পর্যটকের ঢল, স্বাস্থ্যবিধিই বড় চ্যালেঞ্জ

নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে গোটা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের পর্যটন খাতও থমকে ছিল। সরকারি নানা বিধিনিষেধের কারণে বন্ধ ছিল ছোট-বড় সব পর্যটন কেন্দ্র। সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসার পর গত ১৯ আগস্ট দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেয় সরকার। দীর্ঘ বিরতির পর বেড়ানোর সুযোগ পেয়ে রীতিমতো ঢল নামে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্পট কক্সবাজারে। পর্যটকদের ভিড়ে সরগরম হয়ে ওঠে কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁসহ বিপণি কেন্দ্রগুলো। এমন পরিস্থিতিতে পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করা বা জনসমাগম হয় এমন স্থানে মাস্ক নিশ্চিত করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। তবে ভিড় সামলেও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

হোটেল মালিকদের সংগঠন ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকারি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর থেকে কক্সবাজারে প্রতিদিনই প্রচুর পর্যটক আসছেন। এর মধ্যে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পর্যটক সংখ্যা তুলনামূলক বেশি থাকে। তবে সংক্রমণ-সংক্রান্ত বিধিনিষেধের কারণে এখন একটি হোটেলে অতিরিক্ত পর্যটক থাকার সুযোগ নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেলের কেবল অর্ধেকসংখ্যক কক্ষ ভাড়া দেয়া হচ্ছে। বাকি কক্ষগুলো ফাঁকাই রাখা হচ্ছে। অনেক হোটেলের সামনে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পাঁচ তারকা হোটেল রয়েল টিউলিপ সি পার্ল বিচ রিসোর্টের কোম্পানি সেক্রেটারি আজহারুল মামুন বলেন, আমরা সবসময়ই হোটেলে আসা পর্যটকদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করেছি। অতিথিদের যেন কোনো রকম ভোগান্তি না হয়, সেটি নিশ্চিত করে আমরা স্বাস্থ্যবিধির বিষয়গুলোর দিকে খেয়াল রাখছি। হোটেলের প্রতিটি কক্ষ, লবি, লিফট, কমন স্পেসগুলো নিয়মিত স্যানিটাইজ করা হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী, অতিথিদের বেলা ২টায় চেকইন করার কথা থাকলেও আমরা বর্তমানে সে নিয়ম শিথিল করেছি। যখনই কোনো অতিথি আসছেন, কক্ষ খালি থাকা সাপেক্ষে তাকে চেকইনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যেন লবিতে একসঙ্গে বেশি অতিথির ভিড় এড়ানো যায়। হোটেলে বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁ রয়েছে। সে কারণে যারা গ্রুপে আসছেন, তাদের জন্য রেস্তোরাঁ নির্দিষ্ট করে দেয়া হচ্ছে। এতে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি অতিথিদের জন্য সহজ হচ্ছে।

এ কর্মকর্তা বলেন, কভিড টিকা নিয়েছেন এমন অতিথিদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে যারা টিকা নেননি তাদের জন্য আলাদা কক্ষ, রেস্টুরেন্ট এমনকি কমন স্পেসও ঠিক করে দেয়া হবে। শিগগিরই এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।

বর্তমানে কক্সবাজারে প্রতিদিন গড়ে ১০-১৫ হাজার পর্যটক আসেন। দেখা যায়, সমুদ্রসৈকতের লাবণী ও সুগন্ধা পয়েন্টে হাজারো পর্যটক সমুদ্রস্নান করছেন। কেউ কেউ সাগরপাড়ের চেয়ারগুলোতে বসে সময় কাটান। পর্যটকদের একটি অংশ ছবি তুলে স্মৃতি ধরে রাখায় ব্যস্ত। অনেক পর্যটকের মুখে মাস্ক দেখা গেলেও অনেকে আবার এ ব্যাপারে উদাসীন। তবে পর্যটকদের মুখে মাস্ক নিশ্চিত করতে কাজ করছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে মাইকিংও করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর্যটকদের সদিচ্ছা না থাকলে জোর করে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন করানো সম্ভব নয়। প্রশাসন সচেতনতা কার্যক্রম চালাচ্ছে, মাস্ক পরতে বলছে। কিন্তু নিজের স্বাস্থ্যের সুরক্ষার বিষয়টি প্রত্যেক পর্যটকের নিজেকেই দেখতে হবে।

পুরান ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক ইমরান বলেন, সংক্রমণের ভয়ে রীতিমতো বন্দি জীবন কাটাতে হয়েছে। এখন তিনি কিছুটা মুক্ত বাতাস নিতে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন। নিজে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চেষ্টা করছেন। যে হোটেলে উঠেছেন, সেখানেও এ বিষয়ে বেশ কড়াকড়ি দেখেছেন। কিন্তু সমুদ্রসৈকত, রাস্তা বা বিপণিবিতানগুলোতে সাধারণ পর্যটকদের মধ্যে মাস্ক পরার প্রবণতা কম।

কলাতলীর দ্য গ্র্যান্ড স্যান্ডি হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুর রহমান জানান, স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার পর কক্সবাজারে পর্যটকদের আগমন কিছুটা কমেছে। তবে পাঁচ তারকা ও তিন তারকাবিশিষ্ট প্রায় সব হোটেলের ভাড়া দেয়ার উপযোগী সব কক্ষেই অগ্রিম বুকিং দেয়া আছে। তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, হোটেলের কর্মীদের বিষয়টি তদারকির জন্য নির্দেশনা দেয়া আছে। কোনো অতিথিই মাস্ক ছাড়া হোটেলে প্রবেশ বা কমন স্পেসে অবস্থান করতে পারছেন না। এ বিষয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

কক্সবাজার হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম সিকদার বলেন, করোনায় লকডাউনের পর হোটেল ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মুখে কিছুটা হাসি ফুটেছে। সময়ের সঙ্গে সংক্রমণ কমে এলে পর্যটকদের আসার হার আরো বাড়বে বলে প্রত্যাশা। পর্যটকরা যেন নিরাপদে হোটেল-মোটেলগুলোতে অবস্থান করতে পারেন, সেজন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি ও পর্যটক হয়রানি রোধে সমিতির পক্ষ থেকে সবাইকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া আছে। কেউ অবহেলা করলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।