয়ের হাতে পড়ে। গত বৃহস্পতিবার জাকারবার্গ এটা স্পষ্ট করে দেন, তিনি পেজের মতো পর্দার আড়ালে সরে যাচ্ছেন না। আগামী বছরগুলোতে মেটার নেতৃত্ব থাকছে তারই হাতে। যেহেতু প্যারেন্ট কোম্পানিটির নিয়ন্ত্রণ জাকারবার্গের হাতে সেহেতু ভবিষ্যৎ ব্যর্থতারও দায়ভার বহন করতে হবে তাকে।
উভয় কোম্পানিই সোনার ডিম পাড়া বিজ্ঞাপন ব্যবসার মুনাফা থেকে ভবিষ্যতের প্রযুক্তিতে খাটাচ্ছে। উদ্ভাবনী কোম্পানি দাবি করলেও গুগল ও ফেসবুকের প্রধান আয়ের উৎস হচ্ছে ডিজিটাল বিজ্ঞাপন। এ পর্যন্ত অ্যালফাবেটকে নতুন উদ্যোগে সফল হতে দেখা যায়নি। এমনকি অ্যালফাবেটের আদার বেটস হিসেবে স্বীকৃত কিছু উদ্যোগ নিজের করে নিয়েছে গুগল। এর মধ্যে রয়েছে স্মার্ট হোম ডিভিশন নেস্ট। বেশ কয়েকটি প্রজেক্ট বাতিল করা হয়েছে, যেমন প্রজেক্ট লুন। তৃতীয় প্রান্তিকে অ্যালফাবেটের আদার বেটস সেগমেন্ট লোকসান গুনেছে ১২৯ কোটি ডলার।
অ্যালফাবেটের ব্যর্থতার গল্প মেটার কর্তাব্যক্তিদের মনে ভয় ধরিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা বাস্তবে রূপ দিতে পরিকল্পনার চেয়েও যে অধিক সময় ও অর্থ বিনিয়োগ করতে হয় তা মাথায় রাখতে হবে।
মেটাভার্স নির্মাণে জাকারবার্গ কতটুকু বিনিয়োগ করতে পারবেন এমন প্রশ্নের জবাব আমরা স্বয়ং তার মুখ থেকেই শুনেছি। চলতি সপ্তাহে জাকারবার্গ জানান, মেটাভার্স নির্মাণে যথাযথ প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং আগামী বছর কর্মী নিয়োগের জন্য ১ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে যাচ্ছেন। কিন্তু মেটাভার্স সম্পূর্ণভাবে তৈরি এবং এর ফল পেতে যে দীর্ঘ সময় লাগবে এটাও মাথায় রাখতে হবে। সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্টটিতে বিনিয়োগকারীদের সামনে আতঙ্কের বিষয় হয় মেটাভার্স বাস্তবে রূপ পেতে হয়তো ১০ বছর লেগে যাবে—এমনটা জানিয়েছেন স্বয়ং জাকারবার্গ।